সড়ক সংস্কার না হওয়ায় গাংনীর মাছ গ্রামে মাছ চাষে স্থবিরতা

 

মাজেদুল হক মানিক: সড়ক সংস্কার না হওয়ায় মেহেরপুরের ষোলটাকা ও জোড়পুকুরিয়া গ্রামসহ আশপাশের মানুষ চরম দুর্বিষহ জীবন-যাপন করছেন। মাছ ও মাছের খাদ্য পরিবহনে স্থবিরতা নেমে এসেছে। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে মৎস্যচাষ। জেলার মাছ গ্রাম হিসেবে পরিচিত ষোলটাকা গ্রামের চাষিদের আয়-রোজগারেও ভাটা পড়েছে।

মেহেরপুর জেলায় পাঙ্গাস ও মনোসেক্স তেলাপিয়া চাষে এক বিপ্লব এনে দিয়েছেন ষোলটাকাসহ আশপাশের গ্রামের মাছ চাষীরা। ষোলটাকা, জোড়পুকুরিয়া, জুগিরগোফা, বানিয়াপুকুরসহ আশেপাশের কয়েকটি গ্রামে হাজার হাজার একর জলকরে মাছ চাষ করা হচ্ছে। এদের সফলতায় এখন জেলার প্রতিটি গ্রামে মাছচাষ শুরু হয়েছে। সবজির পাশাপাশি মৎস্যচাষেও জেলার অর্থনীতি সমৃদ্ধ হচ্ছে। এ এগুলোর চাষিদের প্রধান আয়ের উৎস এখন মাছচাষ। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা এ গ্রামগুলোতে মাছ ও মাছের খাবার পরিবহনের কাজ চলে। ট্রাক, পিকআপসহ স্থানীয় যানবাহনযোগে রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মাছ সরবরাহ করা হয়। কিন্তু জোড়পুকুরিয়া থেকে সহড়াবাড়িয়া গ্রামের সড়কসহ আশপাশের সড়কগুলো এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় পাকা সড়কের মাঝে মাঝে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। পিচ-পাথর উঠে গিয়ে বর্ষার বৃষ্টির দাপটে আরো বেশি খানা-খন্দে ভরে যাচ্ছে। এতে যানবাহন চলাচলে হিমশিম খাচ্ছে। জোড়পুকুরিয়া গ্রামে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় রাস্তার ওপরেই জমেছে হাঁটু পানি। শুধু মাছ পরিবহনের ক্ষেত্রে নয় এ অঞ্চলে বেশ কিছু রাইচ মিলের ধান-চাল বহনও দুষ্কর হয়ে পড়েছে। সময়মতো মাছ বিক্রি ও খাবার পৌঁছুতে না পেরে মাছ চাষে এক প্রকার স্থবিরতা নেমে এসেছে। ট্রাকসহ বড় যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। ফলে ছোট ছোট যানে মাছ, মাছের পোনা ও মাছের খাবার পরিবহন করতে গিয়ে বাড়তি টাকাও গুনতে হচ্ছে অসহায় মাছ চাষিদের।

জেলার সেরা মৎস্যচাষি পুরস্কারে ভূষিত ষোলটাকা গ্রামের প্রভাষক আরিফুল ইসলাম জানান, জেলার আধুনিক মাছ চাষের সম্প্রসারণ ঘটাচ্ছেন ষোলটাকা গ্রামের চাষিরা। মাছ চাষ করে অনেকেই এখন লাখপতি। দরিদ্রতা ঘুচিয়ে সাফল্যর এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। জেলায় মাছের চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন এখানকার মাছচাষিরা। এমতাবস্থায় সড়ক মাছ পরিবহনের উপযুক্ত করার জন্য সরকারের বিশেষ দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। প্রয়োজন অনুযায়ী সড়কের পাশে ড্রেন তৈরি করতে হবে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে বারবার ধরনা দিয়েও হতাশা ছাড়া আশার আলো মিলছে না।

এদিকে শুধু মাছ চাষ নয়, এ অঞ্চলে ২০টির ওপরে রাইচ মিলের পাশাপাশি মাছের খবার তৈরির অটো মিল রয়েছে। এর উপকরণ পরিবহনেও সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে সময়মতো খাবার ও উপকরণ গন্তব্যে পৌঁছুতে বিঘ্ন ঘটছে। তাছাড়া দৈনন্দিন  চলাচলেও চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এলাকার কয়েক হাজার মানুষ।

তবে রাস্তার পাশে পুকুর খনন থেকে বিরত থাকতে চাষিদের আহ্বান জানিয়ে দ্রুত রাস্তা সংস্কারের আশ্বাস দিলেন গাংনী উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী এএইচএম রবিউল আওয়াল রিজভী। তিনি বলেন, জোড়পুকুরিয়া-সহড়াবাড়িয়া সড়ক সংস্কারের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে জেলা কার্যালয়ে সুপারিশ করা হয়েছে।