১৪ দলের প্রতিক্রিয়া : খালেদার প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়

 

স্টাফ রিপোর্টার: নির্বাচন কমিশন গঠনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করেন ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের কেন্দ্রীয় নেতারা। তাদের মতে, শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনে এই প্রস্তাব অপ্রয়োজনীয় ও গুরুত্বহীন। খালেদা জিয়া তার প্রস্তাবে সব দলের সঙ্গে আলোচনার নামে যুদ্ধাপরাধী জামায়াতকে রাজনীতিতে দৃশ্যমান রাখার কৌশল নিয়েছেন। আরপিও সংশোধন করে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় যুক্ত করতে বলার মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়া তার অগণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দর্শনের পরিচয় দিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহম্মদ ফারুক খান বলেন, ‘খালেদা জিয়ার প্রস্তাব অবাস্তব ও অসাংবিধানিক। নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর নাম প্রস্তাব এবং তাতে সবার একমত হওয়া একটি অবাস্তব প্রস্তাব। এ ছাড়া খালেদা জিয়া ১৯৭২ সাল থেকে জাতীয় সংসদে যারা প্রতিনিধিত্ব করেছেন এমন সব দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে রাষ্ট্রপতিকে আলোচনায় বসতে বলেছেন। এর মানে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত ও বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দল ফ্রিডম পার্টির সঙ্গেও বসতে হবে। কিন্তু এসব দলের সঙ্গে আলোচনায় বসতে শুধু আওয়ামী লীগই নয়, এ দেশের বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলেরই আপত্তি আছে। ফলে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সব দলের বসার প্রস্তাবটিও বাস্তবসম্মত নয়।’

মুহম্মদ ফারুক খান বলেন, ‘বর্তমান সংবিধানের অধীনেই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করা সম্ভব। এর জন্য সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। এ সংবিধানের মধ্যে থেকেই ২০১২ সালে সার্চ কমিটির মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়, যা অতীতের যেকোনো সময়ের সঙ্গে তুলনায় একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত। খালেদা জিয়া যদি সংবিধানের মধ্য থেকে এ রকম উন্নত কোনো প্রস্তাব দিতে পারতেন তবে তা সবার জন্য ভালো হতো।’

জাসদের (একাংশ) সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, ‘আমরা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। যে নির্বাচনে জামায়াত ছাড়া সব দল যেন অংশগ্রহণ করে। খালেদা জিয়া গতবার ধ্বংসাত্মক পথ নিয়েছিলেন। এবার তিনি সেই পথ পরিহার করে নির্বাচনমুখী হয়েছেন যা ইতিবাচক। তবে এ ক্ষেত্রে তাঁর আসল নিয়তটা কী, সেটিই বড় বিষয়।’

ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক বলেন, ‘খালেদা জিয়ার প্রস্তাবে নতুন কিছু নেই। এখন তিনি অনেক কথা বলছেন কিন্তু তাঁরা যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন এসব করেননি কেন? তিনি তার প্রস্তাবে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে নির্বাচনে যুক্ত করার যে প্রস্তাব দিয়েছেন তা গ্রহণযোগ্য নয়। খালেদার প্রস্তাবে জামায়াতকে রাজনীতিতে টিকিয়ে রাখার যে কৌশল দেখা গেছে তা নিন্দনীয়। সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন আমরাও চাই। কিন্তু এর নামে খালেদা কাদের রাজনীতিতে রাখতে চান, সেটিও বিবেচনায় নিতে হবে।’

গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ড. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘খালেদা জিয়া তার প্রস্তাবে যে কথাগুলো বলেছেন তাতে তার রাজনৈতিক দর্শন প্রকটভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি প্রতিরক্ষা বাহিনীকে নির্বাচনে যুক্ত করতে চান, বিচারিক ক্ষমতা দিতে চান। এটা কোনো গণতান্ত্রিক মানসিকতা হতে পারে না। তিনি একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মধ্যে সামরিক কায়দায় নির্বাচন চান, এটি কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’

ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক বলেন, ‘গত নির্বাচন কমিশন গঠন হয়েছে সার্চ কমিটির মাধ্যমে। সেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নাম প্রস্তাব করেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করেই নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এবারে সেই প্রক্রিয়াকে বিতর্কিত করতেই খালেদা জিয়া কিছু প্রস্তাব রেখেছেন। এগুলো গ্রহণযোগ্য নয়।’ কমিউনিস্ট কেন্দ্রের যুগ্ম আহ্বায়ক অসিত বরণ রায় বলেন, ‘এটা গত্বাঁধা প্রস্তাব। এ প্রস্তাবের মধ্যে নির্বাচন কমিশন আরো শক্তিশালী হবে, এমন কোনো উপাদান নেই।’