গাংনীতে লোডশেডিং ও বিদ্যুত বিভ্রাটে জনজীবন অতিষ্ঠ

 

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের অব্যাহত লোডশেডিং আর বিদ্যুত বিভ্রাটে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দিন রাতে অন্তত ৮/১০ বার এ বিদ্যুত বিভ্রাটে পড়ে এলাকাবাসী। এতে একদিকে যেমন জনজীবন বিপন্ন অন্যদিকে চলতি রোপা আমনের সম্পূরক সেচ কাজও বিঘ্নিত হচ্ছে। তবে শহর থেকে গ্রামাঞ্চলের মানুষ বেশি ভোগান্তির শিকার। বিদ্যুত কর্তৃপক্ষ বলছে পুরাতন লাইন ছাড়াও বিভিন্ন গাছ পালা ভেঙে যাওয়া এবং তাৎক্ষনিক লাইন ক্রুটির কারণে সাময়িকভাবে বিদ্যুত বিভ্রাট ঘটে থাকে।

মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতির গাংনী জোনাল অফিসের হিসেব মতে, গাংনী এলাকায় পিক আওয়ারে ৬ দশমিক ৫ মেগাওয়াট ও অফপিক আওয়ারে ৫ দশমিক ৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। অথচ গাংনীবাসী পিক আওয়ারে ৪ দশমিক ৪৪ ও অফপিক আওয়ারে ৩ দশমিক ৫২ মেগাওয়াট বিদ্যুত। তাই স্বাভাবিকভাবেই সন্ধ্যা থেকে রাত এগারটার পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং করা হচ্ছে। অন্যদিকে পোল, তার ও যন্ত্রপাতি পুরাতন হওয়ায় মাঝে-মধ্যে বিদ্যুত বিভ্রাট হচ্ছে। তাছাড়া বৃষ্টি ও সামান্য ঝড়ে গাছের ডালপালা ভেঙে বিদ্যুত বন্ধের ঘটনা তো প্রায়ই ঘটে।

গাংনী সাব স্টেশনে গত ১০ দিনে ৮৫ ঘন্টা লোডশেডিং ও বিদ্যুত বিভ্রাটের ঘটনা ঘটেছে। গত ৮ সেপ্টেম্বর ৬ ঘণ্টা, ৯ সেপ্টেম্বর ১০ ঘণ্টা ১১ সেপ্টেম্বর ১১ ঘণ্টা, ১২ সেপ্টেম্বর ১৪ ঘণ্টা, ১৩ সেপ্টেম্বর ৯ ঘণ্টা, ১৪ সেপ্টেম্বর সাড়ে ৭ ঘণ্টা, ১৫ সেপ্টেম্বর ১২ ঘণ্টা, ১৬ সেপ্টেম্বর ১৫ ঘণ্টা এবং ১৭ সেপ্টেম্বর ৮ ঘণ্টা ছাড়াও ১৮ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২ পর্যন্ত সাড়ে ৪ ঘণ্টা বিদ্যুত বিভ্রাট ও লোডশেডিং ছিলো।

গাংনীর বামন্দী সাব-স্টেশনে গত ১০ দিনে ৪৫ ঘণ্টা লোড শেডিং দেখা দেয়। বিশেষ করে সন্ধ্যা রাতে ও গভীর রাতে এ লোড শেডিংয়ের কারণে চুরি ও ছিন্তাই বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাছাড়া বামন্দী বাজারে ৪টি ফ্লাওয়ার ও ওয়েল মিলসহ ১৫টি কারখানা এবং একটি কোল্ড স্টোরেজ রয়েছে। বিদ্যুতের বেহাল অবস্থার কারণে মিল গুলোতে উৎপাদন ব্যহত হওয়ায় লোকসান গুণতে হচ্ছে শিল্পমালিকদের।

বিদ্যুতের সমস্যার কারণে রোপা আমন ও গ্রীষ্মকালীন সবজি আবাদ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বলে কৃষককরা। গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার রইচ উদ্দীন জানান, এ উপজেলায় বিদ্যুতচালিত ৩৫টি গভীর নলকুপ ও ১ হাজার ৩৫টি অগভীর নলকুপ রয়েছে। চলতি মরসুমে এ উপজেলার ১ হাজার ২শ হেক্টর জমি রোপা আমন রয়েছে। অনাবৃষ্টির কারণে আমন ক্ষেতে সম্পূরক সেচের প্রয়োজন। কিন্তু বিদ্যুত বিভ্রাট ও লোডশেডিং এর কারণে আমন আবাদ ব্যহত হচ্ছে।

বিদ্যুতের লোড শেডিং ও বারবার বিদ্যুৎ আসা যাওয়ার ফলে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র শিল্পকারখানা মালিকরা। এছাড়াও সংসারে বাসা বাড়িতে বৈদ্যুতিক পাখা (ফ্যান), রাইস  কুকার, কারী কুকার, মেজিক চুলা, টিভি, ফ্রিজ, কম্পিউটার এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ফটোষ্ট্যাট মেশিনসহ বৈদ্যুতিক নানান ধরণের যন্ত্রপাতি চালনায় বিড়মন্বনার শিকার হচ্ছেন বৈদ্যুতিক গ্রাহকরা।

বিদ্যুতের এ লুকোচুরির কারণে গত কয়েকদিনের ভ্যাপসা গরমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগীরাও চরম বিপাকে পড়েছেন। অপরদিকে গত সপ্তাহে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো এ অঞ্চলে। ফলে অসহনীয় গরমে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে জনজীবন। ১মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতির গাংনী জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) রমেন্দ্র চন্দ্র রায় জানান, লোডশেডিং জাতীয় সমস্যার পাশাপাশি পুরাতন যন্ত্রপাতি ও প্রাকৃতিক সমস্যায় এমনটি হচ্ছে। আকাশে মেঘ দেখলে কিংবা বাতাসের গতি দেখে লাইন সেভ করার জন্য বিদ্যুত বন্ধ করতে হয়। গাছপালা ভেঙ্গে নানা সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তাছাড়াও লোকবল সংকটও রয়েছে।