থানায় ধর্ষণ চেষ্টা মামলা : কলেজ কমিটি বিলুপ্ত : তারেক স্থায়ীভাবে বহিষ্কার

চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তারেকের বিবস্ত্র ছবি ফেসবুকে

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানিম হাসান তারেকের রক্তাক্ত ও বিবস্ত্র ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। গতকাল দিনভর এ নি য়ে চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন মহলে আলোচনা শোনা যায়। গতরাতে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের আয়া রত্না খাতুন বাদী হয়ে তারেকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন। এ ঘটনার জের ধরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে এবং দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তানিম হাসান তারেককে ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি তোজাম্মেল হক জানান, কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানিম হাসান তারেকের বিরুদ্ধে সদর থানায় একটি ধর্ষণ চেষ্টার মামলা হয়েছে। মামলার নম্বর ২৭, তারিখ ১২.১১.২০১৬। মামলার বাদী চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের আয়া মোছা. রত্না খাতুন। সদর থানায় দায়েরকৃত মামলার বাদী আতিয়ার রহমানের স্ত্রী রত্না খাতুন এজাহারে উল্লেখ করেছেন, ‘তিনি কলেজ কম্পাউন্ডে দুই ছেলে ও পুত্রবধূসহ বসবাস করেন। কলেজে ৭ বছর চাকরির সুবাদে চুয়াডাঙ্গা মাঝেরপাড়ার ওহাব আলী মিস্ত্রির ছেলে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানিম হাসান তারেক তার পরিচিত। একা পেলে তিনি প্রায়ই রত্নাকে কুপ্রস্তাব দেন। বিষয়টি চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সাবেক পিন্সিপাল সজল কান্তি, ভারপ্রাপ্ত পিন্সিপাল রহমত আলীসহ অনেককে জানান। ১১ নভেম্বর শুক্রবার রাত ১০টার দিকে পরিবারের সবাই রাতের খাবার খেয়ে যে যার মতো যার যার ঘরে শুয়ে পড়েন। রাত সাড়ে ১১টায় ঘরের দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ পান রত্না। নিজের ছেলে বাসায় এসেছে ভেবে দরজা খুলে দেন। এ সময় তানিম হাসান তারেক রত্নার ঘরে ঢুকে জামাকাপড় খুলে বিবস্ত্র হয়ে তাকে জাপটে ধরেন এবং জোরপূর্বক খাটে শুইয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এ সময় রত্নার চিৎকার শুনে ছেলে ইমন ও সবুজ এসে দিগম্বর অবস্থায় তানিম হাসান তারেককে হাতেনাতে ধরে। তারেক এ সময় রত্নার দুই ছেলেকে এলোপাতাড়ি কিল ঘুষি মারতে থাকেন। পরে তারা ঘরে থাকা বাঁশের লাঠি দিয়ে তারেককে নিবৃত করে। এতে তারেকের শরীর রক্তাক্ত জখম হয়। এ সময় তারেককে উঠোনে জাপটে ধরে রেখে থানায় খবর দেয়া হয়। তারেকের সাথে ধস্তাধস্তির সময় তারেকের সহযোগী ছেলেরা এসে রত্নার দুই ছেলেকে মারধর করে তারেককে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরে থানা পুলিশ তারেকের শার্ট-প্যান্ট, স্যান্ডেল ও মোবাইলফোন জব্দ করে।’

পরে জানা যায়, রাতেই রক্তাক্ত জখম তারেককে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর তিনি হাসপাতাল ছাড়েন। গতকাল শনিবার দিনভর বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা শোনা যায়। তারেকের কয়েকটি বিবস্ত্র ছবি কে বা কারা ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়। এ নিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে বিভিন্ন মহলে আলোচনা শোনা যায়। পরে জানা যায়, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত তারেককে ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। সেই সাথে চুয়াডাঙ্গা জেলার চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ শাখার কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস.এম জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত প্রেসবিজ্ঞপ্তিটির অনুলিপি গতকাল সন্ধ্যায় দৈনিক মাথাভাঙ্গা দফতরে পৌঁছুলে তা সঠিক বলে মোবাইলফোনে নিশ্চিত করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি জাহাঙ্গীর আলম। প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় ‘‌বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের এক জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানানো যাচ্ছে যে, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ শাখার কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো এবং তানিম হাসান তারেককে (সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ শাখা) দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হলো।’