গাংনীতে ১০ টাকা কেজির চাল নিয়ে অনিয়ম কাজিপুর ইউপিতে মেম্বার-চেয়্যারম্যান টানাটানি

 

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী উপজেলার কাজিপুর ইউনিয়নে ১০ টাকা কেজি চাল বিক্রি বন্ধ রয়েছে। হতদরিদ্রদের কার্ড বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে তা যাচাই-বাছাই করছে উপজেলা প্রশাসন। তবে এ ক্ষেত্রেও দরিদ্রদের বাদ দেয়ায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তালিকা প্রণয়নের অনিয়মের বিষয়ে একে অপরকে দুষছেন চেয়ারম্যান ও মেম্বারবৃন্দ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি পূরণে সেপ্টেম্বর মাস থেকে সারাদেশে হতদরিদ্রদের মাঝে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি শুরু হয়। এলক্ষ্যে গাংনী উপজেলার ৯ ইউনিয়নেও তালিকা প্রস্তুত করে ডিলারদের মাধ্যমে বিক্রি শুরু হয়। কাজিপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দেয়া ৪৬৭ জনের তালিকার ব্যক্তিরা চাল পেয়েছেন। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের চাল বিক্রির পর তা সাময়িক বন্ধ করে হত দরিদ্রদের তালিকা যাচাই-বাছাই ও ডিলার নিয়োগ কমিটি। ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে প্রকৃত প্রাপ্তদের রেখে বাকিদের বাদ দেয়ার কাজ শুরু হলেও তা এখন প্রশ্নবিদ্ধ।

এদিকে সরজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৯ নং ওয়ার্ড মেম্বার ভবানীপুর গ্রামের আনারুল ইসলাম তালিকা প্রণয়নে চরম অনিয়ম করেছেন। বিত্তবানদের নামে কার্ড দেয়ার পাশাপাশি ঘুষ নেয়ার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। একেকটি কার্ডের বিনিময়ে তিনি নিয়েছেন এক থেকে ২ হাজার টাকা। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আনারুল মেম্বার।

এদিকে হাড়াভাঙ্গা, কাজিপুর, পিরতলা ও নওদাপাড়া গ্রামেও কার্ড বিতরণে অনিয়য়ের অভিযোগ উঠেছে। মেম্বারদের আত্মীয় স্বজন ও কাছের লোকদের নামের তালিকা করা হয়েছে। যারা সবাই স্বচ্ছল। অনেকেরই পরিবারের দুয়েকজন সদস্য বিদেশে কাজ করছেন। বাড়ি দেখলেই মনে হয় গ্রামের সবচেয়ে বড় ধনী। তারা আবার লাইনে দাঁড়িয়ে চালও কিনেছেন ২ বার।

সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড মেম্বাররা স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারীতা, অর্থ গ্রহণসহ দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে তালিকা তৈরি করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। পক্ষান্তরে বাদ পড়েছেন অসহায় দুস্থ-দরিদ্ররা। এসব অভিযোগ অস্বীকার করে কয়েকজন মেম্বার দোষ চাপালেন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। চেয়ারম্যানের দিক নির্দেশনা ও অনুমতিতেই স্ব স্ব ওয়ার্ডের তালিকা প্রস্তুত করা হয় বলে দাবি মেম্বারদের।

মেম্বাররা নিজেদের অপরাধ ঢাকতে দোষ চাপাচ্ছে বলে দাবি করেন কাজিপুর ইউপি চেয়ারম্যান রাহাতুল্লাহ। তিনি বলেন, আমি করো নামের তালিকা দেয়নি। মেম্বাররা যে তালিকা দিয়েছে তা-ই স্বাক্ষর করে উপজেলা কমিটিতে প্রেরণ করেছি।

এদিকে উপজেলা কমিটির পক্ষ থেকে তালিকা যাচাই-বাছাই করার জন্য ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ না নেয়ায় হতদরিদ্ররাও বাদ পড়ছে।

তালিকার ৭৬ নং কার্ডধারী মিরাজ মিয়ার স্ত্রী জেসমিন টগর জানান, অসুস্থতার কারণে তার স্বামী ঠিকমত ভ্যান চালাতে পারে না। এতে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চালানো ও ছেলেমেয়েদের লেখাপাড়া করানো কষ্টকর। চাষের জমি না থাকায় ধারদেনা করে সংসার চলে। এমন অবস্থায় তালিকা থেকে নাম বাদ দেয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি। একই কথা জানালেন প্রতিবেশী মনিরুল ইসলামের স্ত্রী মালেকা খাতুন ও ফিরোজা খাতুন। ওই পাড়ায় এরকম বেশ কয়েকজনকে তালিকা থেকে বাদ দেয়া হচ্ছে বলে জানান ভক্তভোগীরা। তবে যাচাই-বাছাই কমিটিসূত্রে জানা গেছে, কঠোরভাবেই যাচাই-বাছাই করা হবে। প্রকৃত হতদরিদ্রদের নাম রেখে বিত্তবানদের বাদ দেয়া হবে।