আজ নয়াপল্টনের বিএনপির অফিসে ডাকা হয়েছে চুয়াডাঙ্গা বিএনপিকে

 

গ্রুপিঙের রাজনীতিতে নাজুক জেলা বিএনপিকে সক্রিয় করার উদ্যোগ

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার জবুথবু বিএনপি ঘুরে দাঁড়াতে চায়। কিন্তু গ্রুপিঙের রাজনীতির কারণে অসহায় দলটি। ঝিঁমিয়ে পড়েছেন দলের ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। তারা কোন পক্ষে যাবেন আর কোন পক্ষে যাবেন না তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে সব সময় ভুগে থাকেন। তাই দলীয় কর্মকাণ্ডে তাদের সরব উপস্থিতি দেখা যায় না। কিছু দিন আগে চুয়াডাঙ্গা বিএনপি পাঁচ ভাগে বিভক্ত থাকলেও ইদানীং তিন ভাগে ভাগ হয়ে দায়সারাভাবে দলীয় তর্মকাণ্ড করতে দেখা যায়। এ অবস্থায় সকলেরই চাওয়া গ্রুপিঙের রাজনীতি থেকে চুয়াডাঙ্গা বিএনপিকে এক কাতারে দাঁড় করাতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় বিএনপি আজ রোববার বিকেলে জেলা বিএনপিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ডেকেছে সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য।

জানা গেছে, ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি। ৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির আহ্বায়ক করা হয় বিএনপি নেতা অহিদুল ইসলাম বিশ্বাসকে। এ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটির মুখ দেখতে পারেনি জেলা বিএনপি। আর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিও বেশিদিন এক কাতারে থাকেনি। কিছুদিনের মধ্যেই বিভক্তি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এরপর জেলা আহ্বায়ক অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি গ্রেফতার হন। পুলিশের ওপর বোমা হামলা মামলায় তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। টানা ৫২ দিন হাজতবাস শেষে ১৭ মার্চ জামিনে মুক্ত হন। কিন্তু তিনি আমুল বদলে যান। রাজনীতির ময়দান থেকে পুরোপুরি সরে দাঁড়ান। ফলে তার জামিন নিয়ে সন্দিহান হয়ে ওঠেন তাবৎ নেতা-কর্মী। অনেকেই এটিকে আওয়ামী লীগের সাথে আপস নাটক বলে মন্তব্যও করেন। সেই থেকে তিনি রাজনীতির মাঠে অনুপস্থিত ছিলেন। মাস কয়েক হলো তাকে আবার দলীয় কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে। তবে আগের মতো জ্বলে উঠতে পারেননি তিনি। আলমডাঙ্গার একাধিক বিএনপি নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, চুয়াডাঙ্গায় বিএনপির নেতৃত্ব নিয়েই যতো সমস্যা। কেউ কাউকে মেনে নিতে পারেন না। বিএনপিতে বিভক্তির কারণে আলাদা আলাদাভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করা হয়। এ কারণে নেতাকর্মীরা দল থেকে আজ বিচ্ছিন্ন। তারা কার পক্ষে যাবেন, আর কে কেন্দ্রীয়ভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠবেন তা নিয়ে ভাবনায় পড়েন নেতাকর্মীরা। তাই অনেকেই দলীয় কোনো কর্মসূচিতে যোগ দিতে চান না। কে খুশি হবেন কে বেজার হবেন এটা চান না তারা। তারা বলেন আমরা বিএনপি করি। আমাদের একদল। এক মত। তবে আমরা কেন বিচ্ছিন্নভাবে দলটাকে শেষ করে দিচ্ছি? তারা মনে করেন একক নেতৃত্ব এলেই দল সরব হয়ে উঠবে। বিএনপির এই নাজুক পরিস্থিতি কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে হলে কেন্দ্র বিএনপিকেই কঠোর হাতে গ্রুপিং দমন করতে হবে। জেলা বিএনপিকে সক্রিয় ও শক্তিশালী করতে হবে।

দলীয় সূত্র জানায়, চুয়াডাঙ্গায় বর্তমানে বিএনপির তিনটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দেন জেলা আহ্বায়ক অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস। আরেকটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদুর সহোদর ওয়াহেদুজ্জামান বুলা। অন্যটির নেতৃত্বে রয়েছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শরীফুজ্জামান শরীফ। আজ রোববার বিকেলে ঢাকার নয়াপল্টন অফিসে চুয়াডাঙ্গা বিএনপিকে ডাকার বিষয়ে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়াহেদুজ্জামান বুলা বলেন, আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়কদের আহ্বান করা হয়েছে। সেখানে সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক খন্দকার আবদুল জব্বার সোনা বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গায় বিএনপির রাজনীতি কতিপয় নেতা কুক্ষিগত করে রেখেছেন। তাদের কবল থেকে বিএনপিকে বের করে এক কাতারে দাঁড় করালেই বিএনপি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। কেন্দ্রের সাথে বৈঠকে এ বিষয়গুলোই তুলে ধরার চেষ্টা করবো।’ বিএনপি নেতা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শরীফুজ্জামান সিজার বলেন, আমি ঢাকায় আমন্ত্রণ পাইনি। তবে রোববারে অনুষ্ঠেয় বৈঠকের বিষয়ে শুনেছি। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিএনপি কারো ঘরের জিনিস নয়। মুক্তভাবে রাজনীতি করার সুযোগ দিতে হবে। যারা বিএনপির জন্য নিবেদিত প্রাণ তাদেরকে জায়গা করে দিতে হবে। তবেই চুয়াডাঙ্গা বিএনপি আগের মতো জ্বলে উঠবে। আমরা সে প্রত্যাশায় আছি।