সাংবাদিক হতে চেয়ে লাশ হলো ঝিনাইদহের লিপু

 

এলাকাবাসীর মানববন্ধন সড়ক অবরোধ : দিনেও হত্যা রহস্য উদঘাটন হয়নি

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোতালেব হোসেন লিপুর হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে ঝিনাইদহে মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে এলাকাবাসী। গতকাল শনিবার দুপুরে সদর উপজেলার আমতলা মোকিমপুর বাসস্ট্যান্ডে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া মহাসড়কের মকিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে অংশ নেন কয়েকশ শিক্ষার্থী, শিক্ষক, এলাকাবাসী ও তার স্বজনরা। ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- ঝিনাইদহ প্রেসক্লাব জেলা কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি সাংবাদিক আলাউদ্দীন আজাদ, মানবাধিকারকর্মী আমিনুর রহমান টুকু, স্থানীয় মোকিমপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আক্তারুজ্জামান, শিক্ষার্থী ইলিয়াস হোসেন, রাশেদুজ্জামান ও লিপুর চাচাতো ভাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাসুম মিয়া।

বক্তারা লিপুর হত্যার রহস্য উদঘাটন করে দোষীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানান। মানববন্ধন কর্মসুচি শেষে হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের দাবিতে ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া মহাসড়ক কিছুক্ষণ অবরোধ করে রাখেন তারা। এতে মহাসড়কের দু পাশে যানবাহনের তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লতিফ হলের ডাইনিং রুমের পাশে নর্দমা থেকে লিপুর লাশ উদ্ধার করা হয়। লিপু হরিণাকুণ্ডু উপজেলার মকিমপুর গ্রামের দিনমজুর বদর উদ্দিনের ছেলে। পরীক্ষা জালিয়াতি চক্রের সাথে বিরোধের কারণে লিপুকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে পুলিশ সন্দেহ করছে। লিপুর মা হোসনে আরা বেগম অভিযোগ করেন, গত পূজার ছুটিতে বাড়ি এলে লিপুকে ফোনে হুমকি দেয়া হতো। লিপু বেশ কিছুদিন ধরেই মোবাইলফোনে হুমকি পাচ্ছিলেন বলে তার বাবা বদর উদ্দিনও জানান। তিনি বলেন, হুমকির মুখে মোবাইলফোন ভেঙে ফেলেছিলো লিপু। ভয়ে বাড়ি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে চাইছিলো না। পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য তারাই জোর করে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছিলেন। বদর উদ্দিন বলেন, মঙ্গলবার সকালেও কিন্তু বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে লিপুকে ফোনে হুমকি দেয়া হয়। লিপু শুধু বলেছিল, বিপদে আছি।

ঘটনা বিশ্লেষণ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দ্বিতীয়বর্ষের শিক্ষার্থী মোতালেব হোসেন লিপু সর্বশেষ বাড়ি যায় গত পূজার ছুটিতে। লিপু হত্যা রহস্য ফাঁস না হলেও  ক্যাম্পাসে ফেরার আগের দিন সোমবারে লিপুর সাথে মোবাইলফোনে হুমকি-ধামকি ও কথা কাটাকাটি হয়েছিলো বলে লিপুর পরিবার থেকে জানা গেছে। লিপুর পরিবারে চলছে শোকের মাতম। বুক ফাটানো কান্না থামানো যাচ্ছে না লিপুর হতভাগী মা হোসনেয়ারা বেগম ও স্বজনদের। সেই সাথে শোকের ছায়া নেমে এসেছে এলাকাজুড়ে। একেবারেই নরম ও ভদ্র স্বভাবের ছিলেন রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র ঝিনাইদহের মোতালেব হোসেন লিপু। সে কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সাছে জড়িত ছিলো না। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সুরক্ষিত স্থানে থেকেও লাশ হয়ে ঘরে ফেরা কোনোভাবেই মানতে পারছে না তার পরিবার ও এলাকাবাসী। নিজেরা মামলা না করলেও বলছে সরকার এর বিচার করুক। লিপুকে পরিকল্পিতভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে এমন আশঙ্কা পরিবারের। চাচাতো ভাই শাসুম মোল্লা জানান, মঙ্গলবারে সে ক্যাম্পাসে ফিরে যায়। কেন সে লাশ হলো? কেন তাকে বাঁচতে দেয়া হলো না? কারা ছিলো তার ঘাতক এমন প্রশ্ন সবার মাঝে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সহকর্মীদের ফোন আর টিভির খবর দেখে লিপুর পরিবার জানতে পারে তাদের ছেলে খুন হয়েছে, লাশ পড়ে আছে ক্যাম্পাসের ডাইনিঙের ড্রেনে। ঝিনাইদহের প্রত্যন্ত পল্লি হরিণাকুণ্ডুর মকিমপুর গ্রামে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে নেমে আসে শোকের ছায়া। লিপুর বাবা  জানান, ২ ভাই এক বোনের মধ্যে লিপু ছিলো বড়। শুক্রবার গভীর রাতেই নিহত লিপুর মরদেহ গ্রামের বাড়ি মকিমপুরে আনার পর দাফন সম্পন্ন হয়।

লিপুর মা হোসনেয়ারা জানান, অনেক স্বপ্ন-সাধনায় থাকা ছেলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে এমন মৃত্যু খবরে নির্বাক। কি বলবেন তারা, কি করণীয় কিছুই গুছিয়ে বলতে পারলেন না তবে ক্ষীণকণ্ঠে বিচার চাইলেন সরকারের কাছে। বললেন ছেলে দোষী কি নির্দোষী তা সরকারের কাছেই জানতে চাই। লিপুর মা আরো বলেন, ক্যাম্পাসে ফেরার আগের দিন মোবাইলফোনে হুমকি ও কথা কাটাকাটি হয়েছিলো, আমি ঘটনা জানতে চাইলে লিপু বলে কোনো ব্যাপার না আমার রুমমেটের সাথে ফোনে কথা হচ্ছিলো। আমি লিপুর রুমমেটের মোবাইল নম্বর জানতে চাইলে লিপু একটু চুপ করে থেকে বললো, এবার ক্যাম্পাস থেকে ঘুরে এসে দেবো।