ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা জেলা কমিটিকে : মাঠে যাবে ১৪ টিম
স্টফ রিপোর্টার: তৃণমূলের কমিটি পুনর্গঠন করতে গিয়ে ঘাম ঝরছে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। অনেক চেষ্টায় গত দেড় বছরে মাত্র ১৩ জেলায় কমিটি দিতে পেরেছে দলটি। মাঠের নেতৃত্বের নানাবিধ কোন্দল আর জটিল মেরুকরণই সমস্যা। বিএনপির সাংগঠনিক জেলা ৭৫টি। সূত্র জানায়, প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে স্বল্পপরিসরে জেলায় কাউন্সিল বা কর্মিসভা করার পর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ঢাকায় কমিটি ঘোষণা করতে চান।
অবশ্য কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বলছেন, তারা জেলায় কাউন্সিল বা কর্মিসভার মাধ্যমে কমিটি দেয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবেন। এরপর পরিস্থিতি প্রতিকূল হলে ঢাকায় কমিটি ঘোষণা করবেন। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে অন্তত ৩০ জেলায় কমিটি দেয়ার চিন্তা সংশ্লিষ্টদের। এর মধ্যে ঢাকা ও দিনাজপুর জেলা এবং চট্টগ্রাম মহানগরের কমিটিও কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা হয়েছে। জানা যায়, এক নেতার একাধিক পদের কারণে জেলা কমিটি পুনর্গঠন করতে গিয়ে বেশ সমস্যায় পড়েছেন কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। অবশ্য ৬১ জনের মধ্যে ৪৫ জন নেতাই একাধিক পদ ছেড়েছেন। বাকি ১৬ জন এখনো কোনো পদ ছাড়েননি। সবার জন্য নির্ধারিত সময় ছিলো ১৬ অক্টোবর। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট নেতাদের আনুষ্ঠানিক চিঠিও দেয়া হয়। এখন এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন বেগম খালেদা জিয়া। তাদের কেন্দ্রের ইচ্ছা অনুযায়ী একটি পদ দিয়ে চিঠিও দেয়া হতে পারে। এদিকে একাধিক পদ ছাড়ার বড় অংশই কেন্দ্রের দায়িত্ব ছেড়ে জেলায় থাকার কথা জানিয়েছেন। আবার কেউ কেউ কাউন্সিল করে জেলার নেতৃত্ব ছাড়ার কথা বলছেন। এ নিয়েও বিব্রত বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। সম্প্রতি মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ ও শেরপুরের নেতাদের সঙ্গে ঢাকায় বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান। আজ কিশোরগঞ্জ, আগামীকাল টাঙ্গাইল ও ২৪ অক্টোবর মুন্সীগঞ্জ জেলার নেতাদের সঙ্গে তার বৈঠক করার কথা। ঢাকা বিভাগের জেলাগুলো নিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়েই মতবিনিময় করবেন বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এসব বৈঠকে জেলার শীর্ষ পাঁচ নেতা, থানা পর্যায়ের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, বিএনপি সমর্থিত পৌর মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের ডাকা হচ্ছে। মো. শাহজাহান জানান, তৃণমূলের কমিটি করতে সব পক্ষেরই কথা শুনতে হচ্ছে। এজন্য সময় একটু বেশি লাগলেও সবার মতামতের ভিত্তিতেই কমিটি দেয়া হবে। একাধিক পদে থাকা নেতাদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে কেন্দ্রই সিদ্ধান্ত নেবে। জানা যায়, বিএনপির জেলা পর্যায়ে কমিটি নিয়ে নানামুখী সমস্যা নিরসনে শিগগিরই মাঠে যাচ্ছে বিএনপির ১৪টি কেন্দ্রীয় টিম। সম্প্রতি সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পর্যায়ের নেতাদের এক বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ সব জেলা বা মহানগর কমিটি গঠন করতে হবে। বিএনপি সূত্র জানায়, এখনো একাধিক পদে থাকা নেতাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস (ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক), ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু (কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক), আলতাফ হোসেন চৌধুরী (পটুয়াখালী জেলার সভাপতি), যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল (ঢাকা মহানগরের সদস্যসচিব), মজিবর রহমান সরোয়ার (বরিশাল মহানগরের সভাপতি), খায়রুল কবির খোকন (নরসিংদী জেলার সভাপতি), আসলাম চৌধুরী (চট্টগ্রাম উত্তর জেলার আহ্বায়ক), সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু (লালমনিরহাট জেলার সভাপতি), অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু (নাটোর জেলার সভাপতি), ফজলুল হক মিলন (গাজীপুর জেলার সভাপতি), নজরুল ইসলাম মঞ্জু (খুলনা মহানগরের সভাপতি) প্রমুখ। এ প্রসঙ্গে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, দীর্ঘদিন তিনি দেশের বাইরে ছিলেন। তাই চিঠি বিলম্বে পেয়েছেন। দু-এক দিনের মধ্যেই জেলার পদ ছেড়ে কেন্দ্রের পদে থাকবেন তিনি।
১৪ টিমে যারা রয়েছেন : সমস্যাযুক্ত জেলাগুলোতে ১৪টি সাংগঠনিক টিম পাঠাচ্ছে বিএনপি। গতকাল রাতে এই টিমের অনুমোদন দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এই টিমে রয়েছেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ, আবদুল আউয়াল মিন্টু, ব্যারিস্টার আমিনুল হক, শামসুজ্জামান দুদু, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, মজিবর রহমান সরোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবীর খোকন, হারুন অর রশীদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু প্রমুখ।