ছেঁউড়িয়ার ভাঙলো বাউল সাধুদের মিলনমেলা

 

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে সঙ্গীতের মধ্যদিয়ে সম্পন্ন হয়েছে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় আখড়াবাড়িতে তিন দিনের লালন স্মরণোৎসব। ভেঙে গেলো বাউল সাধু গুরুদের মিলনমেলা। বাউল সাধক সাধু গুরুদের বেশির ভাগই এরই মধ্যে আখড়াবাড়ি ছেড়ে গেছেন। বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১২৬তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে রোববার সন্ধ্যায় এ উৎসবের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বাংলা ১২৯৭ সালের পয়লা কার্তিক সাধক পুরুষ লালন শাহ দেহত্যাগ করেন। এরপর থেকে লালনের অনুসারীরা প্রতি বছর ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে এদিনটি পালন করে আসছেন। তবে লালন একাডেমী প্রতিষ্ঠার পর এ আয়োজনে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও দেশের নানা প্রান্ত থেকে হাজার হাজার বাউল উৎসব শুরুর কয়েক দিন আগে থেকেই জড়ো হয়েছিলেন ছেঁউড়িয়ার লালন ধামে। নির্লোভ, নিরহংকার সহজ সরল এই মানুষগুলো আধুনিক সামাজিক লোকাচারের বাইরে থেকে ঈশ্বরকে পাওয়া আর আত্মশুদ্ধির সাধনা করেন বাউল তীর্থ ছেঁউড়িয়া এসে। ভাবগান আর বাউল আচারের যজ্ঞ পালন ছাড়াও বাউল পথ ও মতের দীক্ষাও নিচ্ছেন অনেকে। স্মরণোৎসব মানেই বাউল ফকিরদের মহাসম্মেলন। এখানে আগত বাউলরা ভাব পরম্পর বিনিময় করেন আপন মনে, নিজস্ব রীতিতে। গুরুবাদী এ ধর্মে বিশ্বাসীদের কাছে গুরুই সব। গুরুর নির্দেশিত পথে সাধন-ভজন এবং রস আস্বাদনের সব পথই উন্মুক্ত। আর এই যজ্ঞ সম্পাদনের মধ্যদিয়েই সীমার মাঝে অসীম খুঁজে ফেরে এই মতে বিশ্বাসীরা।

লালন আখড়াবাড়ি তাদের কাছে পরম ভক্তির তীর্থস্থান। ঢাকা থেকে আসা প্রবীণ বাউল নিজাম শাহ কেবল একতারা বাজিয়ে দরাজ গলায় গাইছেন আর কি হবে এমন মানব জনম, বসবো সাধুর সনে। গান শেষে বিদায় বেলার অনুভূতি জানতে চাইলে নিজাম শাহ বলেন, গুরুর চরণ তলে কটা দিন পড়েছিলাম। এখন বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে, কিন্তু মনতো চাইছে না বাড়ি ফিরতে। আরও কটা দিন থেকে যেতে পারলে ভালো হতো, মনটা কেমন করছে, আর যদি আসতে না পারি কোনো দিন।

দৌলতপুরের প্রবীণ বাউল আসলাম শাহ জানান, এখানে মহাসম্মেলন বসেছিলো। লাখ লাখ লোকের আগমন। এখন বাড়ি ফিরবো। আবার পরবর্তী বছরে আসার নিয়ত রয়েছে। আরেক বাউল ইসলাম শাহ বলেন, বাবা বাড়ি ফিরতে মন চাইছে না, ভাবছি আরও কটা দিন গুরুর ধামে থেকে যাব। মহিলা বাউল আসমা খাতুন জানান, বাড়ি ফিরে যাচ্ছি ঠিকই, মনটা পড়ে রইলো আখড়াবাড়িতে। এখন থেকেই ফাল্গুনের দোল উৎসবের প্রহর গুনতে থাকবো। লালন একাডেমীর সভাপতি কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. জহির রায়হান জানান, শান্তিপূর্ণভাবে তিন দিনের উৎসব শেষ হয়ে গেলো। এবারের উৎসবে কয়েক লাখ বাউল, সাধু আর দর্শনার্থী অংশ নেয়।