আদালতের অনুমতি ছাড়াই অর্থদণ্ড পরিশোধ করতে পারবেন বন্দিরা

 

 

 

কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দিদের সহজে অর্থ দণ্ড প্রদানের লক্ষ্যে নির্দেশনা জারি করেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী দণ্ডপ্রাপ্ত বন্দিদের স্বজনরা বিচারিক আদালতের অনুমতি ছাড়াই সংশ্লিষ্ট জেলার ব্যাংকে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে অর্থ দণ্ড পরিশোধ করতে পারবেন। অর্থ দণ্ড পরিশোধের পর সংশ্লিষ্ট চালানের কপি সরাসরি কারা কর্তৃপক্ষের নিকট দাখিল করবে। কারা কর্তৃপক্ষ অর্থদণ্ড পরিশোধের বিষয়টি যাচাই-বাছাই শেষে বন্দিকে মুক্তি দেবেন এবং বিষয়টি বিচারিক আদালতকে অবহিত করবেন।

 

মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেছে। এ প্রসঙ্গে হাইকোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) সাব্বির ফয়েজ ইত্তেফাককে বলেন, দণ্ডপ্রাপ্ত বন্দিদের জরিমানা প্রদানের বিষয়টি সহজ করতেই এই সার্কুলার জারি করা হয়েছে। এর ফলে বন্দিদের স্বজনরা খুব সহজেই দ্রুত অর্থদণ্ড পরিশোধ করে কারামুক্তি লাভ করতে পারবেন।

 

ফৌজদারি মামলায় বিচারিক আদালত দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে সাজা প্রদানের পাশাপাশি অনেক সময় অর্থ দণ্ড আরোপ করে থাকে। ওই অর্থ দণ্ড পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে আদালত আসামিকে অনাদায়ে এক বছর, ছয় বা এক মাস অথবা স্বল্প মেয়াদে বিভিন্ন দণ্ড দিয়ে থাকে। ওই দণ্ড ভোগের পরেই আসামি কারামুক্তি পেয়ে থাকেন। কিন্তু অর্থদণ্ড পরিশোধ করতে পারলে আসামিকে অনাদায়ের দণ্ড ভোগ করতে হয় না। এ কারণে মূলদণ্ড ভোগের শেষ মুহূর্তে এসে তা পরিশোধ করে থাকেন আসামির স্বজনরা। এজন্য কারা কর্তৃপক্ষ দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির স্বজনদেরকে বিচারিক আদালতে পাঠিয়ে থাকেন। কারণ জরিমানা আদায় সংক্রান্ত কারাবিধির ৫৩৩ ধারায় বলা আছে, ‘কারা তত্ত্বাবধায়ক অথবা কারা পরিদর্শক জরিমানার অর্থ গ্রহণ করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে কারা কর্তৃপক্ষ জরিমানা প্রদানের জন্য কারাবন্দির প্রতিনিধি বা আত্মীয়স্বজনকে জরিমানার নির্দেশ প্রদানকারী আদালতে পাঠাবেন।’

 

এর ফলে বন্দিদের স্বজনদেরকে বিচারিক আদালতের অনুমতি নিয়ে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে অর্থদণ্ড পরিশোধ করতে হত। যার ফলে স্বজনদেরকে অনেক সময় ভোগান্তিতে পড়তে হত।

 

গত জুলাই মাসে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার পরিদর্শনকালে জরিমানা আদায়ের এই পদ্ধতি সহজ করার জন্য প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার কাছে অনুরোধ করেন আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখারউদ্দিন আহমদ। পরে প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্ট বরাবর এ বিষয়ে চিঠি লেখার জন্য আইজি প্রিজনকে পরামর্শ দেন। সেই পরামর্শ মোতাবেক কারা কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর একটি চিঠি লেখেন।

 

ওই চিঠিতে বলা হয়, ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও বন্দিরা অনেক সময় জরিমানার অর্থ পরিশোধ করতে না পেরে কারাদণ্ড ভোগ করেন। এতে কারাবাস দীর্ঘায়িত হয়। এর ফলে কারাগারের জায়গা খালি হতে সময় লাগে এবং সরকারেরও ব্যয় বাড়ে। এরপরই প্রধান বিচারপতি হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার আবু সৈয়দ দিলজার হোসেনকে সভাপতি করে ৫ সদস্যের একটি কমিটি করে দেন। ওই কমিটি প্রচলিত বিধানের পরিবর্তে জরিমানা প্রদানের বিষয়টি কিভাবে আরো সহজ করা যায় তার সুপারিশ করেন। ওই সুপারিশ গত ৭ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ফুল কোর্ট সভায় বিস্তারিত পর্যালোচনা শেষে অনুমোদন দেয়া হয়। এরপরই গতকাল এ বিষয়ে সার্কুলার জারি করে সুপ্রিম কোর্ট।