অসহায়ের বোবা কান্না : চুয়াডাঙ্গা দোস্ত গ্রামের শতবর্ষী শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ফুলছুরাতনের খবর নেননি কেউ

 

নজরুল ইসলাম: সরকারের সদিচ্ছা থাকলেও মাঠপর্যায়ে তদারকি না থাকায় দোস্ত গ্রামের শতবর্ষী ফুলছুরাতনের খবর নেননি কেউ। ১৬টি বছর বিছানায় শুয়ে যন্ত্রণায় দিন কাটছে দৃষ্টি ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী ফুলছুরাতনের। ভাগ্যে জোটেনি বিধবা বা বয়স্কভাতার কার্ড কিংবা ১০ টাকা কেজি দরের চালের কার্ড।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নেহালপুর ইউনিয়নের দোস্ত বসুতিপাড়ার শতবর্ষী শ্রবণ প্রতিবন্ধী ফুলছুরাতনের স্বামী কুদরত মোল্লা ৪০ বছর আগে দূরারোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মৃত্যুকালে কুদরত মোল্লা সংসারে রেখে যান নাবালক ২ মেয়ে ১ ছেলে। স্বামীর মৃত্যুর পর সন্তানদের মুখে দু বেলা দু মুঠো খাবার তুলে দিতে ছুটেছেন এ বাড়ি সেবাড়ি। একমাত্র নাবালক ছেলে তোতা মিয়াকে পরের বাড়িতে কৃষাণ রেখে এবং নিজে পরের বাড়িতে কাজ করে চালিয়েছেন সংসার। স্বামীর মৃত্যুর পর ফুলছুরাতন নিজেই পিতা নিজেই মাতা সেজে সন্তানদের মানুষ করেছেন। শ্রবণ প্রতিবন্ধী থাকার পর ২০০০ সালে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েন তিনি। সেই থেকে বিছানায় শুয়ে যন্ত্রণায় কাটছে ১৬টি বছর। দৃষ্টিহীন হওয়ার আগে যাদের নাম জানতেন তিনি কয়েকটি নাম তার মনে আছে। শরীরে কেউ হাত দিলে একে একে কয়েকজনের নাম এবং ডাক্তার এসেছে নাকি উচ্চারণ করেন তিনি। তাদের মধ্যে কেই হলে শরীরে নাড়া দিলে সে বুঝতে পারে সে কে। কানে না শোনা এবং চোখে দেখতে না পারায় প্রতিবেশীরা জানালেন, আজ তার বয়স ১শর বেশি। সরকারি অনেক সাহায্য সহযোগিতা যেমন বিধবা বা বয়স্কভাতার কার্ড এলেও তা ভাগ্যে জোটেনি অসহায় ফুলছুরাতনের। এমনকি ১০ টাকা কেজির চালের কার্ডও না। গ্রামের অনেকই জানেন সে মারা গেছে। অথচ বাড়িতে গিয়ে গ্রামপর্যায়ে নেতৃত্ব দেয়া কেউ তার খোঁজ রাখেননি। তার ছেলে তোতা মিয়া বললেন, ছোটবেলা থেকে কাজ করি। প্রতিবেশী বেগমপুর ইউনিয়ন আ.লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান কাজল বলেন, বিষয়টা জানতাম না, সামনের দিকে কি করা যায় দেখি। ফুলছুরাতেনর খোঁজখবর নেয়ার সময় পাশে থাকা একই পাড়ার ইবাদতের ছেলে দরিদ্র সাইদুর রহমান নিজের নামের ১০ টাকা কেজি দরের চালের কার্ডটি দিয়ে দিলেন তাকে। তিনি বললেন, ফুলছুরাতনকে দেখতে এসে বুঝলাম এ কার্ড আমার প্রয়োজন নেই।

কালের পরিবর্তনে সব হারিয়ে ফুলছুরাতন এখন মৃত্যুপথযাত্রী। রোগে-শোকে কাতর হাড্ডিসার দেহ। অনেক কথায় বলতে পারেন না তিনি। চিকিৎসার অভাবে দেহের চামড়া কুঁচকে গেছে। নিঃশ্বাস নিতে বড় কষ্ট হয়। নিঃসঙ্গতায় একমাত্র ছেলের টানাটানির উপার্জনে খেয়ে না খেয়ে দিন চলে তার। অসহায় হওয়ায় তার ভাগ্যে জোটেনি সরকারি সুবিধাভোগী কোনো কার্ড। ফুলছুরাতনদের বয়স আর কতো হলে তারা বয়স্কভাতা পাবেন? এখন এটাই তাদের কাছে সব থেকে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।