চুয়াডাঙ্গা লেবেল ক্রসিঙে যানবাহন আরোহীদের প্রতিদিন ১৩ দফা অসহনীয় দুর্ভোগ

মোমিনপুর ও মু্ন্সিগঞ্জ স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ায় বেড়েছে বিড়ম্বনা : পুঞ্জিভূত হচ্ছে ক্ষোভ

 

কামরুজ্জামান বেল্টু: ট্রেন স্টেশনে কখন আসে? লেবেল ক্রসিঙের গেটই বা পড়ে কখন? এসব ধাঁধাঁর এখন আর তেমন প্রচলন পরিলক্ষিত না হলেও স্টেশনে ট্রেন আসা-যাওয়া যেমন অব্যাহত, তেমনই লেবেল ক্রসিঙেও গেট ওঠানো-নামানোর রয়েছে বাধ্যবাধকতা। লেবেল ক্রসিঙে গেট নামানো ওঠনো করা হয় সড়কের পথচারীসহ সকল প্রকারের যানবাহনের স্বার্থে। চুয়াডাঙ্গা শহীদ আবুল কাশেম সড়কের লেবেল ক্রসিং দুর্ঘটনা রোধের মূল স্বার্থ সংরক্ষণ করলেও কালক্রমে বড্ড বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রতিদিনই দীর্ঘসময় ধরে লেবেল ক্রসিঙে দুর্ভোগের শিকার হন বহু যানবাহন-পথচারী। দুর্ভোগের শিকার জনসাধারণের অভিযোগ- কোনো ট্রেন আসার আধাঘণ্টা আগে, কোনো ট্রেন আসার ২০ মিনিট আগে গেট ফেলা হয়। ফলে এই দীর্ঘসময় থেমে থাকতে চালকদের কারো কারো শুধু ধৈর্য্যচ্যুতিই ঘটে না, দীর্ঘসময়ে সৃষ্ট যানজটের কারণে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দেয়। দীর্ঘদিন ধরে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের প্রধান সড়কের লেবেল ক্রসিংটির ওপর ফ্লাইওভার নির্মাণের দাবি উঠলেও তা বাস্তবায়নের তেমন উদ্যোগ নেই যেমন, তেমনই ট্রেন আসার অল্প সময় আগে গেট নামানোর দাবিও উপেক্ষিত। কেন?

স্টেশন মাস্টারের সঙ্কেত পেয়ে সঙ্কেত ঘরের অর্থাৎ সিগন্যাল ম্যান লাইনের ধারের সিগন্যাল নামালেই স্টেশনে ট্রেন আসতে পারে। আর লেবেল ক্রসিঙের গেটও নামানো হয় ওই সিগন্যাল দেখে। সঙ্গত প্রশ্ন- স্টেশন মাস্টার কখন সিগন্যাল দিতে বলেন? পূর্ববর্তী সচল স্টেশন মাস্টারের নিকট থেকে ট্রেন ছাড়ার খবর পাওয়ার সাথে সাথে। চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের প্রধান সড়কের লেবেল ক্রসিঙে নিম্নমুখি অর্থাৎ দর্শনা বা খুলনাগামী ট্রেন আসার দীর্ঘসময় পূর্বে গেট নামানোর মূল কারণ হলো, আলমডাঙ্গা স্টেশন থেকে ট্রেন চুয়াডাঙ্গার উদ্দেশে ছাড়লেই সিগন্যাল পড়ে। নামিয়ে দেয়া হয় লেবেল ক্রসিঙের গেট। আলমডাঙ্গা থেকে চুয়াডাঙ্গা স্টেশনে দূরপাল্লার ট্রেন পৌঁছুতে সময় নেয় ২০ মিনিট। আর লোকাল ও মালবাহী ট্রেন চুয়াডাঙ্গা স্টেশনে পৌছুতে সময় নেয় পঁয়ত্রিশ মিনিট। দীর্ঘ আধাঘণ্টা লেবেল ক্রসিঙে থেমে থাকার কারণে পুঞ্জিভূত হয় ক্ষোভ। মাঝে মাঝে উত্তেজনাও দানা বাঁধে। এ উত্তেজনা রাত-দিনই লেগে থাকে। দক্ষিণ-পশ্চিম জোনের চুয়াডাঙ্গা স্টেশনের ওপর দিয়ে প্রতিদিন ১৩টি ট্রেন আসা-যাওয়া করে। ফলে লেবেল ক্রসিং মোট ২৬ বার অতিক্রম করলেও ১৩ দফা সড়কের পথচারীসহ নানা প্রকার যানবাহন আটকে থাকে দীর্ঘসময়। বিশেষ করে দিনের বেলায় লেবেল ক্রসিঙে যানবাহনের লম্বা লাইন রেলবাজার ছাড়িয়ে যায়। অপরপ্রান্তেও লাইনটি পুরাতন ঝিনাইদহ বাসস্ট্যান্ড ছুঁয়ে যায়।

চুয়াডাঙ্গা লেবেল ক্রসিঙে দীর্ঘসময় ধরে গেট ফেলে রাখার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হলে স্টেশন মাস্টার আনোয়ার হোসেন সাদাদ বলেন, বিধি মোতাবেক পূর্ববর্তী স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়লেই সিগন্যাল দেয়াসহ যাবতীয় পদক্ষেপ নিতে হয়। পূর্বে সময় লাগতো কম। কারণ তখন মোমিনপুর ও মুন্সিগঞ্জ স্টেশনের কার্যক্রম চালু ছিলো। লোকাল ট্রেনের ক্ষেত্রে মোমিনপুর স্টেশন মাস্টারের নিকট থেকে খবর পেয়ে সিগন্যাল দেয়া হতো। আন্তঃনগর ট্রেনগুলো মুন্সিগঞ্জের। অপরদিকে জয়রামপুর স্টেশনেরও কার্যক্রম চালু ছিলো। দীর্ঘদিন ধরে গাইদঘাট ও জয়রামপুর স্টেশনের কার্যক্রম নেই। মূলত বন্ধ। ফলে ঊর্ধ্বমুখি ট্রেন যখন দর্শনা থেকে ছাড়ে তখন চুয়াডাঙ্গা স্টেশনে প্রবেশের সিগন্যাল দেয়া হয়। অপরদিকে নিম্নমুখি লোকাল বা মেল ট্রেন আলমডাঙ্গা থেকে ছাড়লেই চুয়াডাঙ্গায় গেট পড়ে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় রেলবিধিতে আছে বলে আমার জানা নেই। যদি লেবেল ক্রসিঙের নিকট আন্ডারপাস বা ওভার ফ্লাই নির্মাণ করা হলে দুর্ভোগ দূর হবে।

প্রসঙ্গত: প্রতিবেশী দেশ ভারতে রেললাইন সম্প্রসারণসহ নতুন নতুন স্টেশন করার যখন রীতিমতো প্রতিযোগিতা, তখন আমাদের দেশে লোকসান কমাতে লোকবল কমাতে একের পর এক স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ করার হিড়িক।