জেলা পরিষদ নির্বাচনে মুখোমুখী আওয়ামী লীগ

 

থাকছে বিদ্রোহী প্রার্থী : স্থানীয় নির্বাচনের অজুহাতে কঠোর শাস্তির খড়গ নেই

স্টাফ রিপোর্টার: জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও সদস্যপদে অধিকাংশ এলাকায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিএনপি ও জাতীয় পার্টি এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। ফলে চেয়ারম্যান পদে দলীয় সমর্থন পেলেই বিজয় প্রায় নিশ্চিত। এ অবস্থায় দলের অলিখিত টিকিট পেতে মরিয়া সবাই। যারা বঞ্চিত হবেন তারা বিকল্প হিসেবে স্বতন্ত্রভাবে ভোটের লড়াইয়ে নামার কথা ভাবছেন। সরকারি দলে এ ধরনের নেতার সংখ্যাও নেহাত কম নয়। অন্যদিকে দুই প্রধান বিরোধী দল অংশ না নেয়ায় আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে সম্ভাব্য বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নাও নেয়া হতে পারে। প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠেয় নির্বাচনকে উৎসবমুখর দেখাতে এমন চিন্তাভাবনা চলছে শাসক দলে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। বিগত পৌর ও উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ একাধিকবার হুশিয়ারি উচ্চারণ করে। তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে- এমন ঘোষণা দেয়া হয় সংবাদ সম্মেলন করে। কিন্তু কার্যত তা হুমকিতেই সীমাবদ্ধ ছিলো। কেন্দ্র থেকে কোনো বিদ্রোহী প্রার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বরং সর্বশেষ অনুষ্ঠিত জাতীয় সম্মেলনের আগে বিদ্রোহী প্রার্থীদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে তাদের প্রাথমিক সদস্যপদ ফিরিয়ে দেয়া হয়। ফলে বিভিন্ন জেলার বিদ্রোহী প্রার্থীরা কাউন্সিলর হিসেবে সম্মেলনে যোগ দেয়ার সুযোগ পান। সংশ্লিষ্টদের দাবি, জেলা পরিষদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে আরও বেশি সুযোগ দেয়া হতে পারে। তিন পার্বত্য জেলা ছাড়া বাকি ৬১ জেলায় ২৮ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এতে স্থানীয় সরকার পর্যায়ের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ভোটের মাধ্যমে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবেন। স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এ প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে রাজনৈতিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে তাদের নিয়োগ দেয়। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য আওয়ামী লীগ এ মাসে আবেদনপত্র আহবান করে। এ আহবানে সাড়া দিয়ে নির্ধারিত সময় ১৮ নভেম্বর শুক্রবার পর্যন্ত ৭শ আবেদনপত্র জমা পড়ে। এদের মধ্যে ৬১ জনকে দলের পক্ষ থেকে সমর্থন দেয়া হবে। প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের সুপারিশ ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার জরিপ বিবেচনায় নেবে দলটির মনোনয়ন বোর্ড। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড প্রার্থী বাছাই কার্যক্রম শুরু করেছে। রাত ৮টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় বৈঠক চলছিল। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বৃহস্পতিবার দুপুরে যুগান্তরকে বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতি জেলায় একজন প্রার্থীকে সমর্থন দেয়া হবে। যদি আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তাহলে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ মুহূর্তে আমরা একক প্রার্থী নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছি। যোগ্য প্রার্থীকে সমর্থন দেয়া হবে এবং অন্যরা তাকে মেনে নেবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৬১ জেলার অধিকাংশেই দলীয় সমর্থন বঞ্চিতরা স্বতন্ত্র নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কোথাও কোথাও গা বাঁচিয়ে বিএনপি ও জাপার সমর্থকদেরও দাঁড় করানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এদিকে জয় নিশ্চিত করতে শাসক দলের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরা ভোটারদের নানাভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। নগদ অর্থ প্রদান থেকে শুরু করে মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যদের শক্তি কাজে লাগিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী অতিক্রম করতে চান তারা। জামালপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তিন প্রভাবশালী নেতা বর্তমান জেলা পরিষদ প্রশাসক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ চৌধুরী ও সহসভাপতি অ্যাডভোকেট জাহিদ আনোয়ার দলের সমর্থনের প্রত্যাশায় আবেদন করেছেন। এর বাইরে রয়েছেন মেলান্দ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফারহান জাহেদী সপেন। জানা গেছে, বর্তমান জেলা পরিষদ প্রশাসক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ দলীয় মনোনয়ন পেলে তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা সহজেই মাঠ ছাড়বেন না। সেক্ষেত্রে ফারহান জাহেদী সপেনকে দাঁড় করানো হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এ ব্যাপারে ফারহান জাহেদী সপেন যুগান্তরকে বলেন, তিনি আশা করছেন দলের সমর্থন পাবেন। তবে না পেলে এবং সুযোগ থাকলে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। দিনাজপুর জেলা পরিষদের প্রশাসক আজিজুল ইমাম চৌধুরী। তিনিসহ জেলা আওয়ামী লীগের নেতা আলতাফউজ্জামান মিতা, মির্জা আশফাক হোসেন, তরিকুল ইসলাম লাল প্রমুখ দলের সমর্থনের জন্য আবেদন করেছেন। এখানে জেলা আওয়ামী লীগে তিনটি ধারা বিদ্যমান। প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এ জেলার সংসদ সদস্য। সংশ্লিষ্টদের আশংকা, এখানে আজিজুল ইমাম চৌধুরী দলীয় সমর্থন পেলে আওয়ামী লীগের বিকল্প প্রার্থী স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে পারেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রশাসক স্থানীয় আওয়ামী লীগ সভাপতি মইনুদ্দীন মণ্ডল। তিনি নবাবগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র। চেয়ারম্যান পদে দলীয় সমর্থন পাওয়ার আশায় আবেদন করেছেন। তবে এখানে রয়েছে তার প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বীরা। টানা দুই মেয়াদে দল ক্ষমতায় থেকে যারা বঞ্চিত, তারা মইনুদ্দীন মণ্ডলকে সহজে ছাড়তে নারাজ। তাই মইনুদ্দীন মণ্ডল দলের সমর্থন লাভ করলে বঞ্চিতদের মধ্য থেকে নির্বাচনে লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান তোতা দল ক্ষমতায় থেকেও মিথ্যা মামলায় জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন। তিনি যুগান্তরকে বলেছেন, এখানে মইনুদ্দীন মণ্ডল বিভিন্ন কারণে বিতর্কিত। মণ্ডল দলের সমর্থন পেলে তিনি স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন। কুমিল্লা ব্যুরো জানায়, কুমিল্লায় জেলা পরিষদ নির্বাচনে সদস্য প্রার্থীদের নিয়ে বিপাকে পড়েছে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না হওয়ায় জেলার ১৬ উপজেলার সব কটিতেই বেশ কয়েকজন করে প্রার্থী হওয়ায় দলে চরম বিভেদ দেখা দিয়েছে। প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির পক্ষ থেকে এ নির্বাচনে দৃশ্যমান কোনো প্রার্থী না থাকায় শেষ পর্যন্ত ভোটের লড়াই হবে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের মধ্যে। কুমিল্লা জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের সমর্থন চেয়ে ১৮ জন প্রার্থী আবেদন জমা দিয়েছেন। এসব প্রার্থীর ব্যাপারে নানাভাবে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা খোঁজখবর নিয়েছে। সংগ্রহ করেছে তাদের জীবনবৃত্তান্ত। কোনো কোনো প্রার্থী সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট এলাকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রতিবেদন নেয়া হয়েছে।