থামো! হে ভবিষ্যতের জঙ্গি যুবকেরা ! ! ………..এম আমিরুল ইসলাম জয়

থামো এবং শুনো হে ভবিষ্যতের জঙ্গি যুবকেরা! কি বার্তা দিয়ে যাচ্ছো তোমরা? তোমরা আইএস অনুসারী? দূর্ধষ্য জেএমবি যোদ্ধা? ইচ্ছে করলেই কুড়ি-কুড়ি তাজা প্রাণ ঝরিয়ে দিতে পারো কদম ফুলের রোয়ার মতো? রক্তাক্ত লাশের মাঝে দাঁড়িয়ে হাসতে পারো হায়েনার হাসি? কিন্তু কখনো ভেবো দেখেছো কি এই ব্যথর্, ফলহীন পৈশাচিক রক্ত ঝরানোর তিক্ত পরিণাম? ভেবে দেখো, খুব ভালো করে ভেবে দেখো। চর্ম চক্ষুকে বড় করে না দেখে অন্তরদৃষ্টিকে সম্প্রসারিত করে ভেবে দেখো। এরকম নৃশংস হত্যাকান্ডের উপর কোন ধর্মের পতাকা কী উড়তে পারে? ধর্মে যদি ভালোবাসা, দয়া, মায়া, মমতা নাই থাকে, তাহলে তাতে কি আর ধর্ম থাকে? আর ব্যক্তি বা সমাজ জীবনে তার প্রয়োজনিয়তাই বা কতখানি? এতে মানবতা রক্ষা তো হলোই না, ধর্ম রক্ষায় কি হলো? তাছাড়া ধর্ম নিয়েই যখন এতো টানাটানি তখন সেই ধর্মই বা কি বলে? পবিত্র কোরআনে রয়েছে, “ যে ব্যক্তি অকারণে একটি মানুষকে হত্যা করে, সে যেন সমগ্র মানবতাকে হত্যা করে”। একই সঙ্গে নবীজির হুশিয়ারী ও স্মরণ যোগ্য। তিনি বলেছেন, “ সাবধান! আমার পরে তোমরা একজন আরেক জনকে হত্যা করার মতো কুফরী কাজে লিপ্ত হয়োনা”। আবার এ প্রসঙ্গে ভাষা বিজ্ঞানী ডঃ মোঃ শহীদুল্লাহও চমৎকার বলেছেন, “ ধর্ম নিয়ে যারা বাড়াবাড়ি করে, তারা ধর্মের মর্মই জানে না”। কি ছাকনি দিয়ে ছাকা কথাই না মহামনিষীরা বলে গিয়েছেন ! আবার তাত্বিক কথা ছেড়ে বাস্তবতার দিকে তাকালেও দেখা যায় ধর্মীয় উগ্রতার পরিণাম কখনোই ভালো হয় না। টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পর থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোতে মুসলিম নাম হওয়াটাও যেন অভিশাপ হয়ে দাড়িয়েছে! যার প্রকৃষ্ট প্রমাণ বলিউডের মহানায়ক শাহ্রুখ খাঁন ও শতাব্দির অন্যতম সেরা সেতার বাদক আমজাদ আলী খাঁন। শাহ্রুখ খানের মতো বিশ্ব বিখ্যাত সেলিব্রেটিকেও নিউ-ইয়র্ক বিমান বন্দরে এযাবৎ তিন বার আটকে রাখা হয়েছিল। শুধু মাত্র নামের সঙ্গে “খাঁন” থাকার কারণে! এর প্রতিবাদ স্বরুপ হিন্দি ছবি “গু ঘধসব ওং কযধহ”  তৈরী করা হয়। গুরু আমজাদ খাঁনের ক্ষেত্রে অবস্থা আরো শোচনীয়! খোদ ইংল্যান্ডের বড় খেতাব প্রাপ্ত; অথচ তাকে ইংল্যান্ডে ঢোকার ভিসাই দেওয়া হয়নি ! এ থেকে এমনটি ভাবার সুযোগ নেই যে, পশ্চিমা বিশ্ব তাদেরকে চিনে না; বরং এটা পরিকল্পিত এবং অবশ্যই উদ্দেশ্য মূলক হয়রানী। বর্তমান অবস্থা তো আরো শোচনীয় ! অবস্থা এমন দাড়িয়ে যে, মুসলিম মাত্রই জঙ্গি, জঙ্গি মানেই মুসলিম ! টুপি, দাড়ি, পাঞ্জাবী মানেই সন্দেহ ! মেস, ছাত্রাবাস মানেই জঙ্গির আস্তানা ! বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় মানেই জঙ্গি তৈরীর কারখানা ! বুদ্ধি, প্রযুক্তি ও জ্ঞান গরিমায় শীর্ষ স্থান দখল না করে, আমরা যদি এভাবে জঙ্গিপণাই শীর্ষ স্থান দখল করি তাহলে ইসলাম ধর্মের মতো মহান ধর্মের উপর চুনকালি পড়তেই থাকবে; বন্ধ হবে না। বরং যে যে ভাবে পারবে ইসলাম ধর্মকে নিয়ে কাঁটা ছেড়া করবে এবং ইচ্ছে মতো পোষ্টমর্টেম রিপোর্ট দিতে থাকবে। আজকের বিপথগামীরা বলতে পারবে কী গুলশান শোলাকিয়া হামলার এই কথিত হিরোয়িক এ্যাকশনের বদৌলতে কতজন বিধর্মী ইসলাম গ্রহণ করেছে? ০৫/১০/১০০; নাকি একজনও না? অথচ তাদের ভুলে সমগ্র মুসলিম বিশ্বের অনেক সেরা কণ্ঠস্বর আজ বলি হতে চলেছে। লক্ষ কোটি মুসলিম-অমুসলিমের সেতু বন্ধন “পিস টিভি” বন্ধ হয়ে গেছে। আজ তাদের জন্য লক্ষ কোটি মুসলিম ভাই-বোনদের বিভিন্ন স্থানে সীমাহীন হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। শৃঙ্খলা ফেরাতে শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের দম ফেলার সময় নেই। তবে এ কথা অনুস্বীকার্য যে শুধু বাহিনী দিয়ে সার্বিক শৃঙ্খলার নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব। এ ক্ষেত্রে প্রতিটা বাবা-মা ও অভিভাবকদের নড়ে-চড়ে বসার সময় এসেছে। তাদের রয়েছে অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য।
প্রথমত ঃ শুদ্ধি অভিযানটা পরিবার থেকে শুরু করা উচিত। কারণ প্রবাদে আছে, দদ ঈযধৎরঃু নবমরহং ধঃ যড়সব’’ অর্থাৎ পরিবারই সন্তানের প্রথম ও প্রধান শিক্ষাগৃহ। কিন্তু দুঃখ জনক হলেও একথা সত্য যে, বেশীর ভাগ পরিবারই তাদের দায়িত্ব নিষ্ঠারসাথে পালন করছে না। তারা সন্তানকে খাওয়ানো ও স্কুলে পাঠিয়েই দায়িত্ব শেষ করছে। এক্ষেত্রে পরামর্শ, সন্তানকে পর্যাপ্ত সময়দিন এবং তাদের সঙ্গে মিশুন।
দ্বিতীয়ত ঃ তথ্য প্রযুক্তির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার রোধ করা। এটা যুব-সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। কথায় আছে, “ফুল থেকে মৌমাছি নেয় মধু, মাকড়শা নেয় বিষ”। আমাদের বেশীর ভাগ তরূণেরা সামাজিক যোগযোগের মাধ্যমগুলো থেকে নিচ্ছে বিষ এবং প্রয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে সমাজকেই বেছে নিচ্ছে। কাজেই সন্তান সারাক্ষণ দরজা-জানালা বন্ধ করে কি করছে- তার নজরদারির দায়িত্ব পুলিশের নই; পরিবারের।
তৃতীয়ত ঃ সন্তানদেরকে বইয়ের জগতে ফিরিয়ে আনতে হবে। অল্প বয়স্ক ছেলে-মেয়েদেরকে মোবাইল, ল্যাপটপ কিনে না দিয়ে ভালো ভালো বই উপহার দিন। এবং সেগুলো পড়তে উৎসাহিত করুন। তাদেরকে বোঝান যে, বই-ই মানুষের সর্বোত্তম বন্ধু। উমর খৈয়ম বলেছেন, “ রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলা হয়ে যাবে কিন্তু একটি বই অনন্ত যৌবনা”।
চতুর্থত ঃ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লাইব্রেরীগুলো বাছাইকৃত সেরা বইয়ের দ্বারা সুসজ্জিত করা। সাথে নিরিবিলি মনোরম পরিবেশ বজায় রেখে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সেখানে বসে পড়ার সু- অভ্যাস তৈরী করা। প্রয়োজনে লাইব্রেরী ওয়ার্কটা ক্লাস রুটিনের অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
পঞ্চমত ঃ শিক্ষকেরা জাতি গঠনের কারিগর। তাই জঙ্গি রোধে তাদের ভূমিকা সীমাহীন। এক্ষেত্রে ক্লাসে কিংবা এসেম্বলিতে মাঝে-মাঝেই জঙ্গি বিরোধী কাউন্সিলিং বা আলোচনা করা উচিত। শিক্ষকদের পাশাপাশি  মসজিদের ঈমাম ও মাওলানাদেরকেও  গুরুত্ব দেওয়া দরকার। প্রয়োজনে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদেরকে আরো ধারালো করা প্রয়োজন। কারণ মানুষকে প্রভাবিত করার সাংঘাতিক এক সম্মোহনী শক্তি তাদের রয়েছে। তারা যদি দরদ দিয়ে ইসলামের মূল কথা বয়ান করে, তাহলে মন নরম হবে এবং আসল কাজের কাজটি হয়ে যাবে !
সর্বোপরি, সকল ধর্মের শুদ্ধচর্চাকে ব্যাপকভাবে উৎসাহীত করতে হবে। কারণ অব্যবহৃত পথেই ঘাস জন্মে আর ¯্রােতহীন নদীতে শেওলা। ব্যাপক শুদ্ধ ধর্মচর্চা শুরু হলে অশুদ্ধ জঙ্গিরা পা-রাখার জায়গা পাবে না; পালাতে বাধ্য হবে।
সবশেষে, সকল বাবা-মা ও অভিভাবকদের কাছে আমার ভাঙ্গা-চোরা কাতর গলায় মিনতি, সম্পদের পিছনে বিরামহীন ভাবে না ছুটে সন্তানের পিছনে ছুটুন। তাদের কাছে-কাছে রাখুন, চোখে-চোখে রাখুন। কারণ সন্তানই সম্পদ, সেই সম্পদের যতœ নিন। অন্যথাই, এমনও হতে পারে  আপনার ঘাম ঝরানো টাকায় গড়া সাধের ঘরের  ইট সন্তান  খুলে-খুলে বিক্রী করে খাবে। আপনি তা দেখবেন, আপনার নাকের জল আর চোখের জল সব একাকার হয়ে যাবে; অথচ সেদিন আপনার কিছুই করার থাকবে না।

লেখক ঃ
সিনিয়র লেকচারার, ইংরেজী বিভাগ, ফাস্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, চুয়াডাঙ্গা।
ঊসধরষ ওফ – সৎ.লড়ুংরৎ@মসধরষ.পড়স