গাংনী প্রতিনিধি : মেহেরপুর গাংনীতে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে সন্দিগ্ধ তিন চাঁদাবাজ নিহত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে মটমুড়া গ্রামের একতা ইটভাটার পাশে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র, গুলি ও বোমা উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশের ওপরে চাঁদাবাজদের আক্রমণের জবাব দিতে গিয়েই গুলিবিদ্ধ তিনজনের মৃত্যু হয়। এ তথ্য জানিয়ে গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন দাবি করেন, চাঁদাবাজদের প্রতিরোধ করতে গিয়ে থানা ও ডিবি পুলিশের দুজন কর্মকর্তাসহ ছয়জন সামান্য আহত হয়েছেন। এদিকে তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় ইটভাটাগুলোতে মিষ্টি বিতরণের খবর পাওয়া গেছে। গত কয়েক বছর ধরে চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ ছিলেন ইটভাটা মালিক ও শ্রমিকরা।
নিহতরা হলেন- গাংনী উপজেলার ষোলটাকা ইউনিয়নের ভোলাডাঙ্গা গ্রামের ফকির মহাম্মদের ছেলে তুহিন হোসেন (১৭), মানিকদিয়া গ্রামের চাঁদ আলীর ছেলে মহিবুল ইসলাম (২৪) ও আলতাফ হোসেনের ছেলে তাজমুল ইসলাম (২৭)। এর মধ্যে কি ওই ছদ্মনামের বিকাশ আছে? গুলির লড়াইয়ে তিন চাঁদাবাজের পতনের খবরে চুয়াডাঙ্গার ইটভাটা মালিকদের অনেকেই জানার চেষ্টা করেন।
মেহেরপুর পুলিশ সুপার আনিছুর রহমান জানান, চলতি ইট পোড়ানো মরসুমের শুরু থেকেই এলাকার বিভিন্ন ইটভাটায় চিরকুটে মোবাইল নম্বর থেকে ভাটাপ্রতি মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে অজ্ঞাত চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীরা। চিরকুট দেখে মনে হয় যেন হালখাতার দাওয়াত দেয়া হয়েছে। ইটভাটা মালিকদের কাছ থেকে মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে প্রযুক্তির উন্নত ব্যবহারে তাদের পরিচয় ও অবস্থান অনুসরণ করছিলো পুলিশ। চাঁদাবাজ প্রতিরোধে পুলিশ ছিলো তৎপর। এরই মাঝে গতকাল ভোরে পুরাতন মটমুড়া গ্রামে অবস্থিত একতা ইটভাটা মালিক খবির উদ্দীনের কাছে কয়েকদিন পুর্বে ধর্যকৃত চাঁদা আনতে যায় ২০-২৫ জনের একটি সশস্ত্র দল। বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে গাংনী থানা ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক দল তিন দিক থেকে ইটভাটা এলাকা ঘিরে ফেলে। প্রতিরোধের মুখে পড়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে কয়েকটি বোমা নিক্ষেপ করে ওই চাঁদাবাজরা। ফাঁকা স্থানে বোমার বিস্ফোরণ হওয়ায় বড় ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পায় পুলিশ। তবে আত্মরক্ষার্থে পুলিশ পাল্টা গুলি ছোড়ে। শুরু হয় বন্দুকযুদ্ধ। তিনদিক থেকে গুলি আক্রমণে কয়েকজন অজ্ঞাত চাঁদাবাজ পালিয়ে যায়। একপর্যায়ে ঘটনাস্থল থেকে তিনজনের গুলিবিদ্ধ লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশ। লাশের পাশ থেকে একটি এলজি সার্টারগান, একটি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, একটি রামদা ও দুটি বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে এসএমজি ও শর্টগানের ৩৫ রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন গাংনী থানার ওসি। খবর পেয়ে মেহেরপুর পুলিশ সুপার আনিছুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এদিকে ভোরে বন্দুকযুদ্ধে তিনজনের মৃত্যুর খবর চারদিকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়লেও তাদের পরিচয় ছিলো অজ্ঞাত। ঘটনাস্থলে নিহতদের কোনো স্বজন উপস্থিত না হওয়ায় অজ্ঞাত হিসেবে মরদেহ তিনটি থানা চত্বরে নেয়া হয়। পরে বিভিন্ন সূত্র থেকে তাদের পরিচয় আসতে থাকে। মরদেহগুলোর ময়নাতদন্ত শেষে তা পরিবারের কাছে হস্তান্তর করলে রাতেই দাফন সম্পন্ন হয়। নিহত তিনজন এলাকার অন্যতম চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারী সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত জানিয়ে গাংনী থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান, এদের নামে থানায় এসব অপরাধের বিষয়ে মামলা রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনো শেষ নেই। ইটভাটাগুলোতে চিরকুট দিয়ে এই বাহিনীর সদস্যরা চাঁদা দাবি করেছে। এছাড়াও ওই এলাকায় সড়কে চাঁদাবাজি ও ছিনতাই এবং বোমা হামলার সাথে নিহত তিনজনসহ ওই এলাকার একটি চক্র জড়িত। যাদের অনেকেই গতকাল ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এদের আটকের চেষ্টা চলছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আমতৈল এলাকা থেকে শুরু করে এ উপজেলার পূর্ব-দক্ষিণ ও উত্তর-পুর্ব এলাকা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী মিরপুর ও আলমডাঙ্গা উপজেলার কিছু অংশ জুড়েই অন্ধকার জগতে এদের আধিপত্য রয়েছে। আমতৈল, মানিকদিয়া, ভোলাডাঙ্গা ও পার্শ্ববর্তী ঝুটিয়াডাঙ্গাসহ ওই এলাকার কয়েকটি গ্রামের অন্তত অর্ধশতাধিক চিহ্নিত ব্যক্তি এ গ্রুপের সদস্য। এদের মূলহোতা ও সেকেন্ড ইন কমান্ডসহ বেশ কয়েকজনকে ইতোমধ্যে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। দ্রুত তাদের আটক করা সম্ভব হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন ওসি। গতকালের ঘটনায় গাংনী থানায় তিনটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে, পুলিশের ওপর আক্রমণ ও সরকারি কাজে বাধদানের অপরাধে মামলাগুলো দায়ের করা হয়। পালিয়ে যাওয়া চাঁদাবাজ ও তাদের সহযোগীদের ওই মামলার আসামি হিসেবে গ্রেফতার করার প্রক্রিয়াও চলছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। এদিকে নিহত মহিবুলের স্ত্রী শুকজান খাতুন স্বামীকে নিরপরাধ দাবি করে বলেন, সোমবার বিকেলে মহাম্মদপুর গ্রামের বোনের বাড়ি টাকা আনতে যাওয়ার কথা বলে সে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলো। ওই টাকা দিয়ে একটি গরুর বাছুর কিনে লালন-পালনের কথাবার্তা চলছিলো। একই দাবি করে নিহত তাজমুলের স্ত্রী সাজেদা খাতুন জানান, মহেশপুর গ্রামের তার শাশুড়ি বসবাস করেন। দু দিন থেকে তিনি সেখানে অবস্থান করছিলেন। গতরাত দশটার দিকে তাজমুলের সাথে তার মোবাইলফোনে সর্বশেষ কথা হয়। গতকাল সকালে সেখানে তার যাওয়ার কথা ছিলো। পরে বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে তার মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পারেন।