ইয়াবা তৈরি হচ্ছে সীমান্তের বন্ধ ফেনসিডিল কারখানায়

 

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশের বহুমুখী তত্পরতার ফলে ভারত থেকে ফেনসিডিল আসা অনেকাংশেই কমে গেছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের তালিকা ধরে সীমান্তের কাছে থাকা ফেনসিডিল কারখানার অনেকগুলোই বন্ধ করে দিয়েছে ভারত সরকার। কিন্তু নতুন করে ঝামেলার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ওইসব বন্ধ কারখানা। সেখানে এখন তৈরি হচ্ছে ইয়াবা আর সেগুলো খুব সহজেই ঢুকে পড়ছে বাংলাদেশে। ইয়াবার ব্যাপারে সীমান্তরক্ষীদের নজর এতদিন মিয়ানমারের দিকেই ছিলো। হঠাত করেই ভারত থেকে ইয়াবা পাচার হয়ে আসার বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সীমান্তের ওপারে ভারতে ৩শ ফেনসিডিলের কারখানা ছিলো। আমরা তাদের তালিকা দিয়েছিলাম। ভারত সরকার আন্তরিকভাবেই ওই কারখানাগুলোর অধিকাংশ বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু নতুন করে দেখা যাচ্ছে ওই সব ফেনসিডিল কারখানায় তৈরি হচ্ছে ইয়াবা। যেটা বাংলাদেশে ঢুকছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করা ভারতের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একজন পদস্থ কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। তিনি বিষয়টি আন্তরিকতার সাথে দেখবেন বলে জানিয়েছেন।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন) সৈয়দ তৌফিক উদ্দিন আহমেদ ইত্তেফাককে বলেন, ‘সম্প্রতি ভারতের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালকের সাথে আমাদের মহাপরিচালকের বৈঠক হয়েছে। সেখানে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তিনি এগুলো বন্ধে আশ্বাস দিয়েছেন। এছাড়া মিয়ানমানের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালকের সঙ্গে এই বিষয়ে বৈঠক হয়েছে। তিনিও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সেখানে ইয়াবার কারখানা বন্ধ করবেন। আমরা তাদের তালিকা দিয়েছি। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’

সম্প্রতি একজন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতারের পর ভারত থেকে ইয়াবা পাচারের বিষয়টি নজরে আসে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কর্মকর্তারাও বিষয়টি স্বীকার করেছেন। কিভাবে বন্ধ করা যায় এই ইয়াবা সবাই এখন সেই চেষ্টা করছেন।   সমপ্রতি যশোর ও সাতক্ষীরা সীমান্তে ধরা পড়ে বেশ কয়েকটি ভারতীয় ইয়াবার চালান। এর আকার ও রং মিয়ানমানের ইয়াবার চেয়ে আলাদা। ভারত থেকে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্ত দিয়ে আসছে গাঁজা, ফেনসিডিল ও বিভিন্ন ধরনের নেশা জাতীয় ইনজেকশন। মাদক ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে ফেনসিডিলের পাশাপাশি ইয়াবা নিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে। এ ইয়াবা বিজিবির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রবেশ করছে। এ পর্যন্ত একাধিকবার বেনাপোল সীমান্তে ভারত থেকে আসা ইয়াবার চালান ধরা পড়েছে। ভারতের ইয়াবা ব্যবসায়িরা মিয়ানমার থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে এসেছে বলেও জানিয়েছে গ্রেফতার মাদক ব্যবসায়ীরা।

বিজিবির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল রিজিওন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খলিল রহমান সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বলেন, ইয়াবার অধিকাংশ চালান দেশে আসছে মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে। তবে কুষ্টিয়া, বেনাপোল সীমান্ত দিয়েও ইয়াবা বাংলাদেশে আসছে। মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবা আর ভারত থেকে আসা ইয়াবার আকার, রং এক নয়। নামও ভিন্ন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভারতের উত্তর-২৪ পরগনার ৫টি কারখানায় ইয়াবা তৈরি হয়। মাদক চোরাকারবারিরা টাকার লোভ দেখিয়ে সীমান্ত এলাকার গ্রামের লোকজনকে ইয়াবা পাচারের কাজে ব্যবহার করছে। ভারতীয় ইয়াবার ব্র্যান্ড চারটি জিরো জিরো সেভেন, চম্পা, ডব্লিউওয়াই এবং নীলা। গোলাপি রংয়ের জিরো জিরো সেভেন প্রতি পিস বাংলাদেশে বিক্রি হয় ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়। চম্পার রং গাঢ় গোলাপি। প্রতি পিসের দাম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। ডব্লিউওয়াই নাম ইয়াবার দাম প্রতি পিস ৭০ থেকে ৮০ টাকা। তবে নীলা ব্র্যান্ডের ইয়াবা আগামী মাস থেকে পাওয়া যাবে বলে আটক মাদক ব্যবসায়ীরা জানিয়েছে। এগুলো দামও বেশি বলে জানা গেছে।  চলতি বছরের গত ৯ মাসে প্রায় ৪২ লাখ ৮০ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে। তার আগে ওই সীমান্তে ২০১৫ সালে ৫২ লাখ ১২ হাজার ৮৫৭ পিস, ২০১৪ সালে ২৫ লাখ ৩৫ হাজার ৭১৮,  ২০১৩ সালে ১০ লাখ ৮২ হাজার ৫৪৮, ২০১১ সালে ৪ লাখ ৩৭ হাজার ৯৯১, ২০১০ সালে ৭ লাখ ৭০ হাজার ৬৪১ পিস ইয়াবা জব্দ করেছে বিজিবি। সমপ্রতি ওই সীমান্ত এলাকা ছাড়াও বেনাপোল ও ভারতের অন্যান্য সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা পাচারের কথা জানিয়েছে বিজিবি।