জিয়ার স্বাধীনতা পদক প্রত্যাহারের পদক্ষেপ আত্মঘাতী : বিএনপি

 

স্টাফ রিপোর্টার: রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক প্রত্যাহারের জন্য মন্ত্রিসভা কমিটির সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করে বিএনপি বলছে, বিষয়টি সংকীর্ণ মানসিকতা, আত্মঘাতী এবং নোংরা কাজ। গণমাধ্যমে এই সংক্রান্ত প্রতিবেদনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে গতকাল শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মির্জা ফখরুল বলেন, পত্রিকায় একটি সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে, জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পদক প্রত্যাহার হচ্ছে। এই সংবাদে আমরা এবং গোটা জাতি বিস্মিত এবং উদ্বিগ্ন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, যিনি পদক প্রবর্তন করলেন তিনি বাদ, কিন্তু পদক থাকবে, তার কীর্তিও থাকবে। এটা যে কতো বড় সংকীর্ণতা, আত্মঘাতী এবং নোংরা কাজ; তা আওয়ামী লীগ যেদিন বুঝবে সেদিন আর শোধরানোর  সময় থাকবে না। তিনি বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সম্পর্কে আওয়ামী লীগের দলীয় মূল্যায়ন আমরা সবাই জানি। কিন্তু দলীয় মূল্যায়নে রাষ্ট্র চলে না, রাষ্ট্র সকলের। এই রাষ্ট্রকে যদি দলীয় বানাতে চান তখন রাষ্ট্র থাকবে দলই থাকবে না। জিয়াউর রহমান শুধু ইতিহাসে নয়, বহু মানুষের হৃদয়ে আছেন পরম শ্রদ্ধায়। কাজেই তিনি স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠবেনই। যারা গায়ের জোরে নোংরাভাবে তাকে মুছতে চাইছেন, তাতে তিনি ফিরলে হয়তো একইভাবে তারাও মুছে যেতে পারেন, বলেন তিনি।
বিএনপি সরকার ২০০৩ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিয়াউর রহমানকে একই সাথে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক দিয়েছিলো জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এটা ছিলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরম ঔদার্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এই সম্মাননা বিতর্কিত এবং অনির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভার কমিটিতে বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, একটি কথা স্পষ্ট করে করে বলতে চাই, বর্তমান আওয়ামী লীগ যে রাজনীতি করছে, তা দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। হতাশা এবং দুর্ভাগ্যের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, এই সরকার ঐক্যের রাজনীতিকে বিসর্জন দিয়ে সুপরিকল্পিতভাবে গোটা জাতিকে বিভাজনের রাজনীতির মাধ্যমে বিভক্ত করে ফেলছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, সামরিক ক্ষেত্রে শৌর্যবীর্য ছাড়া আর কোনো ক্ষেত্রে মেধা, কৃতিত্ব যোগ্যতা ও নেতৃত্বের স্বীকৃত হিসেবে দেশি-বিদেশি কাউকেই কোনো রাষ্ট্রীয় খেতাব, পদক ও ভূষণে বিভূষিত করাকে আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পর সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলো। একাডেমিক অনার ছাড়া বিদেশ থেকে কোনো সম্মাননা অর্জনকেও রাষ্ট্রপতির প্রাক অনুমোদন গ্রহণ করার শর্ত যুক্ত করেছিলেন তারা। জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রীয় সম্মাননার ওপর আরোপিত সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। ১৯৭৭ সালে দেশে প্রথম স্বাধীনতা পদক ও একুশে পদক প্রবর্তন করেন। তারই ধারাবাহিকতায় দেশের বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ যারা বিভিন্নক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন তাদের পদক প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র ধ্বংস করে দেশকে চরম সংকটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, একদিকে গণতন্ত্র ও অন্যদিকে জঙ্গিবাদের সংকট। এই সংকট থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি মাত্র পথ হচ্ছে গণতন্ত্রের পথে ফিরে আসা।

সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ভয়াবহ পথ থেকে সরে এসে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করার জন্য গণতন্ত্রের পথে ফিরে আসুন। অন্যথায় কোনোদিনই জাতি আপনাদের ক্ষমা করবে না এবং ভবিষ্যতে এর জবাব দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আহমদ আযম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।