মাথাভাঙ্গা রক্ষায় বাস্তবমুখী পদক্ষেপ প্রয়োজন

 

মাথাভাঙ্গার উৎসমুখে পলি পড়ে সৃষ্ট বাঁধ অপসারণ এখন আর আমাদের দেশের একক সিদ্ধান্তে সম্ভব নয়। প্রতিবেশী দেশ ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কেন না,  উৎসমুখটি সীমান্তের শূন্যরেখায়। পদ্মার পানির ন্যায্য হিস্যাই যখন মেলে না তখন মাথাভাঙ্গার উৎসমুখ খুলেও কি পানি পাওয়া যাবে? প্রশ্নটি সঙ্গত হলেও নদীটি রক্ষা করতে না পারলে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ও কুষ্টিয়ার বিশাল এলাকা যে মরুভূমিতে রূপান্তর হবে তা তো আর অস্বীকার করা যায় না।

বর্ষায় পদ্মার পানি মাথাভাঙ্গার ¯্রােত বাড়ালেও শুষ্ক মরসুম শুরু হওয়ার সাথে সাথে সে গতি মন্থর হয়ে পড়ে। নিজের কূলে ও বুকের ঝরনায় কোনো রকম নদীটিকে বাঁচিয়ে রেখেছে। আকা বাঁকা পথে নিজের কুলে বুকের ঝরনার উদগিরণের পানিতেই চলে মাথাভাঙ্গার ¯্রােত। এও এক বিরল দৃষ্টান্ত বটে। অবাক হলেও সত্য যে, ওই চলাটুকুও আটকে ধরে চিরতরে থামিয়ে দিচ্ছে কিছু মৎস্যশিকারি। ওরা নিজেদের স্বার্থে অন্ধ হয়ে গোপা এলাকার যে সর্বনাশ ডেকে আনছে, তা রুখবে কে? আইন। এই আইন চুয়াডাঙ্গায় যথাযথভাবে প্রয়োগে যে যথেষ্ট অভাব তা অস্বীকার করার জো নেই। গত পরশু দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় তুলে ধরা মাথাভাঙ্গা নদীর সংক্ষিপ্ত হালচিত্রে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কয়েক বছর আগে যাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে, সেই তারাই মুচলেকাসহ জরিমানা দিয়ে বাড়ি ফিরে ফের সেই একই আইন ভঙ্গ করে চলেছে। অথচ তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থায় নেয়া হচ্ছে না। ফলে সংক্রমিত হচ্ছে নদীর বুকে অন্যায়, অবৈধভাবে বাঁধ ও কোমর দিয়ে মাছ শিকারের সর্বনাশা কর্মকা-। বাঁধের কারণে নদীর স্বাভাবিক ¯্রােতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। পলি পড়ে ঝরনার মুখটাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে নদী হারিয়ে হাই হাই করা ছাড়া আর কিছুই যে করার থাকবে না তা আজই  উপলব্ধি করছেন কি?

মাথাভাঙ্গা বাঁচাতে হবে। প্রয়োজনে উৎসমুখ খুলতে দ্বিপাক্ষিক আলোচনাও করতে হবে। মাথাভাঙ্গার শেষাংশটা ভারতেই। পদ্মায় পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়েও আরো আন্তরিক হতে হবে। ভৈরব যখন পুনর্খনন করা হচ্ছে তখন মাথাভাঙ্গা কেন নয়? নদী মাতৃক দেশ। নদ-নদীর পানির ওপর শুধু খাল-বিলের পানিই নির্ভর করে না, ভূগর্ভের পানিস্তরও নির্ভরশীল। ভৈরব গেছে, গেছে চিত্রাসহ কুমার। মাথাভাঙ্গাও হারিয়ে গেলে পুরো এলাকাই যে মরুভূমিতে রূপান্তর হবে তা বলাই বাহুল্য।