গাংনীতে বাল্যবিয়ে দিয়ে মিলন মেম্বারের দাম্ভিকতা!

 

গাংনী প্রতিনিধি: গায়ের জোরে বাল্যবিয়ে দিয়ে দাম্ভিকতা দেখালেন মেহেরপুর গাংনী উপজেলার তেরাইল গ্রামের ইউপি সদস্য মিলন হোসেন। জোরপূর্বক বিয়ে দিলেও এলাকায় সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিতি মিলনের ভয়ে নীরবতা পালন করতে বাধ্য হচ্ছে বরের পরিবার।

জানা গেছে, গত শুক্রবার বিকেলে ভরাট গ্রামের জুলফিকার আলীর মেয়ে সীমা খাতুন বিয়ের দাবিতে দুর্লভপুর গ্রামের এখলাছুর রহমানের বাড়িতে ওঠে। দীর্ঘদিন ধরেই তাদের মধ্যে প্রেমসম্পর্ক বলে দাবি করে সীমা খাতুন। এখলাছের পরিবার সীমাকে বাড়ি থেকে সরিয়ে দিতে ব্যর্থ হয়। এভাবে বিয়ে না করে উভয় পরিবারের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে পরবর্তীতে বিয়ে করবে বলে মত প্রকাশ করেন এখলাছ। কিন্তু কোনো অনুরোধই কাজে আসেনি। শুক্রবার রাতে তেরাইল গ্রামের সেই মিলন মেম্বার ও ভরাট গ্রামের জিয়ার অবৈধ হস্তক্ষেপ সীমাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয় এখলাছ। বর্তমানে এখলাছের স্ত্রী হিসেবে তার বাড়িতেই রয়েছেন সীমা। সীমা খাতুন গত বছর বিটিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে অকৃতকার্য হয়। সে হিসেবে তার বিয়ের পূর্ণ বয়স হয়নি। তারপরেও জোরপূর্বক বিয়ে দেয়ায় গ্রামের মানুষের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া বিরাজ করছে। এ বিষয়ে গতকাল ঘটনাস্থলে গিয়ে সীমা ও তার শাশুড়ির সাথে কথা হয়। সীমা জানায়, এখলাছ কিছুদিন আগে ঢাকায় যাওয়ার পর মোবাইলফোন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। কয়েকদিন আগে বাড়ি ফিরলে বিয়ের জন্য আসি। মিলন মেম্বার সম্পর্কে তার মামা হয় বিধায় বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। এদিকে মিলন মেম্বার দাম্ভিকতা প্রকাশ করে বলেন, তাদের দুজনের বয়স পূর্ণ হয়েছে। আমার ওয়ার্ডে কীভাবে বিয়ে হবে তা আমার ব্যাপার।

স্থানীয় সরকারের একজন প্রতিনিধি হয়েও আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গলি দেখানোয় মিলন মেম্বারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বিরাজ করছে এলাকায়। বাল্যবিয়ে মুক্ত মেহেরপুর জেলার জেলা প্রশাসন যেখানে বাল্যবিয়ের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে সেখানে একজন মেম্বার কীভাবে বাল্যবিয়ে দেয়ার সাহস রাখেন তা ভেবে পাচ্ছেন না কেউ-ই। জোরপূর্বক বাল্যবিয়ে দেয়ার মিলনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকার সচেতনমহল।

তেরাইল গ্রামের রেজাউল ইসলামের ছেলে মিলন হোসেন সন্ত্রাসী ও পরিবহন ডাকাতির ঘটনার অভিযোগে অভিযুক্ত। তাকে এলাকার মানুষ সন্ত্রাসী হিসেবেই চেনেন। গত বছরের ১১ নভেম্বর অলিনগর গ্রামে পরিবহন ডাকাতি ও আলগামন চালককে কুপিয়ে জখম করে ডাকাতরা। এ ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে তেরাইল গ্রামের মিলন মেম্বার ও তার সহযোগী দাউদ হোসেনের নাম উঠে আসে পুলিশের তদন্তে। ওইদিনই দাউদকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও পালিয়ে রক্ষা পায় মিলন। বিষয়টি কোনো রকম সামলে ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় মেম্বার হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি। গত নির্বাচনে মেম্বার প্রার্থী হন। কিন্তু তার ভয়ে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সাহস পায়নি। বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেম্বার নির্বাচিত হয়। কিন্তু তার পেছনের সেই অপকর্মগুলো ছেড়ে দেয়নি বলে অভিযোগ করেছে এলাকার একাধিক মাধ্যম। মিলনের বিরুদ্ধে পুলিশের খাতায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। মামলাও রয়েছে। তাই মিলনের বর্তমান কর্মকাণ্ডের নজরদারি ও বাল্যবিয়ে দেয়ায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

গত শুক্রবার রাতে এখলাছ ও নাজমুলের বাল্যবিয়ের খবর পেয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানকে তা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন গাংনী সহকারী কমিশনার (ভূমি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসএম জামাল উদ্দীন আহম্মেদ। কিন্তু নির্দেশনার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে একজন জনপ্রতিনিধি বাল্যবিয়ে দেয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তিনি। দ্রুত মিলনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।