মাঠ থেকে প্রয়োজনের বেশি চাহিদা আসে : ৩ বছরে ৩০ লাখ বই বেশি ছাপানো হয়
স্টাফ রিপোর্টার: মাধ্যমিক স্তরের প্রায় ৩০ লাখ পাঠ্যবই কেজি দরে বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিনামূল্যে বিতরণের জন্য এসব বই গত ৩ বছর ধরে ভুল চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ছাপানো হয়েছে। উদ্বৃত্ত বই ছাপাতে সরকারের ব্যয় হয়েছে প্রায় ৬ কোটি টাকা। কেজির হিসাবে বিক্রি করলে পাওয়া যাবে সাড়ে ৩৩ লাখ টাকা। সেই হিসাবে সরকারের গচ্চা যাচ্ছে ৫ কোটি সাড়ে ৬৬ লাখ টাকা।
জানা গেছে, ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে মোট ৩০ লাখ বই উদ্বৃত হয় । দু’দফা বৈঠকের পর বৃহস্পতিবার উদ্বৃত বই বিক্রির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২০১৬ এবং ২০১৭ সালেও ভুল হিসেবে বই ছাপা হয়েছে। এ দুই বছরের বাড়তি বই শিক্ষকদের মাঝে বিতরণ করা হবে। এরপরও অবশিষ্ট থাকলে তা স্কুল ও স্থানীয় পর্যায়ে পাঠাগারে দেয়া হবে। বৈঠকের সভাপতি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বৈঠকের সভাপতি চৌধুরী মুফাদ আহমেদ বলেন, ২০১৩ সাল থেকে তিন বছরের হিসাবে ৩০ লাখ উদ্বৃত বইয়ের তথ্য পাওয়া গেছে। ২০১৬ এবং ২০১৭ সালেও ভুল তথ্যে বই ছাপার হিসাবও আমাদের হাতে এসেছে। উদ্বৃত্ত বই কেজির হিসাবে বিক্রি করা হবে। তবে সব নয়। পড়ার উপযোগী বই এবং কারিকুলামের সঙ্গে মিল আছে, সেগুলো শিক্ষকদের দেয়া হবে, যাতে তারা পাঠদানের জন্য বাড়িতে পড়তে পারেন। এছাড়া ভালো থাকলে স্থানীয় পাঠাগার এবং প্রতিষ্ঠানের পাঠাগারেও রাখা যাবে।
সূত্র জানায়, বেশি বই ছাপার বিষয়ে প্রাথমিকভাবে চারটি কারণ পাওয়া গেছে। এগুলো হচ্ছে- এনসিটিবিকে দেয়ার জন্য স্কুল থেকে শুরু করে মাউশি পর্যন্ত প্রত্যেক স্তরেই বইয়ের বাড়তি চাহিদা তৈরি করা হয় । বিকল্প বিষয়ে বইয়ের সঠিক পরিসংখ্যান নিরূপণে ব্যর্থতা। উপজেলা-জেলা শিক্ষা অফিসের সঙ্গে মাউশির সমন্বয়হীনতা এবং দায়িত্বপ্রাপ্তদের দায়িত্বহীনতা। তবে এজন্য কাউকে চিহ্নিত করা বা শাস্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি।
জানা গেছে, বাড়তি চাহিদা দিয়ে সরকারি অর্থ গচ্চার কারণ অনুসন্ধানে এনসিটিবিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সংস্থাটি মাউশিকে সঙ্গে নিয়ে এ ব্যাপারে প্রতিবেদন তৈরি করবে। অবশ্য ভবিষ্যতে যাতে অতিরিক্ত বইয়ের চাহিদা না আসে সে লক্ষ্যে মাউশিতে একটি সেল গঠন এবং মাঠপর্যায়ে ৫৫৯টি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। মাঠপর্যায়ের এসব কমিটির মধ্যে ৬৪টি জেলায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (শিক্ষা) নেতৃত্বে কাজ করবে। বাকি কমিটিগুলো হবে উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে। কমিটি যাচাই-বাছাই শেষে বইয়ের চাহিদা দেবে। তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সেল পাঠাবে এনসিটিবিতে। এ প্রক্রিয়ায় ২০১৮ সালে সঠিক হিসাবে বই ছাপানো হবে। এর আগে রোববার একই বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের একটি সূত্র জানায়, উদ্বৃত বইয়ের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না নিয়ে রোববারের বৈঠকে বসেন কর্মকর্তারা। এ কারণে ওইদিনের বৈঠক মুলতবি করে সারা দেশে মাউশির আঞ্চলিক পরিচালকদের কাছে তথ্য তলব করা হয়। মাঠপর্যায়ের তথ্য মতে, সারা দেশে ৩০ লাখ বই উদ্বৃত আছে। এরমধ্যে রংপুর অঞ্চলে ১০ লাখ ২৭ হাজার ৪৭৬টি, কুমিল্লায় ১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৬৮টি, খুলনায় ১ লাখ ৪০ হাজার এবং বরিশালে ১ লাখ ৭০ হাজার ৪৯টি বই আছে। বাকি ৫টি অঞ্চলের গুদামে আরও প্রায় ১৫ লাখ বই পড়ে আছে। তবে আঞ্চলিক পরিচালকদের দেয়া এ তথ্যের সঙ্গে একমত নয় মন্ত্রণালয় এবং এনসিটিবি। মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, ২০১৫ সালে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষায় পাস করেছে সাড়ে ৩০ লাখ ছাত্রছাত্রী। হিসাব অনুযায়ী এসব শিক্ষার্থীরই ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার কথা। সাধারণত সবাই ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয় না। তারপরও যদি সবাই ভর্তি হয়, সেক্ষেত্রে এর বেশি বই লাগার কথা নয়। কিন্তু এ বছরে ষষ্ঠ শ্রেণীর জন্য ভর্তি ছাপা হয় ৩৪ লাখ। অর্থাৎ, ভুল চাহিদার কারণেই ছাপা হয়েছে সাড়ে ৩ লাখ বেশি বই। এভাবে অন্যান্য শ্রেণীতেও বাড়তি বই ছাপা হয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। জানতে চাইলে এনসিটিবির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকী যুগান্তরকে বলেন, মাধ্যমিক স্তরের একটি পাঠ্যবই ছাপাতে খরচ হয় ১৯ টাকা ৮৫ পয়সা। সাধারণত প্রতি ৯টি বইকে এক কেজি ধরে আমরা বিক্রির অনুমতি দিয়ে থাকি। অধ্যাপক সিদ্দিকীর এ হিসাব থেকে মন্ত্রণালয় বইয়ের কেজি ও দর নির্ধারণ করেছে। সেই হিসাবে দেখা যায়, ৩০ লাখ বইয়ের ওজন দাঁড়ায় মোট ৩ লাখ ৩৪ কেজি। এগুলো বিক্রি করে পাওয়া যাবে ৩৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। অপরদিকে ৩০ লাখ বই উৎপাদন খরচ দাঁড়ায় ৫ কোটি ৯৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা।