বাঁশের কাবারি দিয়ে নির্মিত সেই ভবনের অবশিষ্ট নির্মাণ কাজ শুরু 

দর্শনা উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্র : সেই ঠিকাদার বদলে নতুন ঠিকাদার নিযুক্ত

 

দর্শনা অফিস: দর্শনা উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের যে অবকাঠামো নির্মাণে রডের বদলে বাঁশের কাবারি দেয়া হয়, সেই ভবনের অবশিষ্ঠ নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। নির্মানের দায়িত্বে পূর্বের নিযুক্ত ঠিকাদারকে বাদ দিয়ে নতুন করে ঠিকাদার নিযুক্ত করে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে এ কাজ শুরু হয়। পূর্বে নির্মিত ভবনের অংশে বাশের কাবারি রেখেই নাকি তা ভেঙে? এ প্রশ্নের জবাবে অবশ্য সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, পরীক্ষা করে দেখার পরই দোতলার অবশিষ্ঠ নির্মাণ কাজ শুরু করা হচ্ছে। ব্যায়ও বৃদ্ধি করা হয়েছে।  darsana-pic-2

দ্বিতল ভবনে নির্মাণ কাজে রডের পরিবর্তে বাঁশের কাবারি দিয়ে ঢালাইয়ের ঘটনা ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয় গোটা দেশে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলগুলোতে শিরোনামে পরিণত হয় বহুল আলোচিত এ দুর্নীতি। দফায় দফায় উচ্চ পর্যায়ের কমিটি কর্তৃক তদন্তে দুর্নীতির সত্যতা ধরা পড়ে। ৭ মে পর্যায়ে আলোচিত ঠিকাদার মনি সিংকে আটক করে র‌্যাব। বন্ধ করে দেয়া হয় নির্মাণ কাজ। ভবন এলাকা ঘিরে রাখা হয়। অবশেষে টানা ৮ মাস কাজ বন্ধ থাকার পর নতুন করে ওই কাজের টেন্ডার পায় ঢাকার ২ নং মিরপুরের মাসতুরা এন্টার প্রাইজ। পুনরায় ১ কোটি ৪০ লাখ টাকায় এ নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে। নির্মাণাধীন ভবনে নির্মাণকাজ উদ্বোধনী সভায় আলোচনা করেন, দর্শনা পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান, বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রকল্প পরিচালক (২ পাতার ৫ কলামে দেখুন) ড. মোহাম্মদ আলী, কনসালটেন্ড আহসানুল্লাহ, দর্শনা ইনচার্জ কামরুন্নাহার, দর্শনা টেকনিশিয়ান সেলিনুর রহমান, পরিদর্শক শামীম হাসান। অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, পৌর কাউন্সিলর মঈনুদ্দিন আহম্মেদ মন্টু, হাসান খালেকুজ্জামান, আম্বিয়া খাতুন ফুট্টরি, জাহানারা বেগম, সুরাতন নেছা প্রমুখ। কৃষিপণ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে কয়েক বছর ধরে জমি অধিকরণের প্রক্রিয়া শুরু করে। অবশেষে দর্শনা পৌরভবনের পেছনে ২৯ দশমিক ৫২ শতাংশ জমি অধিকরণ করা হয়। ওই জমিতে গত বছরের ১ ডিসেম্বরে বাংলাদেশ কৃষি অধিদফতরের ব্যবস্থাপনায় ফাইটো সেনেটারি শক্তিশালী উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থয়ানে বরাদ্দকৃত ২ কোটি ৪১ লাখ টাকা ব্যায়ে ২৭৫ স্কায়ার ফুট দ্বিতল ভবন নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ কৃষি সম্পসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক চুয়াডাঙ্গা জেলার কৃতি সন্তান হামিদুর রহমান ও চুয়াডাঙ্গা জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদুল ইসলাম আজাদ। সে থেকে শুরু হয় দ্বিতল ভবন নির্মাণ কাজ। এ ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে এলাকাবাসীর যেনো অভিযোগের শেষ ছিলো না। শুরু থেকেই স্থানীয়রা দুর্নীতি প্রতিরোধের চেষ্টা চালালেও বারবার ব্যর্থ হয়েছিলো। ব্যপক দুর্নীতির চিন্তা-ভাবনা মাথায় নিয়েই ভবন নির্মাণের আগে নির্মাণ করা হয় সীমানা প্রাচির। দিনের আলোর থেকে রাতের আধারেই নির্মাণ কাজে বেশি সাচ্ছন্দবোধ করতো ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা। যে কারণে বেশিরভাগ সময় রাতের আধারেই নির্মাণ কাজ করা হতো। প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যায়ে এ ভবন নির্মানণ কাজের দায়িত্ব পেয়েছিলো ঢাকার ফার্মগেটের জয় কনস্ট্রাকশন ইন্টার ন্যাশনাল। এ কাজে বিভাগীয় প্রকৌশলীর দায়িত্বে ছিলেন, রবিউল ইসলাম ও সহকারী প্রকৌশলী সুব্রত বিশ্বাস। ইট, বালি, খোয়া, রড, রাভিস ও নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে ভবন নির্মাণ কাজ করা হয়েছে বলেই এলাকাবাসী অভিযোগ তোলে। সরকারের এ ধরণের একটি ভবন নির্মাণ কাজের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার সাইনবোর্ড টাঙানো ছাড়াই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে খেয়ালখুশিমতো নির্বিঘ্নে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলো। যে কারণে তিমিরেই থেকে যায় নির্মাণ কাজের বরাদ্দ ও সচ্চতা। অবশেষে এপ্রিলের শুরুর দিকে নির্মাণ শ্রমিকদের অগোচরে স্থানীয়রা লুকিয়ে ভবনে প্রবেশ করে খানেকটা চমকে ওঠে। দ্বিতল ভবনের পিলারগুলোতে রডের বদলে দেয়া হয়েছে বাঁশের কাবারি। প্রাচীর গুলো নির্মাণ করা হয়েছে বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহিত পুরাতন ইট দিয়ে। ঢালায় কাজে ইটের খোয়ার পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে সুরকি ও রাভিশ। এ কথা মূহুর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে ভবনে ভীড় জমে যায় উৎসুক জনতা। পরিবেশ পরিস্থিতি বেসামাল টের পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে কৌশলে পালিয়ে যায় নির্মাণ কাজ দেখভালের দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম, সুব্রত বিশ্বাস ও ম্যানেজার জেমস কসট্রাসহ নির্মাণ শ্রমিকরা। রাগে ক্ষোভে ফুসে উঠে এলাকাবাসী। পরদিন সকাল হওয়ার সাথে সাথেই ঘটনাস্থলে পৌঁছান, ততকালীন দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফরিদুর রহমান, চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি অফিসার নির্মল কুমার দে, দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিসার সুফি মো. রোকুনুজ্জামান, দর্শনা উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের ইনচার্জ কামরুন নাহার। কর্তকর্তারা ভবনের বিভিন্ন পিলার ও প্রচীর ভেঙে অভিযোগের সত্যতা পান। কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে পৌঁছুনের আগেই রাতের আধারে বাশের কাবারি ও নিম্নমানের সামগ্রী সরিয়ে ফেলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের লোকজন। যে কারণে ওই দিনই নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে বাংলাদেশ কৃষি অধিদফতরের মহাপরিচালক চুয়াডাঙ্গা জেলার কৃতি সন্তান হামিদুর রহমান গ্রহণ করেছেন তড়িত ব্যবস্থা। একের পর এক সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরির্দশন করেন। গোটা দেশে ব্যাপক আলোচিত ঘটনায় রুপ নেয় ভবন নির্মাণের ঘটনাটি। অবশেষে প্রায় ৮ মাস পর নতুন করে টেন্ডারের মধ্যদিয়ে আলোচিত এ ভবনের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করণের উদ্বোধন করা হলো।