এ মাসেই মাঠে নামছে পুলিশ : ফের শুরু হচ্ছে ধরপাকড়

 

স্টাফ রিপোকর্টার: অস্ত্রধারী রাজনৈতিক ক্যাডার, মাদক ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী ও নাশকতাকারীসহ বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামি গ্রেফতারের ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়ে তালিকা হাতে মাঠে নামছে পুলিশ। এ মাসের মাঝামাঝিতে সারাদেশে একযোগে অত্যন্ত নীরবে এ অভিযান শুরুর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও কবে নাগাদ শেষ হবে তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। তবে বিশেষ এ অভিযান মাসব্যাপী চলতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।

মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এটি রুটিন ওয়ার্ক হলেও তা গতানুগতিক ধরপাকড় অভিযানের মতো হবে না। এবার অপরাধীদের সুনির্দিষ্ট তালিকা হাতে নিয়ে মাঠে নামবে পুলিশ। আর সাধারণ মানুষ যাতে এতে হয়রানির শিকার না হয়, এ জন্য তালিকার বাইরে কাউকে এ অভিযানে গ্রেফতার না করার ব্যাপারে কড়াকড়ি নির্দেশনা দেয়া হবে। গোটা অভিযান মাঠপর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মনিটরিং করবেন। তালিকার বাইরে কাউকে গ্রেফতার করতে হলে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিক অবহিত করতে হবে। তবে থানার নিয়মিত কার্যক্রম এর অন্তর্ভুক্ত হবে না।

জানা গেছে, একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার দীর্ঘ পর্যবেক্ষণ এবং যাচাই-বাছাই করে প্রস্তুতকৃত তালিকা এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে পুলিশের কাছে পৌঁছেছে। আর এ তালিকা নিয়েই শুরু হচ্ছে এ বিশেষ অভিযান। এতে ক্ষমতাসীন দলেরও বিপুলসংখ্যক ক্যাডারের নাম রয়েছে। তবে কাউকে ছাড় না দেয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে এসব সন্ত্রাসীর আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তবে অনেকের ধারণা, এ বিশেষ অভিযানের মূল টার্গেট বিরোধী জোটের সক্রিয় নেতাকর্মীরা। তাদের যেকোনো ধরনের আন্দোলন থেকে দূরে রাখতেই সরকারের এই উদ্যোগ। আর এরই পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী গোয়েন্দারা প্রত্যেক ওয়ার্ড, থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের জামায়াত-বিএনপি এবং ১৮ দলের সক্রিয় নেতাকর্মীদের ‘দুষ্কৃতিকারী’ হিসেবে তালিকা তৈরি করেছে। যদিও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর শীর্ষ কর্তাদের দাবি, কারও এজেন্ডা বাস্তবায়ন নয়, সম্পূর্ণ পেশাদারিত্ব বজায় রেখে এ তালিকা তৈরি করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই এ কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। এদিকে বিশেষ এ অভিযানে ফৌজদারি অপরাধভুক্ত রাজনৈতিক ক্যাডারদের গ্রেফতারের বিষয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়ার কারণ পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এআইজি পদমর্যদার একজন কর্মকর্তা জানান, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, ভূমি দখল, অবৈধ অস্ত্র বেচাকেনা ও বিভিন্ন নাশকতাকারীদের একটি বড় অংশই রাজনৈতিক ক্যাডার। তা ছাড়া আন্ডারওয়ার্ল্ডের গডফাদারদের বড় অংকে দলীয় পদপদবি কিনে নানা অপরাধ তৎপরতা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টিও এখন ওপেন সিক্রেট। তাই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া না গেলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা দুষ্কর হবে। এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ কঠোরতা দেখাতে খোদ প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পরই এ অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

পুলিশ সদর দফতরের অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতার এড়াতে অপরাধীরা যাতে এক এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আত্মগোপন করতে না পারে এজন্য সারাদেশে একযোগে অভিযান চালানো হবে। বিভাগীয় ও জেলা শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের থানাগুলোতেও এজন্য বিশেষ টিম থাকবে। সহকারী কমিশনার কিংবা পরিদর্শক পদমর্যদার একজন কর্মকর্তা এ অভিযানের নেতৃত্ব দেবেন। ডিসি বা এডিসি পর্যায়ের কর্মকর্তা এর মনিটরিংয়ের দায়িত্ব পালন করবেন। অভিযানে জনবল ঘাটতি হলে জেলার পুলিশ লাইন থেকে রিজার্ভ ফোর্স ওই দলে যোগ করা হবে।

পুলিশের শীর্ষস্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, কথিত আইএস ও নব্য জেএমবিসহ একাধিক জঙ্গিগোষ্ঠী আকস্মিক সংঘবদ্ধ হয়ে একের পর এক হামলা ও নাশকতার ঘটনা ঘটাতে শুরু করায় দীর্ঘ ছয় মাসেরও বেশি সময় র‌্যাব-পুলিশ মামলা তদন্ত, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও সন্ত্রাস দমনে ততটা তৎপর থাকতে পারেনি। এ সুযোগে অস্ত্রধারী রাজনৈতিক ক্যাডার, চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজসহ আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডনরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। দেশজুড়ে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকব্যবসাও ভয়ংকরভাবে জেঁকে বসেছে। একাধিক মামলার ওয়ারেন্ট মাথায় নিয়েও নাশকতাকারীরা এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কিছুটা নাজুক হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে দীর্ঘমেয়াদি সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পুলিশের ওই শীর্ষ কর্তাদের দাবি, জঙ্গিগোষ্ঠীর শেকড় সমূলে উপড়ে ফেলা সম্ভব না হলেও তাদের নেটওয়ার্ক অনেকটাই তারা ভেঙে দিতে সক্ষম হয়েছে। তাই জঙ্গি দমনে তৎপরতা কিছুটা কমিয়ে দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অন্যান্য দিকে নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। যদিও পুলিশের ওই ঊর্ধ্বতনরা এটিকে রুটিন ওয়ার্ক বলেই দাবি করেন।

এদিকে পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ ইস্যুতে বিএনপির প্রথম সারির নেতারা যে গো ধরেছেন, তাতে এ নিয়ে রাজপথ উত্তপ্ত হতে পারে। এ আশঙ্কাতে পুলিশ দু-একদিনের মধ্যেই বিএনপির নেতাকর্মীদের ধরপাকড় শুরু করবে। সূত্রটি জানায়, দলটির বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা রয়েছে। এদের কেউ কেউ আত্মগোপনে কিংবা জামিনে থাকলেও সিংহভাগই গা বাঁচিয়ে এলাকায় চলাফেরা করছে। এ ছাড়া বিএনপির বিপুলসংখ্যক নেতা ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি। তাই তাদের গ্রেফতারে আইনগত কোনো বাধা নেই। আর এ সুযোগটুকুই পুলিশ কাজে লাগাবে। তবে পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, শুধু বিরোধী দল নয়, ক্ষমতাসীন দলের বেপরোয়া ক্যাডাররাও এ অভিযানের টার্গেটে রয়েছে। বিশেষ করে যেসব ভুঁইফোড় নেতা পদ-পদবির সাইনবোর্ড ব্যবহার করে দলের সুনাম ক্ষুণ্ন করার মতো নানা অপকর্মে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। এ ছাড়া দলের অভ্যন্তরে অহেতুক কোন্দল সৃষ্টিকারীদের নামও ধরপাকড়ের তালিকায় থাকার কথা দায়িত্বশীল ওই সূত্রটি স্বীকার করেছে।