রূপকথা লেখা হলো না : মর্মান্তিক

মাথাভাঙ্গা মনিটর: বছর সাতেক আগেও ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের চতুর্থ বিভাগে খেলতেন তারা। কঠোর পরিশ্রম আর একাগ্রতার ফলে সেই ক্লাবটিই ২০১৪ সালে উঠে এসেছিল দেশটির সর্বোচ্চ পর্যায়ের লিগ সিরি আ-তে। আরেকটি রূপকথার সাক্ষী হতে উড়াল দিয়েছিলেন কলম্বিয়ায়। কিন্তু নিয়তির কি নির্মম পরিহাস! ইউরোপা লিগের সমপর্যায়ের কোপা সুদামেরিকানার শিরোপাটা উঁচিয়ে ধরা হলো না তাদের। মৃত্যুর হিম-শীতল স্পর্শে নিথর হয়ে পড়ে রইলেন চির সবুজ জার্সিধারীদের প্রায় সবাই। দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের ক্লাব ফুটবলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতা সুদামেরিকানার ফাইনালের প্রথম লেগ খেলতে ভাড়া করা বিমানে বলিভিয়া থেকে কলম্বিয়ার মেদেলিন শহরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন শাপেকোয়েনস ক্লাবের ২২ জন সদস্য। কিন্তু স্থানীয় সময় গত সোমবার মধ্যরাতে (বাংলাদেশে মঙ্গলবার সকালে) কলম্বিয়ার প্রত্যন্ত পাহাড়ি অঞ্চলে বিধ্বস্ত হয় ৭২ জন যাত্রী এবং নয়জন ক্রু বহনকারী বিমানটি।

স্থানীয় পুলিশের দেয়া তথ্যানুসারে, এ দুর্ঘটনায় ক্লাবটির মাত্র তিনজন সদস্য-ডিফেন্ডার অ্যালান রুশেল এবং গোলরক্ষক জ্যাকসন ফোলম্যান ও দানিলোসহ পাঁচজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে মারা যান দানিলোও। স্থানীয় সময় আজ বুধবার কলম্বিয়ার অ্যাটলেটিকো ন্যাচিওনালের সঙ্গে ফাইনালের প্রথম লেগ খেলার কথা ছিল ব্রাজিলের ক্লাবটির। বিমান দুর্ঘটনার পর ফাইনাল সংক্রান্ত ‘সমস্ত ধরনের কার্যক্রম’ স্থগিত করেছে দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল কনফেডারেশন (কনমেবোল)। শোকে স্তব্ধ ক্লাবটির পক্ষ থেকে দেয়া এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতি বলা হয়, ‘ঈশ্বর আমাদের খেলোয়াড়, কর্মকর্তা, সাংবাদিক এবং সঙ্গে থাকা অন্যান্য অতিথিদের সহায় হোন।’ ব্রাজিলের ফুটবল ইতিহাস বিবেচনায় খুব একটা প্রাচীন নয় শাপেকোয়েনস ক্লাবটি। ১৯৭৩ সালে ব্রাজিলের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য সান্তা ক্যাটেরিনার শাপেকো শহরে প্রতিষ্ঠিত এ দলের ২০০৯ সালের আগে তেমন সাফল্য নেই। ওই বছর থেকে ক্রমান্বয়ে উন্নতি করতে থাকে তারা। ২০১৪ সালে ব্রাজিলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের লিগে উঠে এসে টানা তৃতীয়বারের মতো এ  প্রতিযোগিতায় খেলছিল তারা। চলতি মৌসুমে নবম অবস্থানে ছিল দলটি। গত সপ্তাহে বিপক্ষের মাঠে দেয়া গোলের সুবাদে আর্জেন্টাইন ক্লাব সান লোরেনজোকে হারিয়ে সুদামেরিকানার ফাইনালে উঠে শাপেকোয়েনস। এরপর ইএসপিএন তাদের প্রতিবেদনে ক্লাবটিকে ‘আনগ্ল্যামারাস বাট গ্রোয়িং টিম’ হিসেবে আখ্যা দেয়। কারণ তিন বছর পর ব্রাজিলিয়ান ক্লাব হিসেবে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের কোনো বড় প্রতিযোগিতার ফাইনাল খেলার যোগ্যতা অর্জনের কৃতিত্ব দেখায় শাপোকোয়েনস। আয় বিবেচনায় ব্রাজিলের ক্লাবগুলোর তালিকায় ২১ তম স্থানে থাকা শাপেকোয়েনস এর সবচেয়ে পরিচিত খেলেয়াড় ছিলেন অধিনায়ক ক্লেবার সান্তানা। ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত স্প্যানিশ ক্লাব অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে খেলেন এই মিডফিল্ডার। সার্জিও রামোস-ডেভিড ডি গিয়াদের মতো তারকাদের সঙ্গে খেলেছেন তিনি। এছাড়া ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ম্যাথিউস বিটেকো জার্মান বুন্দেসলিগায় খেলেছেন। ২০১১-১৬ সাল পর্যন্ত পর্তুগিজ ক্লাব স্পোটিং লিসবনে খেলেছেন গোলরক্ষক মার্সেলো বোয়েক।-ডেইলি মেইল

 

শাপেকোয়েনস ফুটবল দল প্রতিষ্ঠিত :১৯৭৩ সাল।

স্টেডিয়াম :অ্যারেনা কোন্দা, শাপেকো, সান্তা ক্যাটরিনা, ব্রাজিল। ২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো ব্রাজিলিয়ান সর্বোচ্চ পর্যায়ের লিগ সিরি আ-তে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। বর্তমানে লিগে দলটির অবস্থান নবম।দক্ষিণ আমেরিকার ক্লাব প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় কোপা সুদামেরিকানার (ইউরোপা লিগের সমপর্যায়ের) ফাইনালের প্রথম লেগ খেলতে কলম্বিয়ার মেদেলিন শহরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল শাপেকোয়েনস। কোপা লিবার্তাদোর্স  চ্যাম্পিয়ন নাসিওনালের বিপক্ষে আন্ডারডগ ছিল তারা। স্থানীয় ২৮ নভেম্বর, ২০১৬ ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান ক্লাবটির ২০ জন খেলোয়াড়। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনজনকে জীবিত উদ্ধার করা হলেও পরে হাসপাতালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন গোল রক্ষক দানিলো।