আওয়ামী লীগের সম্মেলনে হচ্ছে না বড় রদবদল

 

স্টাফ রিপোর্টার: আওয়ামী লীগের আসন্ন সম্মেলনে বড় কোনো রদবদল হচ্ছে না। তবে টানা সাত বছর দায়িত্ব পালন করা অনেক নেতার দায়িত্ব ও পদ-পদবিতে কিছুটা পরিবর্তন এবং ক্ষেত্রবিশেষ পদোন্নতি হবে। আলোচিত ১/১১-এর পর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যে নতুন ধারা (শেপ) তৈরি হয়েছে তার ওপরই প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আস্থা রাখতে যাচ্ছেন বলে প্রধানমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের সূত্রগুলো জানিয়েছে। আগামী ২২ ও ২৩ অক্টোবর দলটির ২০তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির বেশিরভাগ সদস্যই ২০০৯ সালের সম্মেলনের মাধ্যমে দায়িত্ব পেয়েছেন। এরপর ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সম্মেলনে তেমন বড় কোনো পরিবর্তন আসেনি।

আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়েরসূত্রে জানা গেছে, এবারো তেমন বড় কোনো পরিবর্তন আনতে চাচ্ছেন না দলীয় প্রধান। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষতার পাশাপাশি দলীয় আনুগত্যকে বড় করে দেখছেন। এক্ষেত্রে তিনি উদাহরণ হিসেবে সামনে রাখছেন রাজনীতির দুঃসময় ১/১১ পরিস্থিতিকে। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, বিশ্ব রাজনীতির চমক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লিডারশিপকে নিয়ে দেশ-বিদেশে যারা কাজ করছেন, তাদের সামনে রেখেই দল সাজাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই জাতীয় সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদসহ অন্যান্য পদে বড় রকমের কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটিতে যারা আছেন তাদের বেশিরভাগই থেকে যাবেন। সেই সঙ্গে নতুন পদ সৃষ্টি হওয়ায় কিছু নতুন মুখ যোগ হবেন।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে স্বীকৃতি দিয়ে এবারের সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে ভিশন ২০৪১, পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুকেন্দ্র, পায়রা বন্দরসহ বিভিন্ন মেগা প্রজেক্টের উল্লেখ থাকবে। সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত অন্য উপকমিটিগুলো বিশেষ করে প্রচার উপকমিটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পদক ও পুরস্কার প্রাপ্তি তুলে ধরে প্রচারণা চালাবে। সর্বশেষ ৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির আকার ৭৩ সদস্য থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৮১ সদস্যবিশিষ্ট করার একটি প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দলের প্রভাবশালী এক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটি যেহেতু নীতি নির্ধারণী ফোরাম, তাই সেখানে আকার বাড়ানোর চেয়ে কমিটিকে গুণবহ করতেই প্রধানমন্ত্রী স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। তবে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে বেশকিছু সংযোজন আসছে। এ নিয়ে গঠনতন্ত্র সংশোধন উপকমিটি কাজ করছে।

সূত্র জানায়, তৃণমূলে দলের কমিটির আকার বাড়বে। মহল্লা কমিটি ৩১ সদস্য থেকে বাড়িয়ে ৪১ করার প্রস্তাব প্রস্তুত হচ্ছে। ইউনিট কমিটি (মহানগর) ৩৭ সদস্য থেকে বাড়িয়ে ৬৫ করার প্রস্তাব প্রস্তুত করা হচ্ছে। থানা কমিটিও বাড়ানোর প্রস্তাব আসছে। বর্তমানে থানা কমিটির ৬৭ সদস্য বিশিষ্ট। ওয়ার্ড, পৌর ও ইউনিয়নে বর্তমানে সহসভাপতি আছেন ৫ জন করে। তা বাড়িয়ে ৭ জন করা হবে। যুগ্ম ও সাংগঠনিক সম্পাদক আছেন ২ জন করে। তা একজন করে বাড়ানো হবে।
এ ছাড়া গঠনতন্ত্রের ২৭ ধারায় স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ড সংযোজিত হবে। বর্তমানে এ ধারাটি কেবল ১১ সদস্যের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সংসদীয় বোর্ড সম্পর্কিত। সংসদীয় বোর্ডের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডও কাউন্সিলরদের ভোটে নির্বাচিত হবে। এটি হতে পারে ১৯ সদস্যের।  গঠনতন্ত্রে আরেকটি বিষয় যুক্ত হবে- আওয়ামী লীগের জেলা কিংবা অন্য কোনো অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পদে থাকলে মূল দলের উপকমিটির সহসম্পাদক পদে আসা যাবে না। আর মূল দলের ৭৩ সদস্যের কার্যনির্বাহী সংসদ বাড়িয়ে ৮১ সদস্য করা হতে পারে। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পদ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১৯ সদস্যবিশিষ্ট করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, যা বর্তমানে ১৫ সদস্যবিশিষ্ট। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তিনটি থেকে বাড়িয়ে পাঁচটি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ ছাড়া নতুন গঠিত ময়মনসিংহ বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত এক প্রকারে নিশ্চিত বলে জানা গেছে। ফরিদপুর ও কুমিল্লাকে বিভাগ ঘোষণা করা হলে সেখানে নতুন বিভাগীয় সম্পাদকের পদ সৃষ্টির সুযোগও গঠনতন্ত্রে থাকবে বলে জানা গেছে। মানবাধিকার, প্রশিক্ষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির মতো কয়েকটি সম্পাদকীয় পদ সৃষ্টি করা হবে।

সাধারণ সম্পাদক অপরিবর্তিত! জাতীয় সম্মেলনে সারাদেশ থেকে আসা কাউন্সিলরদের ভোটে দলের নেতৃত্ব নির্বাচনের বিধান আছে। ভোটের মাধ্যমে এই নেতৃত্ব নির্বাচনের কথা থাকলেও সভাপতি পদে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। ১৯৮১ সাল থেকে এ দলটির নেতৃত্ব দিয়ে দলকে এখন বিশ্বের অন্যতম বৃহত দলে পরিণত করেছেন তিনি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ সাধারণ সম্পাদক নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। এ পদের জন্য অনেকে আগ্রহী। তবে এখন পর্যন্ত দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ‘রানিংমেট’ হিসেবে ‘দক্ষ ও বিশ্বস্ত’ আশরাফকেই আবার এ পদে রাখবেন বিষয়টি এক রকম নিশ্চিত। এবার সাধারণ সম্পাদক হলে এ পদে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম হ্যাটটিক করবেন।

সভাপতিমণ্ডলীতে নতুন মুখ: আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম ১৫ সদস্যবিশিষ্ট, যা আগামী সম্মেলনের মাধ্যমে ১৯ সদস্যের হতে পারে। বর্তমান ১৫ সদস্যের কমিটিতে ১২ জন সদস্য রয়েছেন। যাদের মধ্যে সতীশ চন্দ্র রায় ও সাহারা খাতুন বয়স বিবেচনায় বাদ পড়তে পারেন।

সূত্রে জানা গেছে, দলীয় সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী পদের জন্য অনেক নেতাই প্রত্যাশায় আছেন। তবে অতীতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে দলের জন্য অবদান রেখেছেন এমন ব্যক্তিদের মূল্যায়ন করা হবে বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগ সূত্র। যারা আলোচনায় আছেন তাদের মধ্যে রয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বর্তমান কমিটি থেকে যারা পদোন্নতি পেয়ে এ ফোরামে যুক্ত হতে পারেন তাদের মধ্যে রয়েছেন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, মাহবুবউল আলম হানিফ, ড. আবদুর রাজ্জাক, কর্নেল (অব.) ফারুক খান, সিলেট অঞ্চল থেকে সাবেক চিফ হুইফ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহিদ অথবা অর্থমন্ত্রীর ভাই আবুল মোমেন যুক্ত হতে পারেন সভাপতিমণ্ডলীতে, সতীশ চন্দ্র রায় বাদ পড়লে উত্তরাঞ্চলের ঠাকুরগাঁওয়ের রমেশ চন্দ্র যুক্ত হতে পারেন এ ফোরামে।

সম্পাদকমণ্ডলীতে নতুন মুখ: আওয়ামী লীগের বর্তমান গঠনতন্ত্র অনুসারে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ তিনটি। আগামী সম্মেলনের মাধ্যমে এ পদের সংখ্যা বেড়ে পাঁচ হতে পারে বলে জানিয়েছে দলটির একটি সূত্র। দলের হয়ে কাউন্টার পলিটিক্সে বিভিন্ন যুক্তি-তর্ক নিয়ে মাঠে থাকা প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের পদোন্নতির সম্ভাবনা বেশি। সেক্ষেত্রে জাহাঙ্গীর কবির নানক ও ডা. দীপু মনির সঙ্গে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে যারা আলোচনায় আছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বীর বাহাদুর, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ও ড. হাছান মাহমুদ। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ সাতটি। ময়মনসিংহ বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ বাড়বে। এ ছাড়া ফরিদপুর ও কুমিল্লা বিভাগ হলে সাংগঠনিক বিভাগ হবে। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে বর্তমান কমিটি থেকেই পদোন্নতি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে ঢাকা ও খুলনা বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্তদের সমালোচনা বিস্তর। এ দু-একজন ছাড়া বাকিদের বাদ পড়ার সম্ভাবনা খুবই কম।