স্থাপনা নির্মাণে পৌর বিধি ও ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্ষতিপুরণ

 

চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার একটি মহল্লার নাম ফার্মপাড়া। এ পাড়ার নির্মাণাধীন একটি বাড়ির প্রধান ফটকের ছাদ ধসে পড়ে নির্মাণ কাজে নিয়োজিত একজন নিহত হয়েছেন। গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় এ বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদেন বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। নির্মাণ কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি নিহত হওয়ার পর যে দুটি প্রশ্ন সঙ্গত কারণেই দানা বাঁধে তা হলো- যে বাড়ির মূল দরজার ওপর ছাদ নির্মাণ করা হচ্ছিলো তা কি পৌরসভা কর্তৃক অনুমোদিত? নিহত মিস্ত্রির পরিবারকে কি প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে?

তিনি দিনমজুরই হোন, আর চুক্তিভিত্তিক রাজমিস্ত্রি বা জোগাড়দারই হোক। কাজ করার সময় ক্ষতিগ্রস্ত হলে মালিকপক্ষ ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য। ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার আমাদের দেশে আইনসিদ্ধ। যদিও অসচেতনতার কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত বা তার পরিবার যথাযথ ক্ষতিপূরণ পান না। কিছু ক্ষেত্রে মালিকপক্ষকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের হাতে ঘটা করে যতসামান্য অনুদান প্রদানের দৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। ভাবটা এমন যে, তিনি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে দয়া করলেন। প্রকৃত পক্ষে দয়া নয়, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ন্যায্য দাবিদার। এ দাবি আদায়ের জন্য দেশে শ্রম আইন ও আলাদা আদালতও রয়েছে। যদিও আমাদের সমাজের অনেকেই আছেন যারা আইন আদালতে আগ্রহী নন। দিনের পর দিন ঘুরতে হয় ভেবেও কেউ কেউ ও পাথে হাঁটতে চান না। যদিও অঞ্চলভিত্তিক শ্রম আদালতে অতো মামলার চাপ না থাকায় বিচারে বিলম্ব হওয়ার উদাহরণ নেই। সমস্যা যেটা, সেটা হলো অধিকার বা প্রাপ্য আদায়ে অসচেতনতা আর আদালত বাড়ির কাছে না হয়ে বিভাগীয় শহরে হওয়ায়। এছাড়া কাজে নিরাপত্তার বিষয়টি না দেখার রেওয়াজটাও ক্ষতির অন্যতম কারণ।

অবশ্যই পৌরসভাভুক্ত এলাকায় স্থাপনা নির্মাণ করতে হলে তার পূর্ণাঙ্গ নকশা অনুমোদন করতে হয়। নকশায় ত্রুটি থাকলে তা ধসে যেমন স্থাপনার মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হন, তেমনই ক্ষতির শিকার হতে পারেন অন্যরাও। নকশা অনুমোদনের সময় রাস্তার বিষয়টিও দেখা হয়। যদিও ভোট হারানোর ভয়ে জনপ্রতিনিধিদের প্রায় সকলে নিয়ম মানার বাধ্যবাধকতার বদলে নমনীয় দৃষ্টিতে দেখেন। যার খেসারত পৌর নাগরিকদের তথা সমাজকে দিতে হয়। নকশা অনুমোদন ছাড়াই হরহামেশা পাঁচিলসহ ভবন নির্মাণ করা হয়। আবার রাস্তা-পয়নিষ্কাশনের জায়গা না রেখে প্রস্তাবিত নকশাও দিব্যি অনুমোদনের নজির মূলত জনপ্রতিনিধিদের নমনীয়তার কারণেই। ফলে জরুরি প্রয়োজনে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের গাড়ি তো দূরের কথা অ্যাম্বুলেন্সও বাড়ির দরজা পর্যন্ত পৌঁছুতে পারে না। এই যখন বাস্তব অবস্থা, তখন বাড়ির সদর দরজার ওপরের ছাদ নির্মাণের জন্য নকশা প্রস্তুতসহ অনুমোদনের প্রয়োজনীয়তা ক’জনই আর উপলব্ধি করেন? চুয়াডাঙ্গা ফার্মপাড়ার যে বাড়ির সদর দরজার ওপর নির্মাণাধীন ছাদ ধসে পড়ে নির্মাণ কাজে নিয়োজিত মিস্ত্রির মৃত্যু হয়েছে তার নকশা কি অনুমোদিত?

অনুমোদন ছাড়া বাড়ির সদর দরজা, দরজার ছাদ নির্মাণ হলো কীভাবে? অনুমোদিত হলেও নির্মাণ কাজ সঠিকভাবে হচ্ছে কি-না তা কি দেখা হয়েছে? কতোটুকু সিমেন্ট বালি রড দিয়ে তথা অনুমোদিত নকশা মোতাবেক কাজ করা হচ্ছে কি-না তা দেখারও দায়িত্ব পৌরসভার সংশ্লিষ্ট বিভাগের। এসব দায়িত্ববোধ যেমন জাগাতে হবে, তেমনই কাজ করতে গিয়ে শারীরিক ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্ষতিগ্রস্তকে, প্রাণ হারালে তার পরিবাকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। দরকার সচেতনতার আলো ছড়ানোর কর্মসূচি।