পাক-ভারত সীমান্তে ফের গোলাগুলি
মাথাভাঙ্গা মনিটর: পাকিস্তান শাসিত কাশ্মিরে ঢুকে ভারতের সেনাবাহিনীর ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ এর পর সীমান্তে উত্তেজনা অব্যাহত রয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই দুই পক্ষের মধ্যে গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটছে। গতকাল শনিবার ভোরেও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের ভিমবার এলাকায় লাইন অব কন্ট্রোল (এলওসি) বা নিয়ন্ত্রণ রেখায় পাকিস্তানি ও ভারতীয় সেনাদের মধ্যে গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। এদিকে, সার্জিক্যাল স্টাইকের প্রতিশোধ হিসেবে পাকিস্তানের হামলার আশঙ্কায় ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কয়েকটি রাজ্যে সতর্কতা জারি করেছে। দিল্লি, রাজস্থান, পাঞ্জাব, জম্মু ও কাশ্মির, মহারাষ্ট্র ও গুজরাট রাজ্যকে সম্ভাব্য হামলার লক্ষ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অন্যদিকে, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান রাহিল শরিফ অবসরের আগে প্রতিশোধ নিতে পারে এমন আশঙ্কায় এবার ভারতীয় সেনাপ্রধান নিজ দেশের যুদ্ধপ্রস্তুতি সম্পর্কে সর্বশেষ খবর নিয়েছেন। সেনাবাহিনীর উত্তরাঞ্চলের কমান্ড (নর্দার্ন কমান্ড) পরিদর্শন করতে গিয়ে তিনি যে সব পদক্ষেপ নিয়েছেন, সেগুলো যুদ্ধের প্রস্তুতিকেই ইঙ্গিত করছে। চলমান উত্তেজনার মধ্যে পাকিস্তানে ভারতীয় সিনেমার প্রদর্শন বন্ধ করা হয়েছে। আর দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে উত্তেজনা নিরসনে মধ্যস্থতা করার আগ্রহ দেখিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন।
নিয়ন্ত্রণ রেখায় আবারো গোলাগুলি: কাশ্মির সীমান্তে ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। প্রতিদিনই দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে গুলির ঘটনা ঘটছে। শনিবার ভোরেও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের ভিমবার এলাকার নিয়ন্ত্রণ রেখায় পাকিস্তানি ও ভারতীয় সেনাদের মধ্যে গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। ডনের এক খবরে বলা হয়েছে বিনা উসকানিতে ভারতীয় বাহিনীর ছোড়া গুলির উপযুক্ত জবাব দিয়েছেন পাকিস্তানি সেনারা। ভিমবার এলাকায় শনিবার ভোর চারটা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত এ গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে, পিটিআই’র খবরে বলা হয়েছে, যুদ্ধ-বিরতির শর্ত লঙ্ঘন করে পাকিস্তানি সেনারা ভারতীয় চৌকি ও বেসামরিক এলাকায় গুলি চালিয়েছে পাকিস্তানি সেনারা। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এদিকে সিএনএন-এর এক খবরে বলা হয়েছে, ভারত কাশ্মির সীমান্ত থেকে ১০ হাজার মানুষ সরিয়েছে। ভারতের জম্মু জেলার ম্যাজিস্ট্রেট সীমরামদীপ সিং এই তথ্য জানিয়েছেন।
পাল্টা হামলার আশঙ্কায় ভারতের উচ্চ সতর্কতা: এদিকে গত বুধবার ভারতের দাবিকৃত সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পর পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিদলের হামলার আশঙ্কায় দিল্লিসহ ভারতের ছয়টি রাজ্যে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। শুক্রবার ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এই সতর্কতা জারি করা হয়। দিল্লি, রাজস্থান, পাঞ্জাব, জম্মু ও কাশ্মির, মহারাষ্ট্র ও গুজরাটকে এ ধরনের হামলার সম্ভাব্য লক্ষ্য বলে মনে করা হচ্ছে। এ সকল রাজ্যের বড় স্থাপনা ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রতিশোধমূলক হামলার আশঙ্কা পুরো অক্টোবর মাস জুড়েই বিরাজ করতে পারে। এ ছাড়াও তাজমহল ও লালকেল্লায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই সন্ত্রাসীদের এই হামলার দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকতে পারে।
অবসরের আগে হামলা চালাবেন পাক সেনাপ্রধান: পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের প্রতিশোধ নিতে পাল্টা হামলা চালাতে পারেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান রাহিল শরিফ। তিনি চলতি বছরের নভেম্বরে অবসরে যাচ্ছেন। আশঙ্কা করা হচ্ছে, অবসরে যাওয়ার আগেই কঠোর নীতির বাস্তবায়ন ও প্রতিশোধ নিতে ঝাঁপিয়ে পড়বেন তিনি। ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ভারতের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর পাকিস্তানি সেনাদের কড়া নজরদারি নিয়ে শুক্রবার সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন রাহিল শরিফ। তিনি বলেন, শত্রুদের সব রকম আঘাতের কঠোর জবাব দেবে পাকিস্তান। কোনও বিদ্বেষমূলক প্রচারণা চালিয়ে পাকিস্তানকে দমিয়ে রাখা যাবে না। এদিকে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল সোমবার দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্যে আহ্বান করেছেন।
সীমান্তে যুদ্ধ প্রস্তুতি দেখলেন ভারতীয় সেনাপ্রধান: ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধানও নিজেদের প্রস্তুতি পর্যালোচনা করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে অংশ নেয়া ভারতীয় সেনাদের সাথে গতকাল শনিবার সেনাপ্রধান জেনারেল দলবীর সিং মতবিনিময় করেন। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, সেনাপ্রধান নর্দার্ন কমান্ডকে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ সফলভাবে পরিচালনার জন্য অভিনন্দন জানান এবং অভিযানে অংশ নেয়া কমান্ডোদের ভূয়সী প্রশংসা করেন। নর্দার্ন কমান্ডের পর সেনাপ্রধান ওয়েস্টার্ন কমান্ডও পরিদর্শন করবেন। সেনাবাহিনীর পাকিস্তান সংলগ্ন এ কমান্ডগুলো জেনারেল সিংয়ের পরিদর্শনে সর্বোচ্চ সামরিক প্রস্তুতিরই জানান দিচ্ছে।
পাকিস্তানে ভারতীয় সিনেমা প্রদর্শনী বন্ধ: ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনার প্রভাব পড়েছে দুই দেশের বিনোদন জগতেও। কিছুদিন আগে ভারত থেকে পাকিস্তানি তারকাদের ফেরত পাঠানোর কথা বলেছিলো ভারত। এবার পাকিস্তানে ভারতীয় চলচ্চিত্র প্রদর্শনী বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে দেশটির হল মালিকরা। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে কোনও ভারতীয় সিনেমা প্রদর্শন করা হবে না, এমন ঘোষণা দিয়েছে সেদেশের সিনেমার পরিবেশকরা। এমন সিদ্ধান্তে ভারতীয় সিনেমা প্রদর্শন বন্ধ হয়েছে দেশটির লাহোর করাচী ও ইসলামাবাদের সিনেমা হলগুলোতে। এদিকে, পাকিস্তানে সব ভারতীয় টিভি চ্যানেল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাকিস্তান ইলেকট্রনিক মিডিয়া রেগুলেটরি অথরিটির (পিইএমআরএ) এই নিষেধাজ্ঞা ১৫ অক্টোবরের পর থেকে কার্যকর হবে। অন্যদিকে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলাচলকারী বাসসেবা ‘দোস্তি’ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শুক্রবার পাকিস্তানের লাহোর ও ভারতের অমৃতসরের মধ্যে চলাচলকারী এই সার্ভিসটি বন্ধ ঘোষণা করে ভারত। শহর দুটির মধ্যে প্রতি মঙ্গলবার ও শুক্রবার এই বাস চলাচল করত।
উত্তেজনা নিরসনে মধ্যস্থতায় আগ্রহী জাতিসংঘ মহাসচিব: পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ভারতের সেনাবাহিনীর সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পর পাকিস্তান যেকোনো মুহূর্তে প্রতিশোধমূলক হামলা চালাতে পারে এমন আশঙ্কা করছে ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশ। এমন পরিস্থিতিতে দুই দেশকে আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা নিরসনের আহ্বান জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীনসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন নিজেই দুই দেশের মধ্যে আলোচনায় মধ্যস্থতা করার আগ্রহ দেখিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত ব্যক্তিগতভাবে তার সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানানোর পর শুক্রবার এ কথা জানান মুন। বান কি মুন বলেন, এ বিষয়ে উভয় পক্ষেরই সর্বোচ্চ সংযম দেখাতে হবে এবং পরিস্থিতির উন্নতিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তার মুখপাত্র এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছেন।