প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামানায় চুয়াডাঙ্গাসহ সারাদেশে বাদ জুম্মা বিশেষ দোয়া

হাঙ্গেরিগামী প্লেনের জরুরি অবতরণে বিলম্ব নিয়ে প্রশ্ন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামানায় চুয়াডাঙ্গাসহ সারাদেশে বাদ জুম্মা বিশেষ দোয়া

মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ১৯ বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিলো। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বোয়িং উড়োজাহাজেও নাশকতার চেষ্টা হয় বলে একটি ধারণা রয়েছে। যদি এই ধারণা সত্য হয় তা হলে এ ঘটনা ২০তম হত্যার চেষ্টা হিসেবে পরিগণিত হবে। উড়োজাহাজে ত্রুটি ছিলো অথবা নাশকতার চেষ্টা হয়েছিলো এই দুটি বিষয়কে সামনে রেখে তদন্ত এগিয়ে চলছে। দুটি ঘটনায় নাশকতার আলামত পাওয়া যাচ্ছে। এর একটি হলো ইঞ্জিনের নাটবল্টু ঢিলা পাওয়া ও দ্বিতীয়টি হলো উড়োজাহাজের মনিটরে ইঞ্জিনে ফুয়েলের পরিমাণ ও চাপ কমে যাওয়ার সঙ্কেত পাওয়ার পরেও সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনটি বন্ধ না করা। ঘটনার প্রেক্ষিতে গতকালক্রবার বাদ জুম্মা সারা দেশে আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া করা হয়। চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগ এ কর্মসূচি পালন করে। আলুকদিয়াতেও দোয়ার আয়োজন করা হয় বলে জানাগেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটির জরুরি অবতরণ নিয়ে কারিগরি ও বাস্তব অবস্থা উভয় দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ফ্লাইটটি দিল্লি, করাচি ও কাবুল পার হওয়ার পর পাইলট জরুরি অবতরণের সিদ্ধান্ত নেন। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, এই বোয়িং উড়োজাহাজে ইঞ্জিনে অয়েলের পরিমাণ ও চাপ কমে যাওয়ার বিষয়টি ভারতের আকাশে থাকতেই মনিটরে ধরা পড়ে। কিন্তু পাইলট তা উপেক্ষা করে দিল্লি, করাচির পর আফগানিস্তানের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা পার হন। প্রায় তিন ঘণ্টা ওড়ার পর ইরানের কাস্পিয়ান সাগর এবং কৃষ্ণ সাগর সামনে রেখে তা বিপজ্জনক ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। পাইলট মাত্র দশ মিনিটের সিদ্ধান্তে তুর্কমেনিস্তানের রাজধানী আশগাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করেন। প্রশ্ন উঠেছে ভারতের আকাশসীমায় থাকতেই এই উড়োজাহাজের ইঞ্জিনে অয়েলের পরিমাণ ও চাপ কমার বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হওয়ার পরও কেন ঝুঁকি নেয়া হলো? আশগাবাদ বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করা সম্ভব না হলে সাগরপাড়ি দিতে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময় লাগতো। যা ছিলো চরম ঝুঁকিপূর্ণ। এ ছাড়া যুদ্ধবিধ্বস্ত ও সন্ত্রাস কবলিত আফগানিস্তানে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ফ্লাইটটি অবতরণ করার কোনো সুযোগ ছিলো না।

এদিকে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টগামী এই ভিভিআইপি ফ্লাইটের রুট পূর্বেই জানানো হয়েছিলো। তা সত্ত্বেও ফ্লাইটটির ঝুঁকিমুক্ত অবতরণ না করা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ ঘটনায় বিশ্বখ্যাত বোয়িং কোম্পানিও নড়েচড়ে বসেছে। বিমান কর্তৃপক্ষ বোয়িং কোম্পানিকে তাদের স্থানীয় এজেন্টের মাধ্যমে বিষয়টি অবহিত করেছে। উড়োজাহাজের যান্ত্রিক ত্রুটি ছাড়াও এটি নাশকতার পরিকল্পনা ছিলো কি-না সে বিষয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে অনেক আগে থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। উড়োজাহাজ যেখানে রক্ষণাবেক্ষণ কাজ করা হয় সেই নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ভেতরে অবস্থিত হ্যাঙ্গারে ইতিপূর্বে চোরাচালানকৃত সোনা ধরা পড়েছে। সেই অভিযোগ বিমানের সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে এই নাজুক অবস্থায় উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণের সময় নাশকতার কাজ করা হয়েছে কি না সেই প্রশ্ন উঠেছে।

গত ২৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে ঢাকা থেকে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টগামী বোয়িং-৭৭৭ ইআর ৩০০ উড়োজাহাজে পাইলট ছিলেন ক্যাপ্টেন এবিএম ইসমাইল ও ক্যাপ্টেন আমিনুল ইসলাম। তাদের উভয়ের ব্যাপারে নানা প্রশ্ন উঠেছে। আমিনুল ইসলাম ১৯৯৭ সালে বিমানের অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী এটিপি উড়োজাহাজের পাইলট ছিলেন। ওই বছর ২ জুন ৫০ জন যাত্রী ও ৫ জন ক্রু নিয়ে এটিপি ফ্লাইট ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাচ্ছিলো। সেই ফ্লাইটে ট্রেনিং ক্যাপ্টেনের দায়িত্বে ছিলেন আমিনুল ইসলাম। তার অদক্ষতার কারণে ফ্লাইটটি চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে অবতরণের পর রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে। তবে এ ঘটনায় উড়োজাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও যাত্রী ও ক্রুরা প্রাণে বেঁচে যান। ক্যাপ্টেন আমিনুল ইসলামের বাবা ৭১’ এ মুক্তিযুদ্ধকালে কুড়িগ্রামের শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। আর এক সহোদর এরশাদের জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। এসব কারণে তদন্তে নাশকতার বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনায় করে চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন মসজিদে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর পৌর এলাকার বড়বাজারের পুরাতনবাজার মসজিদে দোয়া অনুষ্ঠানে অংশ নেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খুস্তার জামিলসহ নেতৃবৃন্দ। জান্নাতুল মওলা কবরস্থান জামে মসজিদে দোয়া অনুষ্ঠানে অংশ নেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন ও যুগ্মসাধারণ সম্পাদক অ্যাড শামশুজ্জোহা। হাসপাতাল সড়কে বাতুন আমান জামে মসজিদে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান, পৌর আওয়ামী লীগের জহুরুল  ইসলাম জোয়ার্দ্দার, বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদত হোসেন, শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মুন্সি জাহাঙ্গীর আলম মান্নান, পৌর আওয়ামী লীগ নেতা মহসিন বিশ্বাস ও যুবলীগ নেতা শাসুজ্জোহা মল্লিক হাসু। এছাড়াও পৌর এলাকার বিভিন্ন মসজিদের দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

আলুকদিয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আলুকদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইসলাম উদ্দীনের সভাপতিত্বে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান ইসলাম উদ্দিন, সদস্য সহিদুল ইসলাম মামুন, শফিকুল ইসলাম শফি, জিয়াউল হক জিয়া, হাবলুর রহমান, আসরাফ আলী, শাহিন উদ্দীন, মনোয়ার হোসেন ও সেলিম উদ্দিন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার মঙ্গল কামনা ও সুস্থতার জন্য এবং দেশবাসীর জন্য দোয়া করা হয়। দোয়াটি পরিচালনা করেন মাও. মো. শফিকুল ইসলাম।