৩ নারী পাচারকারীকে জেলহাজতে প্রেরণ : সাংবাদিকসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা

ঢাকা সাভার থেকে উদ্ধার হওয়া দর্শনা হঠাতপাড়ার দু কিশোরীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন

 

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: ঢাকা সাভার এলাকা থেকে উদ্ধার দর্শনা হঠাতপাড়ার দু কিশোরীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে তাদের ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। এদিকে গ্রেফতার হওয়া সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্রের ৩ সদস্যকে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। আদালতের বিজ্ঞ বিচারক তাদের জামিন না মঞ্জুর করে সকলকে জেলহাজতে প্রেরণ করেছেন। এদিকে উদ্ধার হওয়া দু কিশোরীর মধ্যে এক কিশোরীর পিতা বাদি হয়ে পাচারকারী চক্রের সদস্য উপজেলার কুড়ুলগাছি গ্রামের আশরাফুল ইসলাম আশার ছেলে সোহেল রানা (২৮), দর্শনা হঠাতপাড়ার আমির হোসেনের ছেলে মামুন (২০), দর্শনা মোবারকপাড়ার লিটনের স্ত্রী লাবনী (৩৫), হঠাতপাড়ার শাহাদত হোসেনের ছেলে শাহিন মিয়া (২০), একই পাড়ার বারেকের ছেলে জসিম (৩০), মোতাহার হোসেনের ছেলে ফজলু (২৯), মোবারকপাড়ার মৃত শাহারুলের ছেলে (লাবনীর দেবর) শাহিন (২০), চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দোস্তগ্রামের (বর্তমানে ঢাকা জিরানী বাজার) মহাসীন (২৬), ঢাকা মানিকগঞ্জের ঝিটকা গ্রামের হালিমের ছেলে কুদ্দুস (৩০), একই গ্রামের রুবেল (২০), ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জের বাবলু (৫০) এবং এবং দর্শনা পাঠানপাড়ার রাজুর ছেলে সাংবাদিক সুজনকে (২৫) আসামি করে মোট ১২ জনের নামে দামুড়হুদা মডেল থানায় মামলা করেছেন।

দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আবু জিহাদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন, মোবাইলফোন ট্রাকিংয়ের মাধ্যমে পাচার হওয়া ওই দু মাদরাসা ছাত্রীর অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর ঢাকা সাভার এলাকার রেডিও কলোনিতে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া দু কিশোরীর ভাষ্যমতে জানা গেছে পাচারকারী চক্রের সদস্য রানা, শাহিন এবং মামুন তাদেরকে গার্মেন্টেসে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ঢাকায় নিয়ে যায় এবং মহাসীন নামের একজনের বাসায় রাখে। পরদিন ঢাকায় অবস্থানরত পাচারকারী চক্রের অপর সদস্য লাবনীর কাছে তাদেরকে মোটা অঙ্কের টাকায় বিক্রি করে দেয়। মক্ষিরানী লাবনী তার মিরপুর-১ এলাকার ভাড়াবাসায় ও দু কিশোরীকে দিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর পূর্বক দেহব্যবসায় লিপ্ত করায়। মিরপুরে ১০ দিন রাখার পর সে বাসাবদল করে তাদেরকে সাভারে নিয়ে আসে এবং সাভার রেডিও কলোনির একটি ভবনের তিনতলায় তাদেরকে আটকে রেখে ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর পূর্বক দেহব্যবসা চালিয়ে আসছিলো।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুল খালেক জানান, গ্রেফতারকৃত পাচারকারী চক্রের ৩ সদস্যকে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে গতকাল বুধবার দুপুরে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। এছাড়া উদ্ধারকৃত দু কিশোরীকে বিকেলে ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। ডাক্তারি পরীক্ষা শেষ করতে সন্ধ্যা হওয়ায় গতকাল তাদের আদালতে নিয়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী গ্রহণ করানো সম্ভব হয়নি। তবে আজ বৃহস্পতিবার তাদের জবানবন্দি নেয়ার ব্যবস্থা করানো হবে। জবানবন্দি শেষে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে সেফহোমে পাঠানো হবে। মামলার বাকি আসামিদের গ্রেফতার করতে পুলিশি অভিযান অব্যহত রাখা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন পুলিশের ওই কর্মকর্তা।

যেভাবে ওই দু কিশোরী উদ্ধার হলো: উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের এক যুবকের সাথে ওই দু কিশোরীর মধ্যে এক কিশোরীর সাথে বেশ কিছুদিন ধরে মোবাইলফোনে কথপোকথন চলছিলো। সম্প্রতি মোবাইলফোনে কথা হয় ওই যুবকের সাথে। পুলিশ মোবাইল ট্রাকিং করে ওই যুবককে আটক করে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই দামুড়হুদা থানা পুলিশ ওই দু কিশোরীকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

আটক মক্ষিরানী লাবনী ওরফে আয়শা ওরফে আলেয়ার পরিচয় : লাবনীর মা সুফিয়া খাতুন জানান, ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার  আব্দুল কুদ্দুসের মেয়ে লাবনী। ৪ বোন আর এক ভাইয়ের মধ্যে লাবনী সকলের বড়। প্রায় বছর বিশেক আগে তার বিয়ে হয় দর্শনা মোবারকপাড়ার মৃত শাহারুলের ছেলে ট্রাকচালক লিটনের সাথে। তাদের সংসারে ১৮ বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান এবং ৭ বছর বয়সী একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। ট্রাকচালক লিটন লাবনীকে ঠিকমত খোঁজ খবর না নেয়ায় বিয়ের ৫ বছরের মাথায় লিটনের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বগুড়ার এক আলু ব্যবসায়ীর সাথে দ্বিতীয় বিয়ে দেয়া হয়। ওখানে তিন বছর সংসার করার পর লিটন আবারও লাবনীর সাথে যোগাযোগ করে তাকে ওখান থেকে  নিয়ে চলে আসে। লাবনী প্রায় বছর খানেক আগে থেকে ঢাকায় বসবাস শুরু করে বলেও তিনি জানান। তবে অন্য একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, লাবনী দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় বিভিন্নস্থানে বাসাভাড়া নিয়ে মাদকব্যবসা করে আসছিলো। দর্শনা হঠাতপাড়ার রানা, শাহিন, জসিম, মামুন এরা সকলেই মাদকব্যবসায়ী লাবনীর পূর্ব পরিচিত।

আটক রানার পরিচয়: দামুড়হুদা উপজেলার কুড়ুলগাছি গ্রামের আশরাফুল ইসলাম আশার ছেলে সোহেল রানা। দু ভাই বোনের মধ্যে রানা বড়। সে আগে বিস্কুটের ব্যবসা করতো। সে সুবাদে এলাকায় তার নাম পড়ে যায় বিস্কুট রানা। এলাকার লোকজন বর্তমানে তাকে বিস্কুট রানা বলেই বেশি চেনে।

উল্লেখ্য, গত ১০ জুলাই রাত ৮টার দিকে দর্শনা ডিএস ফাজিল মাদরাসার ৬ষ্ঠ শ্রেণির ওই দু ছাত্রী দামুড়হুদার দর্শনা হঠাতপাড়া থেকে নিখোঁজ হয়। নিখোঁজের দেড় মাসের মাথায় পুলিশ ওই দু কিশোরীকে ঢাকা সাভার এলাকা থেকে গত মঙ্গলবার সকালে উদ্ধার করে।