দামুড়হুদায় কৃষি অফিসের সহযোগিতায় গড়ে উঠেছে বেশকিছু মাল্টা বাগান : দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানির সম্ভবনা

 

বখতিয়ার হোসেন বকুল: চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় গড়ে তোলা হয়েছে বেশকিছু মাল্টা বাগান। ঝুকিপূর্ণ হলেও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সার্বিক সহযোগিতায় ২য় শস্য বহুমুখীকরণ প্রকল্পের আওতায় গড়ে ওঠা ওই সমস্ত মাল্টা বাগানকে ঘিরে চাষিদের মাঝে দেখা দিয়েছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা। ইতোমধ্যেই এলাকার বেশকিছু যুবকও মাল্টা চাষে উৎসাহিত হয়ে উঠেছেন। অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য ছুটছেন বিভিন্ন বাগান দেখতে। বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ হামিদুর রহমান মাল্টা বাগান পরিদর্শনকালে বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলার মাটি আম, লিচুর পাশাপাশি মাল্টা চাষের জন্য যথেষ্ট উপযোগী। ফলে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে পারলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে মাল্টা বিদেশে রফতানি করা সম্ভব বলেও জানিয়েছেন তিনি।

দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২য় শস্য বহুমুখীকরণ প্রকল্পের আওতায় এ উপজেলায় গত ৩ বছরে পর্যায়ক্রমে মোট ১৪ টি মাল্টা বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। এরমধ্যে উপজেলার পারকৃষ্ণপুর ব্লকে ৫, হাউলী ইউনিয়নে জয়রামপুর ব্লকে ১, নতিপোতা ব্লকে ২, জুড়ানপুর ইউনিয়নে লক্ষীপুর ব্লকে ১, কুড়ুলগাছি ব্লকে ১, দর্শনা পৌর এলাকায় ১, কার্পাসডাঙ্গা ব্লকে ১ এবং দামুড়হুদা সদরের গোবিন্দহুদা ও চিৎলা ব্লকে গড়ে তোলা হয়েছে ২টি বারী-১ জাতের মাল্টা বাগান। এরমধ্যে ভগিরথপুরের আব্দুর রহমানের ছেলে সাখাওয়াত হোসেনের মাল্টা বাগান সবচেয়ে বড়। তিনি পর্যায়ক্রমে প্রায় ৩০ বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন বারী-১ জাতের মাল্টা বাগান।

মাল্টাচাষি উপজেলার নতিপোতা ইউনিয়নের ভগিরথপুরের সাখাওয়াত হোসেন বাবলু জানিয়েছেন, তিনি খুলনার পরমানু চিকিৎসা কেন্দ্রে চাকরি করাকালীন খুলনা কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউটে বেড়াতে গিয়ে প্রথম মাল্টা গাছ দেখেন। ২০১৩ সালে ওখান থেকে দুই হাজার টাকায় ২০টি বারী মাল্টা-১ জাতের চারা ক্রয় করেন। ওই চারা প্রথমে হেমায়েতপুর মাঠে ১৪ কাঠা জমিতে রোপণ করেন। গাছ লাগানোর এক বছর পর ওই ২০টি গাছ থেকে কলম করে চারা তৈরি করেন। এরপর নিজ গ্রামের মাঠে প্রায় ২৯ বিঘা জমি লিজ নিয়ে পর্যায়ক্রমে চারা রোপন করেন। বর্তমানে ওই ২৯ বিঘা জমিতে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার চারা রোপণ করেছেন। উচুঁ জমিতে মাল্টার চারা রোপণ করতে হয়। বাগানে রাসায়নিক সারের চেয়ে জৈব সার ব্যবহার করায় উত্তম। ৫-৬ হাত দূরুত্বে চারা রোপণ করতে হয়। প্রতিটি গাছে বছরে কী পরিমাণ ফল ধরতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু আমি এই প্রথম মাল্টা চাষ করছি। তবে খুলনা কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. প্রশান্ত কুমার সরকার বলেছেন প্রতিটি গাছ থেকে বছরে গড়ে ৩ থেকে ৪শ টি মাল্টা পাওয়া যাবে। সাড়ে ৩ হাজার গাছ থেকে প্রতি মরসুমে প্রায় দেড় থেকে দু কোটি টাকার মালটা বিক্রি হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি আরও বলেন, গাছ লাগানো শেষ করতে এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। বর্তমানে গাছের পরিচর্য়াসহ ফল আহরণ করতে প্রচুর টাকার প্রয়োজন। তিনি সরকারিভাবে আর্থিক সহায়তা পেতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ হামিদুর রহমানের সুদৃষ্টি কামনা করে বলেছেন অন্যান্য চাষের ন্যায় যদি মাল্টাচাষিদের সরকারি সহায়তা দেয়া হয় তাহলে সফলভাবে মাল্টা চাষের প্রসাড় ঘটানোর মধ্যদিয়ে বিদেশে ছড়িয়ে পড়বে চুয়াডাঙ্গা জেলার নাম।

দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিসার সুফি মো. রফিকুজ্জামান বলেন, মাল্টা একটি সুস্বাদু ফল। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি বিদ্যমান। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রতিটি বাগান মালিককেই নিয়মিতভাবে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ২০১৩ সালে গড়ে তোলা বাগানগুলোতে চলতি মরসুমে অল্পকিছু ফল এসেছিলো। ওই বাগানগুলোতে আগামী মরসুমে ভরপুর ফল ধরা শুরু হলে এলাকার পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি চাষিরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ভগিরথপুরের সাখাওয়াত হোসেন বাবলু প্রথমে প্রায় ২৯ বিঘা জমির ওপর আম, কুল এবং লিচুর পাশাপাশি মাল্টা বাগান গড়ে তোলেন। আম, কুল ও লিচুর চেয়ে মাল্টা লাভজনক হওয়ায় বর্তমানে তিনি আম, কুল ও লিচু বাদ দিয়ে পুরো জমিতেই গড়ে তুলেছেন মাল্টা বাগান। তিনি আরও জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক গত শুক্রবার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক শ্রী নির্মল কুমারকে সাথে নিয়ে সাখাওয়াতের মাল্টা বাগান পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালিন তিনি বাগানের সার্বিক বিষয়ে খোঁজ খবর নেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করেন। বর্তমানে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তোজাম্মেল হক ও মহিউদ্দীনসহ উচ্চমান সহকারী আমিরুল ইসলাম পলাশ ওই বাগান নিয়মিতভাবে দেখভাল করছেন।

এদিকে দামুড়হুদা উপজেলায় মাল্টা বাগান গড়ে ওঠার খবর পেয়ে এলাকার বেশকিছু যুবক লাভজনক ওই মাল্টা বাগান গড়ে তুলতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। দামুড়হুদা বাজারপাড়ার মতিয়ার রহমান, দশমীপাড়ার বিল্টু ও শাহিন গত শুক্রবার ছুটে যান সাখাওয়াতের মাল্টা বাগান দেখতে। আগামী বছরে পুকুরপাড়ে প্রায় ৫ বিঘা জমিতে মাল্টা বাগান গড়ে তুলবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন দামুড়হুদা দশমীপাড়ার নাজমুল হাসান বিল্টু ।