কুড়িয়ে পাওয়া নবজাতককে নিয়ে শুরু হয়েছে নাটক

 

দামুড়হুদার বাদশার দাবি বিধি মেনেই নিয়েছি নবজাতক

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা স্টেশনের প্লাটফরমে কুড়িয়ে পাওয়া সেই নবজাতককে নিয়ে নাটক শুরু করেছেন সমাজসেবার প্রবেশন অফিসার বশির আহম্মেদ। তিনি জিআরপি চুয়াডাঙ্গা স্টেশন ফাঁড়ি ইনচার্জের নিকট থেকে লিখিতভাবে গ্রহণের পর দামুড়হুদা দশমীর বাদশার হাতে তুলে দিয়েছেন। নিঃসন্তান বাদশা বলেছেন, সকল নিয়ম মেনেই নবজাতককে আমাদের সন্তান হিসেবে গ্রহণ করেছি। অপরদিকে চুয়াডাঙ্গা সমাজসেবার প্রবেশন অফিসার আবুল বাশার বলেছেন, শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ায় দামুড়হুদা দশমীর ডিশব্যবসায়ী বাদশার নিকট সাময়িক জিম্মায় রাখা হয়েছে। ওই নবজাতককে আজ-কালের মধ্যেই খুলনার বেবিহোমে নেয়া হবে।

গত রোববার দুপুর ১২টার দিকে চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনের ১ নং প্লাটফরমের উত্তরপ্রান্তে ডাকঘরের সামনে একটি থলেয়ভরা অবস্থায় উদ্ধার হয় এক দু দিন বয়সী নবজাতককে। থলেয়ভরা নবজাতকের কান্না শুনে কৌতূহলের পর জিআরপি পুলিশ উদ্ধার করে। কান্না থামাতে জিআরপি কনস্টেবল মফিজুর রহমান তার স্ত্রীর কোলে তুলে দেন। তিনি তার বুকের দুধ দিয়ে শান্ত করেন। স্নেহের মায়াজালে জড়িয়ে রাখেন। অপরদিকে নবজাতক উদ্ধারের খবর মাইকিং করা হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে ঢাকা থেকে যেমন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মালিক সস্ত্রীক চুয়াডাঙ্গায় ছুটে আসেন, তেমনই হাজির হন নিঃসন্তান বহু দম্পতি। ফুট ফুটে ওই পুত্র নবজাতককে নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। জিআরপি চুয়াডাঙ্গা স্টেশনের ইনচার্জ সকলকেই সাফ জানিয়ে দেন ঊর্ধতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। তবে আইনের বাইরে যাওয়া চলে না।

নবজাতক উদ্ধারের পরদিন নিজ হেফাজতে নেয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগেন সমাজসেবা অধিদফতরের চুয়াডাঙ্গা প্রবেশন অফিসার বশির আহম্মেদ। তিনি জিআরপির নিকট থেকে লিখিতভাবে নিয়ে দামুড়হুদা দশমীর ডিশক্যাবল ব্যবসায়ী বাদশার হাতে তুলে দেয়ার জন্য তোড়জোড় শুরু করেন। নবজাতককে পেয়ে বাদশা ও তার স্ত্রী বাড়ি ফেরেন। এদিকে খবর রটে সমাজসেবা অফিসের প্রবেশন কর্মকর্তা গোপনে মোটা অংকের অর্থবাণিজ্য করে বাদশার হাতে তুলে দিয়েছেন ফুটফুটে নবজাতক। এ বিষয়ে গতকাল প্রবেশন কর্মকর্তা বশির আহম্মেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নবজাতককে জিআরপির নিকট থেকে নেয়ার পর অসুস্থতার বিষয়টি বুঝে বাদশার নিকট সময়িক জিম্মায় দিয়েছে। চিকিৎসাকেন্দ্রে না নিয়ে অসুস্থ শিশুকে অন্যের জিম্মায় দেয়ার হেতু কি? তাছাড়া উদ্ধারের পর যে মায়ের কোলে দুধপান করছিলো সেখানে সাময়িক রাখলে সমস্যা কি ছিলো? এসব প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, সাময়িক অন্যের জিম্মায় দেয়ার বিধান আছে। এদিকে বাদশা বলেছেন, আমি সকল নিয়ম মেনেই নবজাতককে গ্রহণ করেছি। আমার স্ত্রী সন্তান হিসেবে গ্রহণ করেছে। সময়িক জিম্মার বিষয়টি ঠিক নয়। প্রতিবেশীরা বলেছেন, কয়েক বছর হলো বাদশা বিয়ে করেছে। সন্তান হয় না বলে শুনেছি।

অসুস্থ নবজাতককে নিঃসন্তান দম্পতির নিকট সময়িক জিম্মায় দেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হরে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা সমাজসেবা আব্দুল্লা আল সামী বলেছেন, এক দু দিনের নবজাতকের বিষয়ে জিআরপিই সিদ্ধান্ত নিতে পারতো। তা যখন না করে সমাজসেবার প্রবেশন অফিসারের নিকট হস্তান্তর করেছেন তখন প্রবেশন কর্মকর্তার বিধি মোতাবেক পদক্ষেপ নিতে হতো। তাৎক্ষণিকভাবে বেবিহোমে নিতে সমস্যা হলে হাসপাতালে নেয়ার সুযোগ ছিলো। তা না করে নিঃসন্তান এক দম্পতির হাতে নবজাতককে তুলে দেয়ার হেতু নিয়ে প্রশ্ন ওঠা অমূলক নয়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার দৃষ্টিগোচর করা হবে।

এ বিষয়ে সমাজসেবা অধিদফতর চুয়াডাঙ্গা উপপরিচালক আতিয়ার রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি বিস্তারিত শুনে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, অন্যায় কোনো কাজ বরদাস্ত করা হবে না। অবশ্যই উপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়া হবে।