জাল কাগজপত্রে এমপিওভুক্তি : গাংনীর মাথাভাঙ্গা নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন স্থগিত

 

স্টাফ রিপোর্টার: এমপিওভুক্তির কয়েকদিন পর মেহেরপুর গাংনী উপজেলার কাজিপুর মাথাভাঙ্গা নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা স্থগিতের আদেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর। অতিরিক্ত শ্রেণি শাখার জাল কাগজ আর আঞ্চলিক শিক্ষা অফিস ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে অন্তত ৩০ লাখ টাকা ঘুষ প্রদানের মাধ্যমে এমপিওভুক্তির অভিযোগে ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অধিদফতরের কর্মকর্তারা।

এমপিও নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে মামলা চলার পর ৯ আগস্ট উচ্চদালতের নির্দেশে কাজিপুর নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়সহ দেশের ছয়টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে এমপিও দেয় মাউশি।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, নীতিমালা অনুসারে একটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এমপিওভুক্ত হতে পারেন সর্বোচ্চ ৫ শিক্ষক ও ২ কর্মচারী। কিন্তু শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) দুর্ণীতিবাজ কর্মকর্তাদের আর্শীবাদে কাজীপুর মাথাভাঙ্গা নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ১৩ জন এমপিওভুক্ত হয়েছেন। আরও চারজন এমপিওভুক্তির অপেক্ষায় আছেন। অস্বাভাবিক এই এমপিওর বিষয়ে গত মঙ্গলবার মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর সংশ্লিষ্ঠদের নিয়ে শুনানির আয়োজন করে। এতে অভিযুক্তরা মহাপরিচালকের সামনে সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি। তাই চুড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগ পর্যন্ত এমপিওভুক্ত সকল শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিযয়েছে মাউশি।

মাউশি সূত্রে জানা গেছে, গত মার্চ মাসে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীকে এমপিওভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। এর প্রেক্ষিতে ওই বিদ্যালয়ের ১৭ জন শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওর জন্য আবেদন করেন। গত জুলাই মাসে খুলনার আঞ্চলিক শিক্ষা কার্যালয় ১৩ জনকে এমপিওভুক্তি করেন। পরে শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির এই তথ্য দেখে মাউশি কর্মকর্তারা বিস্মিত হন। কেননা কোনো জুনিয়র স্কুলেই ১৩ জনের এমপিওভুক্তি আইন নেই। গত ১০ আগস্ট আঞ্চলিক শিক্ষা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক, জেলা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও কাজিপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অভিযুক্ত প্রদান শিক্ষক কামাল হোসেনকে শুনানিতে কাগজপত্রসহ উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেয় মাউশি।

শুনানিতে মাউশি অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এসএম ওয়াহিদুজ্জামান নানা চেষ্টায় এই অদ্ভুত জালিয়াতির তথ্য বের করতে না পেরে প্রধান শিক্ষককে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেয়ার কথা বলেন। এতে প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেন দুর্নীতির বিষয়ে মুখ খুলতে থাকেন। কামাল হোসেন শুনানীতে জানান, ৫০ হাজার টাকার মাধ্যমে যশোর শিক্ষা বোর্ড থেকে অতিরিক্ত শ্রেণি শাখা খোলার জাল কাগজসহ অনুমতি পেয়েছেন।

১৬ আগস্ট মাউশি অধিদফতরের শুনানিতে উপস্থিত থাকা একজন কর্মকর্তা বলেন, এই ১৩ জনের এমপিওভুক্তিতে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। কারণ অতিরিক্ত শ্রেণি শাখা খোলার যে কাগজ দেখানো হয়েছে তা সব জাল। দেখানো হয়েছে ২০০২ সালে অতিরিক্ত শ্রেণি শাখা খোলার অনুমোদন দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপর ২০০৫ সালে অনুমোদন দেয় যশোর বোর্ড। অথচ আগে বোর্ড ও বোর্ডের অনুমোদন সাপেক্ষে মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেয়ার নীতিমালা রয়েছে। জালিয়াতি করা কাগজপত্রে প্রতিটি ক্লাসেই তিনটি সেকশন দেখানো হয়েছে। গ্রামের একটি বালিকা বিদ্যালয়ে এতো শিক্ষার্থী কোত্থেকে আসে এমন প্রশ্ন দেখা দেয়। তাও আবার বিদ্যালয়টির অবস্থান একেবারের সীমান্তবর্তী গ্রামে। তবে মাউশি বলছে সেকশনের শিক্ষার্থীই তাদের নেই। আসলে আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসের যোগসাজশেই এই অবৈধ এমপিও হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে খুলনা আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসের উপপরিচালক টিএম জাকির হোসেন বলেন, আমাদের কাছে অতিরিক্ত শ্রেণি শাখা খোলার কাগজ দিয়েছে তাই আমরা এমপিও দিয়েছি। তবে এজন্য কোন টাকা-পয়সা নেয়া হয়নি। এখন যেহেতু অভিযোগ উঠেছে তাদের বেতন বন্ধ করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের এমপিও বাতিল করে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেন বলেন, আমাদের শিক্ষার্থী অনেক তাই শিক্ষকের সংখ্যা বেশি। কতো টাকা লেনদেনের মাধ্যমে এই এমপিও পেয়েছেন তা জানতে চাইলে তিনি এ নিয়ে আর কথা বলবেন না বলে কৌশলে এড়িয়ে যান।

গাংনী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মীর হাবিবুল বাসার বলেন, আমরা কাগজপত্রের ভিত্তিতে এমপিওভুক্তির সুপারিশ করেছি। এখন যদি এটাকে দুর্ণীতি বলা হয় তাহলে এর ভাগিদার এই কাজের সাথে জড়িত সবাই। এমনকি শিক্ষা বোর্ডও।