অসুস্থ প্রেমিককে সেবা যত্নের প্রত্যয়ে বিয়ে : ভাগ্যিস হয়নি বাসর

rrr

স্বপ্ন রণের কাছাকাছি পৌঁছে তছনছ তরতাজা প্রাণ

স্টাফ রিপোর্টার: পুরো পরিবারটাই আলোকিত হতে চেয়েছিলো আরিফের উজ্জ্বলতায়। সে উজ্জ্বলতা অতো অল্প সময়েই যে ম্লান হয়ে উল্টো অন্ধকারে ভরিয়ে দেবে তা কে জানতো? গতকাল শনিবার ভোরে চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের গাড়াবাড়িয়া ছাগলাপাড়ার আরিফুর রহমান আরিফের অকাল প্রয়াণের পর এরকমই মন্তব্য পড়শিদের মুখে মুখে।

অসুস্থ আরিফকে বিয়ে করেন একই গ্রামের কনিকা। তিনি খুব কাছে থেকে তার স্বামীর তিলে তিলে মৃত্যু দেখে বেশ শক্ত হয়ে উঠলেও মৃতদেহের পাশে কিছুতেই যেন খুঁজে পাচ্ছিলেন না সান্ত্বনা। দীর্ঘদিনের প্রেমিক যখন হাসপাতালে, তখন তার পাশে বসে সেবা যত্ন করে সুস্থ করার প্রত্যয়েই তাকে বিয়ে করেছিলেন কনিকা। কিন্তু না। সুস্থ দুরাস্ত, বাসরই পেলো না সে। বাসর হলে স্মৃতিটাই শুধু যন্ত্রণার কারণ হতো না, তাতে মারণ ব্যাধিটাও বাসা বাধতে পারতো তারও শরীরে। অনিবার্য হয়ে উঠতো তারও অকালমৃত্যু। না, ভাগ্যিস হয়নি বাসর। তার পরও পরীক্ষা করে কনিকার রক্তে অবশ্য এইচআইভির অস্তিত্ব মেলেনি।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়নের গাড়াবাড়িয়া ছাগলাপাড়ার রবগুল হোসেন হতদরিদ্র। তার তিন ছেলে ৪ মেয়ে। ৭ সন্তানের মধ্যে আরিফকেই লেখাপড়া শিখিয়ে বড় করে তুলতে চেয়েছিলেন তিনি ও তার পরিবারের সকলে। খেয়ে না খেয়ে আরিফকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিতও করে তুলেছিলেন। চুয়াডাঙ্গা সরকারি করেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন আরিফ। কিন্তু স্বপ্ন পূরণের আগেই বিধি বাম। আরিফকে জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে অভাবের সংসারে আরও অভাবের বোঝা চাপিয়ে তাকে চলে যেতে হলো পরোপারে। কী এমন রোগ যে আরিফকে বাঁচানো গেলো না? জটিল। ওরোগে আক্রান্ত হলে কোনো ওষুধেই যে আর কাজ করে না।

অসুস্থতার বর্ণনা দিতে গিয়ে পরিবারের এক সদস্য বলেছেন, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজে অনার্সের ছাত্র ছিলো। শেষ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় বছর খানেক আগে প্রায় প্রতিদিনই জ্বর লেগে থাকতো। জ্বর বাড়ে কমে। সারে না। এ ডাক্তার থেকে ওই ডাক্তারের কাছে নিয়েও লাভ হয় না। বরঞ্চ রোগের সংখ্যা বাড়তেই থাকে। জ্বরের পর জন্ডিস। তখনই হাসপাতালে ভর্তি করতে হলো। দিন দিন অসুস্থতার মাত্রা বাড়তে থাকায় প্রেমিকা একই গ্রামের কনিকা দূরে থাকতে না পেরে হাসপাতালে আরিফের শয্যাপাশে গিয়ে বসলেন। বিয়ে করলেন। এরপর শুরু হলো কাশি, কাশির সাথে উঠতে লাগলো রক্ত। স্বামীকে বাঁচাতে স্বামীর পিতা পক্ষকে সাথে নিয়ে সমান তালে চেষ্টা চালাতে লাগলেন কনিকা। বাসর আর হলো না। মুখ দিয়ে রক্তক্ষরণের পাশাপাশি মলদ্বার দিয়েও অনবরত রক্তক্ষরণ। ঢাকায় নিয়ে ব্যাগের পর ব্যাগ রক্ত দিয়েও লাভ হলো না। আরিফকে সুস্থ করতে তার মায়ের চেষ্টার কোনো কমতি ছিলো না। স্বল্প জমির মধ্যে অল্প কিছু বিক্রি করে পাওয়া টাকা চিকিৎসার পিছে ঢাললেও এক পর্যায়ে চিকিৎসক ডা. শাহিনুল আলম বললেন, চেষ্টায় ত্রুটি নেই। যদিও জানি এ রোগের চিকিৎসা নেই। রক্তে এইচআইভি পজেটিভ। শেষ পর্যন্ত আরিফকে বাড়ি ফিরিয়ে নেয়া হয়। গতকাল শনিবার ভোরে সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আরিফ। গ্রাম্য কবর স্থানে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।

আরিফকে লেখাপড়া শেখানোর জন্য শুধু তার পরিবারের সদস্যরই চেষ্টা করেনি। তিনি নিজেও প্রাইভেট পড়িয়ে লেখাপড়া শিখে ভালো চাকরি করে সংসারের অভাব তাড়ানোর স্বপ্ন দেখতেন। সেই স্বপ্ন গুঁড়িয়ে জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দিলো মারণ ব্যাধি এইডস। এ রোগ তার শরীরে ঢুকলো কীভাবে? যে ছেলেকে গ্রামের সকলে ভদ্র নম্র বলেই জানতো। ওই রোগ শরীরে প্রবেশ করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা অবলম্বন ছাড়াই দৈহিক মিলনে, অক্রান্ত রক্ত শরীরে নিলে তার ব্যবহৃত সিরিঞ্জ ব্যবহারে। আরিফের ক্ষেত্রে কোনটি?