দামুড়হুদায় র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত শাকিল ও সবুজের দাফন সম্পন্ন

 

 

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় র‌্যাবের ক্রসফায়ারে শাকিল (২৬) ও সবুজ (২৮) নামের দু অপহরক নিহত হয়েছে। নিহত শাকিল দামুড়হুদা ঘাটপাড়ার আব্দুল কাদেরের ছেলে এবং সবুজ চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের সিএন্ডবিপাড়ার মৃত হামিদুল ইসলামের ছেলে। তারা উভয়ই দামুড়হুদা ব্রিজপাড়ার মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্র সজিব অপহরণ ও খুন-গুম মামলার এজেহার নামীয় আসামি।

গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা পরানপুর বেলে মাঠস্থ পুকুর পাড়ে র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে তারা নিহত হয়। দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আবু জিহাদ জানান, নিহত শাকিল ও সবুজের লাশ তাদের পরিবারের লোকজন থানায় এসে সনাক্ত করে। বেলা ১১টার দিকে নিহত দুজনের লাশের ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা জেলা সদর হাসপাতালমর্গে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে লাশ নিহতের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাদের পরিবারের পক্ষে শাকিলের লাশ চাচা নাসির উদ্দীন এবং সবুজের লাশ চাচাতো ভাই সিদ্দিক গ্রহণ করেন। বাদ মাগরিব নিহত শাকিলের লাশের জানাজা শেষে পার-দামুড়হুদায় (কৈবত্তপাড়ায়) গ্রামের কবরস্থানে এবং সবুজকে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে দাফন সম্পন্ন করা হয়। এ ঘটনায় র‌্যাব বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছে।

র‌্যাব ঝিনাইদহ-৬ এর উপপরিচালক মেজর মনির আহমেদ জানান, বুধবার মধ্যরাতে র‌্যাবের একটি টহলদল চুয়াডাঙ্গাতে টহলে বের হয়। এরপর তারা ভোর পৌনে ৩টার দিকে দামুড়হুদার পরানপুর বেলে মাঠস্থ পুকুরপাড় এলাকায় পৌঁছুলে দুর্বৃত্তরা র‌্যাবকে লক্ষ্যে করে গুলি ছোড়ে। র‌্যাব ও পাল্টা গুলি চালায়। এ সময় র‌্যাবের দু সদস্য শাহিন ও শামিম আহত হয়। এরই এক পর্যায়ে র‌্যাব ঘটনাস্থল থেকে শাকিল ও সবুজকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে মৃত ঘোষণা করেন। র‌্যাব ঘটনাস্থল থেকে সন্ত্রাসীদের ফেলে যাওয়া একটা দেশি শার্টারগান, একটি রিভলবার, ৪ রাউন্ড গুলি ও ২টি ধারালো হাসুয়া উদ্ধার করা হয়। র‌্যাব আরও জানায়, তারা উভয়ই দামুড়হুদায় চাঞ্চল্যকর সজিব অপহরণ খুন গুম মামলার এজেহারভূক্ত আসামী।

এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর শনিবার রাত ২টার দিকে দামুড়হুদার গোবিন্দহুদা চটাঙ্গার মাঠ সংলগ্ন একটি আমবাগানের মধ্যে র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে স্কুলছাত্র সজিব হত্যা মামলার প্রধান আসামি সন্ত্রাসি রাকিব মেম্বার নিহত হয়। এ নিয়ে মোট ৬ আসামির মধ্যে প্রধান তিন আসামি র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলো। বর্তমানে নিহত রাকিব মেম্বারের ভাই আল আমিন ও পিনু পলাতক আছে। এ মামলায় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়া একমাত্র আসামি মামুন রয়েছে জেলহাজতে।

এদিকে চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্র সজিব অপহরণ ও খুন-গুম মামলার প্রধান দু আসামি নিহত শাকিল ও সবুজ র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহতের খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকার শ শ নারী-পুরুষ তাদের লাশ দেখতে দামুড়হুদা থানা চত্বরে ভিড় জমাতে শুরু করে।

উল্লেখ্য, গত ২৯ জুলাই রাত ৯টার দিকে দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদ চত্বরে অনুষ্ঠিত বৃক্ষমেলা থেকে চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্র সজিবকে (১৪) তারই এক প্রতিবেশী যুবক শাকিলের মাধ্যমে কৌশলে অপহরণ করে অপহরখচক্রের হোতা রাকিব মেম্বার। তাকে অপহরণের পর নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের কেদারগঞ্জ সিঅ্যান্ডবিপাড়ার জেলা মৎস্য অফিসের অদূরবর্তী রাকিবের চার্জার লাইটের কথিত কারখানায়। সেখানে সজিবকে আটকে রেখে তার মায়ের কাছে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে সন্ত্রাসি রাকিব। একপর্যায়ে স্কুলছাত্র সজিবকে হত্যা করে এবং ওই  কারখানার সেপটিক ট্যাংকে তার লাশ গুম করা হয়। অপহরণের ৩২ দিনের মাথায় গত ৩১ আগস্ট সেপটিক ট্যাংক থেকে স্কুলছাত্র সজিবের গলিত লাশ উদ্ধার হয়।