স্টাফ রিপোর্টার: জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ ওয়ার্ডভিত্তিক হলেও ভোটকেন্দ্র ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে থাকছে না। জেলা সদরে সব উপজেলার জন্য একটি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করতে চাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে করে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ভোটারদের জেলা শহরে গিয়ে ভোট দিতে হবে। যদিও খসড়া বিধিমালায় জেলা সদরের বাইরেও একাধিক ভোটকেন্দ্র স্থাপনের সুযোগ রাখা হয়েছে। কিন্তু সেটিও নির্ভর করবে ইসির ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর। এছাড়া জেলা পরিষদ নির্বাচন পরোক্ষ ভোটে (নির্বাচকমণ্ডলী) হলেও আচরণবিধি প্রস্তুত করা হয়েছে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের আদলে। অর্থাত জনগণের সরাসরি ভোটে যেভাবে সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা, ইউপি নির্বাচনে প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা চালাতেন, পরোক্ষ নির্বাচনেও সেই একই ধরনের সুযোগ রাখা হয়েছে। খসড়া বিধিমালায় দেয়া হয়েছে মাইক ব্যবহার ও পথসভা করার সুযোগ। পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার ইত্যাদিও জেলার সর্বত্র লাগানোর সুযোগ পাচ্ছেন প্রার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের আনুষ্ঠানিক বৈঠকে জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে প্রণীত (আচরণ বিধিমালা ও নির্বাচন বিধিমালা) দুটি বিধিমালার খসড়া চূড়ান্ত করে উপস্থাপন করা হবে।
গত পাঁচ সেপ্টেম্বর পরোক্ষ ভোটের বিধান এবং চেয়ারম্যানকে বরখাস্ত করার এখতিয়ার সরকারের কর্তৃত্বে রেখে সংশোধিত জেলা পরিষদ অধ্যাদেশ জারি হয়। এই অধ্যাদেশের কপি নির্বাচন কমিশনের হাতে আসার পর কমিশন সচিবালয় বিধিমালা দুটির খসড়া প্রণয়ন করে। জেলা পরিষদ নির্বাচনের জন্য প্রত্যেক জেলাকে ১৫টি ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হয়েছে। এই ১৫টি ওয়ার্ড থেকে ১৫ জন সদস্য নির্বাচিত হবে। এই ১৫টি ওয়ার্ডকে পাঁচটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হয়েছে। নারী-পুরুষ সদস্য মিলিয়ে এসব ওয়ার্ড থেকে মোট ২০ সদস্য ও একজন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। এর মধ্যে ২০ জন সদস্য নির্বাচনের জন্য কোনো উপজেলায় এক বা একাধিক ওয়ার্ড করা হয়েছে। অতীতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোট গ্রহণ স্ব স্ব ওয়ার্ডের সীমানার মধ্যে অনুষ্ঠিত হলেও এবার জেলা সদরে যে কোনো একটি স্থানে সকল ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্র স্থাপন করতে চাচ্ছে কমিশন। শুধুমাত্র জেলা সদরের একটি স্থানে ভোটকেন্দ্র হলে ভোটারদের ভোগান্তিতে ফেলবে এবং নির্বাচনেও প্রভাব বিস্তারের শঙ্কা থাকবে।
স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী সব প্রার্থীই থাকছেন ‘স্বতন্ত্র’। সংশোধিত জেলা পরিষদের আইনে দলীয় মনোনয়নের সুযোগ নেই। নির্দলীয় প্রতীকে হবে নির্বাচন। আগামী ডিসেম্বরে স্কুল ও কলেজের সমাপনী পরীক্ষার পর এ নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হবে। অনেকটা উপজেলা পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য নির্বাচনের আদলেই এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
নির্বাচন আয়োজনে জেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬ এর যে খসড়া করা হয়েছে তাতে স্থানীয় সরকারের অন্য সংস্থার প্রত্যক্ষ ভোটের জন্য তৈরিকৃত বিধিমালার অনুকরণ করা হয়েছে। পরোক্ষ ভোটের জেলা পরিষদের নির্বাচনে প্রার্থীদের পথসভা করার ন্যূনতম সুযোগ না থাকলেও আচরণ বিধিমালায় রাখা হয়েছে। জনগণের সরাসরি ভোটে নয়, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা থাকবেন ভোটার। ফলে জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে পথসভা করার সুযোগ মিলবে না। একটি ইউপি বা পৌরসভায় ১৩ জন ভোটারের জন্য পথসভা বা মাইকিংয়ের প্রয়োজনীয়তা না থাকলেও বিধিমালায় রাখা হয়েছে। আর নির্বাচনী প্রচারে রাষ্ট্রের অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির পাশাপাশি সরকারি সুবিধাভোগীরা অংশ নিতে পারবেন না।
নতুন নির্বাচন পরিচালনা বিধি অনুযায়ী, জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে একজন প্রার্থী ৫ লাখ টাকার বেশি ব্যয় করতে পারবেন না। ব্যক্তিগত খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা খরচ করা যাবে। ব্যক্তিগত খরচ ১০ হাজার টাকা। জামানত হিসেবে চেয়ারম্যান পদে ৫০ হাজার এবং সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্বাচনের উদ্দেশে সংশ্লিষ্ট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট জেলার অন্তর্ভুক্ত সিটি করপোরেশনের (যদি থাকে), মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করে ওয়ার্ড ভিত্তিক ভোটার তালিকা প্রণয়ন করবেন। আর নির্বাচনে দুইজন প্রার্থী সমান অর্থাত সমভোট পেলে পুনঃভোট হবে না। নির্বাচন কমিশন (ইসি) লটারির মাধ্যমে বিজয়ীকে বেছে নেবে।
নির্বাচনে ভোটার হবেন যারা: স্থানীয় সরকারের চারটি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬৭ হাজার নির্বাচিত প্রতিনিধি এই নির্বাচনে ভোট দেবেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদে। দেশে বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদের সংখ্যা ৪ হাজার ৫৭১টি। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে গড়ে ১৩ জন করে প্রায় ৬০ হাজারের মতো নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছে। এভাবে ৪৮৮টি উপজেলা পরিষদে প্রায় দেড় হাজার, ৩২০টি পৌরসভায় সাড়ে পাঁচ হাজার এবং ১১টি সিটি করপোরেশনে প্রায় সাড়ে ৫০০ নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছেন। প্রত্যেক জেলার অন্তর্ভুক্ত সিটি করপোরেশনের (যদি থাকে) মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিল ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিল এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের সদস্যদের নিয়ে এই নির্বাচক মণ্ডলী হবে।