ঝিনাইদহ কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের ব্যাপক সাফল্য

 

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহ কুষ্টিয়া মহাসড়কের পাশে ঝিনাইদহ শহর থেকে ৪ কি.মি. দূরে অবস্থিত পুরাতন ইটভাটা নামে পরিচিত ঘাস জংগলে পরিপূর্ণ খানা-খন্দের মাঝে কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ঝিনাইদহ (এ.টি.আই)-টি প্রতিষ্ঠিত। ২০১৪ সালের শেষের দিকে একজন অধ্যক্ষ ও ৭ জন বিভিন্ন পর্যায়ের প্রশিক্ষক নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু। সে সময়ে প্রায় ১৫০ জন ছাত্র-ছার্থীদের নিয়ে এটিআইতে কর্মরত প্রশিক্ষকগণের সমন্বয়ে চাষযোগ্য ৪০/৫০ শতক জমিতে শীতকালীন সবজী চাষের মাধ্যমে শিখি করি খাই (শিক্ষা) নামক একটি কর্মসূচির মাধ্যমে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করলেও মাঝে কোনো এক অজানা কারণে এই কর্মসূচি বন্ধ হয়ে যায়। যা সংশ্লিষ্ট দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অসন্তষ্টির কারণ হয়ে দাড়ায়।

গত ২৮ অক্টোবর অত্র এটিআই’র প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের সমন্বয়ে আয়োজিত আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে জানা গেছে, গত ২৮ অক্টোবর পূর্ববর্তী অধ্যক্ষ হানিফ মোহাম্মদ সাহেব বদলী জনিত কারণে ঢাকায় যাওয়ার সময় প্রতিষ্ঠানটির মূখ্য প্রশিক্ষক মো. আব্দুল কাদের সাহেবের নিকট দায়িত্বভার অর্পণ করেন। বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল সাহেবের দক্ষ ও সুচিন্তিত নেতৃত্ব ও সমন্বয়ের ফলে এই প্রতিষ্ঠাটিতে মাত্র ৩ মাসের ব্যবধানে পুরোনো গৌরব পূনরুদ্ধারসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চলেছে।

পূর্ববর্তী ৪০/৫০ শতক পতিত জমিসহ এ মরসুমে আরও ৪/৫ একর আবর্জনা, ময়লা, ঝোপ জংগলে ঢাকা, ইট, বালি ও কংকৃটের পরিপূর্ণ অনুর্বর জমি পরিষ্কার করে বাইরে থেকে গোবর সার ক্রয় করে ওই সমস্ত  জমিতে প্রয়োগ করে ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে প্লট আকারে দায়িত্ব বন্টন করে আবাদী জমিতে পরিণত করেছেন। এ বিষয়ে তিনি বর্তমানে কর্মরত ৭/৮ জন বিভিন্ন পর্যায়ের প্রশিক্ষকদের মধ্যে টিম তৈরি করে দায়িত্ব প্লট বন্টন ও একেক সেক্টেরের ছাত্র- ছাত্রীদের জন্য একজন প্রশিক্ষকের নেতৃত্বে হাতে কলমে শিক্ষণের লক্ষ্যে কার্যকরী উদ্যোগ নেন।

এতে ছাত্র ছাত্রী ও প্রশিক্ষকদের মধ্যে সামাজিক স্যায়ে ব্যপক কর্মচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। একেক পর্বের ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষকগণের যোগ্য নেতৃত্ব ও সাহচর্যের ফলে প্রত্যেকে নিয়মিতভাবে প্রশিক্ষণ প্লটে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কাজ করা ও পরবর্তীতে ক্লাসে শিক্ষা গ্রহণ, ব্যবহারিক ক্লাস, সাংস্কৃতিক ক্লাস ও খেলাধুলায় আত্মনিয়োজিত থাকে। এযাবত ঝোপ-জংগলে পরিপূর্ণ শাপদ-সংকুল প্রেতপূরী খ্যাত এলাকা এখন শস্য শ্যামল নিরাপদ সবজী ভাণ্ডারে পরিণত হতে চলেছে। প্রধান ফটক থেকে চোখ পড়লেই মনে হয় সুনিপুন শিল্পীর তুলিতে আঁকা লাল সবুজের অপূর্ব সমাহার।

রাস্তার পাশে নানা প্রজাতির ফুল বাগান সৃজনের কাজ চলছে, ও উচু নিচু জমি চাষ দিয়ে সমান করার মাধ্যমে নতুন নতুন শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্লট বিভাজন কাজে অধিকাংশ প্রশিক্ষকদের ব্যস্ত সময় কাটাতে দেখা যায়। এরই মধ্যে গত ৪ অক্টোবর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মো. হামিদুর রহমান এবং প্রশিক্ষণ উইং-’র পরিচালক কৃষিবিদ মো. আব্দুল মজিদ  গত ৩১ অক্টোবর ইনস্টিটিউটে কর্মরত প্রশিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসাহ দিতে গেঞ্জি ও ক্যাপ বিতরণ করে কাজের ভূয়সী প্রসংসা করেছেন।

জৈবিক পদ্ধতিতে সবজী ও ফলমূল উৎপাদন ও ন্যায্যমূল্যে বিতরণ ব্যবস্থা এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎসাহ জুগিয়েছে। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে নামাজ পড়ার সুবিধার্থে একটি ছোট মসজিদ নির্মাণ, সকলের সুবিধার্থে ১টি ক্যান্টিন স্থাপন, সেচ বিহীন এলাকায় সেচ দেয়ার সুবিধার্থে সেচ যন্ত্র স্থাপন, নার্সারী স্থাপন, মসলা জাতীয় ও বিভিন্ন ফসলের প্রায়োগীক জ্ঞান লাভের সুবিধার্থে ক্রপ মিউজিয়াম স্থাপন, ধান চাষের প্রযুক্তি হাতে কলমে শেখানোর জন্য অসমতল ডোবা ও জংগল ময় জায়গা সমতল করণের কাজও এলাকায় আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। কেঁচো কম্পোস্ট ও আধুনিক কম্পোস্ট সার উৎপাদন প্রযুক্তিসহ মৌমাছির চাষ, মাশরুম উৎপাদন কার্যক্রমসহ আরও নানা প্রকারের আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি হাতে কলমে শেখানোর মাধ্যমে, উন্নত বাংলাদেশ নির্মাণে দক্ষ মানব সম্পদ তৈরির মহৎ উদ্যোগ আছে মর্মে সকল প্রশিক্ষকগণ অভিমত ব্যক্ত করেন।

এব্যাপারে কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ঝিনাইদহের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল কাদের বলেন, পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখিন হতে হচ্ছে এবং শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে প্রশিক্ষণসহ তাদের পাঠ দান করতে কষ্টসাধ্য হচ্ছে। এছাড়াও উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের উপযুক্ত প্রযুক্তিজ্ঞানে দক্ষ মানব সম্পদ তৈরির জন্য মাঠে নিজ হাতে উৎপাদন কার্যক্রমের জন্য উন্নত শিক্ষা পরিবেশ সহায়ক কর্মপরিবেশ ও শ্রদ্ধা মিশ্রিত আনগত্য পূর্ণ প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার্থী গড়ে তোলাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। এ জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগতির জন্য স্থাণীয় জন প্রতিনিধি, প্রশাসন, এলাকাবাসী ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের একান্ত সহযোগিতা প্রয়োজন।