বহু প্রতিকূলতা পেরিয়ে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেও শ্রাবণীর চোখে অন্ধকার

 

আলী আহাদ: প্রবল ইচ্ছে শক্তিই পারে দারিদ্র্যের কষাঘাতসহ সকল প্রতিকূলতা পার করতে। আলমডাঙ্গার কয়রাডাঙ্গা গ্রামের মসজিদপাড়ার শ্রাবণী খাতুন তারই এক অনন্য উদাহরণ হয়েও গুনছে অনিশ্চয়তার প্রহর। কেননা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেও অর্থাভাবে ভর্তি হতে পারবে কি-না তা এখনও সে জানে না।

চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার চিৎলা ইউনিয়নের কয়রাডাঙ্গা মসজিদপাড়ার আশাবুল হক আশান ছিলেন বর্গাচাষি। দু মেয়ে এক ছেলে নিয়ে মোট ৫ জনের সংসার হলেও ওতে চলে না। ফলে গরুর ব্যাপারীদের সাথে ঘোরেন, রাখাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দু মেয়ের মধ্যে শ্রাবণী খাতুন ছোট। বড় মেয়ে বিয়ের পর নতুন সংসার শুরু করে। শ্রাবণীর স্বপ্ন বড় কিছু হতেই হবে। একদিন প্রশাসনিক বড় কর্মকর্তা হবোই হব। দেশের জন্য নিজেকে নিবেদিত করার মাধ্যমে নিজ এলাকার মুখ উজ্জ্বল করার স্বপ্ন তথা লক্ষ্য নিয়ে দৃঢ়তার সাথে এগিয়েও যাচ্ছে সে। সাফল্যের সোপান খুব কাছে। হবেই তো। প্রাথমিকে বৃত্তি, মাধ্যমিকেও। মানবিকে এসএসসি পরীক্ষায় এপ্লাস। এইচএসসিতেও এ প্লাসের খুব কাছে। এ বছর চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পারীক্ষা অংশ নিয়ে ভালো ফলাফল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ স্বনামধন্য দেশের শীর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে প্রায় সবগুলোতেই কৃতীত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। লক্ষ্য যেহেতু প্রশাসনিক কর্মকর্তা সেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ে ভর্তির লক্ষ্য স্থির করে এখন পড়েছে চরম অনিশ্চতার মধ্যে। ভর্তির অর্থই শুধু নয়, ঢাকায় লেখাপড়া করার খরচ কে জোগাবে? যে পিতার দিন আনা দিন খাওয়া সংসার, বাড়ির তিন কাঠা জমিই যার সম্বল তিনি কোথায় পাবেন কন্যার পড়া খরচ?

গতকাল শ্রাবণী খাতুনের সাথে তাদের জীর্ণকুঠিরে কথা হয় অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যত নিয়ে। বাড়িতে বৈদ্যুতিক বাতি নেই। কেরোসিনের হেরিকেনই ভরসা। তাতেও মাঝে মাঝে তেল থাকে না। তাতে কী? ইচ্ছে ছিলো বলেই মেধা বিকাশের চেষ্টায় ব্রত হয়েছে। লেখাপড়ায় মনোনীবেশ করে সে একের পর এক পরীক্ষায় কৃতীত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। সামনের দিকে এগিয়ে যেতে এতোদিন অভাব তার তেমন বাধা না হলেও এখন সেটাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে কী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ হাত ছাড়া হবে? তেমন কেই কি নেই কেরোসিনের কূপে পড়া অসাধারণ মেধাবী শ্রাবণীর পাশে আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে পাশে দাঁড়াবে? শ্রাবণীর মাতা-পিতাসহ প্রতিবেশীদেরই শুধু নয়, বাড়ির পাশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষাকাদের প্রত্যাশা, শ্রাবণীর পাশে এসে দাড়াক সহৃদয় দানশীল ব্যক্তিরা।