নেই লোকবল : শতবর্ষী ঝুকিপূর্ণ ভবনেই চলছে কার্যক্রম

 

দর্শনা অফিস: দর্শনা কাস্টমস সার্কেল। যেখান থেকে ফি বছর সরকার গুনছে শতকোটি টাকা রাজস্ব। অথচ এখানে ন্যূনতম উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এজন্যে নেই কি কারো মাথা ব্যথা? শতবর্ষী ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই করা হচ্ছে বসবাস, চলছে অফিসের কার্যক্রম। লোকবল সমস্যাতো লেগেই আছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে বড় ধরনের দুর্ঘটনার। অফিসের কার্যক্রম হচ্ছে বিঘ্নিত। এবারো সরকারের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৬০ কোটি টাকা। দর্শনা কাস্টমস সার্কেল কবে নাগাদ প্রতিষ্ঠিত তার সঠিক হিসেব কেউ দিতে না পরলেও ধারণা করা হচ্ছে শতবর্ষ পেরিয়ে গেছে। ৪৪ বিঘা জমির ওপর কাস্টমস এলাকায় অফিসকক্ষ, গোডাউন, অফিসার ও স্টাফদের বসবাসের জন্য এফজি এবং এইচ কোয়ার্টারের কক্ষ সংখ্যা ২৬টি। ভবনগুলো ১৯৮৫ সালে সরকার পরিত্যক্ত হিসেবে ঘোষণা দিলেও নেয়নি কোনো পদক্ষেপ। হয়নি নতুন করে কোনো ভবন, করা হয়নি ভবনের সংস্কার। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এ ভবনে অফিসের কার্যক্রমের পাশাপাশি করা হচ্ছে বসবাস। নির্ধারিত গোডাউন না থাকলেও কোয়ার্টারগুলোয় গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। শতবর্ষী ভবনগুলোতে বারবার চুন-রং দিয়ে চকচকে রাখার চেষ্টা করা হলেও প্রতিনিয়তই যেন ধ্বসে ধ্বসে পড়ছে চারদিক থেকে। অফিস ও আবাসিক কোয়ার্টারগুলোই দীর্ঘদিন থেকে গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ এ গোডাউনে মালামাল রাখায় পানিতে ভি.জে নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সরকারের সম্পদ। ২৬টি ভবনের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ভবন ব্যবহার হলেও বাকি ভবন ঝোড়-জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ২-৩টি অফিস ও ৩-৪টি জোড়াতালি দিয়েই বসবাস করা হচ্ছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। শতবর্ষী ঝুঁকিপূর্ণ জরাজীর্ণ ভবনগুলো যেকোনো সময় ধ্বসে পড়ে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি।

দর্শনা কাস্টমস সার্কেল, দর্শনা আন্তর্জাতিক স্টেশন ও জয়নগর চেকপোস্টের স্বাভাবিক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৩০ জন স্টাফ প্রয়োজন। অথচ এখানে রয়েছেন, একজন সহকারী কমিশনার, সুপারিনটেন্ডেনসহ ১৫ জন স্টাফ। যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই নগণ্য। প্রায় প্রত্যেককেই অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। নিরাপত্তা সদস্যের ব্যবস্থা থাকলেও তারা নিরস্ত্র। দর্শনা কাস্টমস সার্কেলের গোডাউনে কোটি কোটি টাকার মালামাল জীবনের ঝুঁকি নিয়েই পাহারা দিতে হয় নিরাপত্তা সদস্যদের। ফলে অনেক সময় সশস্ত্র চোরদের মহোৎসব লক্ষ্য করা যায়। চোরদের ঠেকাতে বেকায়দায় পড়তে হয় নিরস্ত্র নিরাপত্তা সদস্যদের। অথচ দর্শনা কাস্টমস সার্কেল প্রতি বছরই সরকারের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে আসছে। সরকারের খাতায় ফি বছর শ শ কোটি কোটি টাকা রাজস্ব জমা হচ্ছে। জনশ্রুতি রয়েছে, বছর সাতেক ধরে এ পর্যন্ত দু বার ভবন নির্মাণের জন্য সরকার ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। তবে কি দেনদরবার ও তদারকির কারণে বরাদ্দকৃত অর্থ কাজে লাগানো যাচ্ছে না? দর্শনা কাস্টমস সার্কেলের সহকারী কমিশনার পারভেজ রেজা চৌধুরীর সাথে কথা বললে তিনি জানান, দর্শনায় অচিরেই স্থলবন্দর বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। দর্শনা কাস্টমস সার্কেলের সুনাম অর্জনে নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক স্টেশন ও জয়নগর চেকপোস্ট এলাকায় যাত্রীসেবা শতভাগ নিশ্চিত করা হবে। দুর্নীতিমুক্ত কাস্টমস সার্কেল গড়ে তোলা হবে। সম্ভাবনাময়ী এ সার্কেলটি দর্শনাবাসীর সহযোগিতায় আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে সচতেনমহল অভিমত ব্যক্ত করে বলেছেন, সরকার যে বিভাগ থেকে প্রতিবছর শ শ কোটি টাকা গুনছে। সে বিভাগের দিকে নজর নেই কেন? সরকার মাত্র ১ বছরের রাজস্ব এ সার্কেলে উন্নয়নে খরচ করলেই যথেষ্ট। সরকারের কাছে আবারো এলাকাবাসী দাবি দর্শনা কাস্টমস সার্কেলের উন্নয়ন। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণের মধ্যদিয়ে অসংখ্য জীবনহানির আশঙ্কা থেকে রক্ষা করার জন্য। বিষয়টি খতিয়ে দেখে সরকার সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্তাদের সুদৃষ্টি কামনা করা হয়েছে।