প্রসবের সময় মারা যাওয়া প্রসূতির রেখে যাওয়া নবজাতক বিক্রি?

 

কামরুজ্জামান বেল্টু: দ্বিতীয় সন্তান প্রসবের সময় মারা যাওয়া প্রসূতির রেখে যাওয়া নবজাতককে অন্যের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। বিক্রি? নাকি দত্তক? মুখ খুলছেন না নবজাতকের পিতা চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের শ্রীকোল-বোয়ালিয়ার দরিদ্র পোশাক ফেরিওয়ালা আব্দুল হান্নান। পড়শীদের অভিযোগ, ৫০ হাজার টাকায় নবজাতককে বিক্রি করে দিয়েছে হান্নান।

সন্তান প্রসবের সময় প্রসূতির মৃত্যু হয় গত ১৪ আগস্ট সকলে। ওইদিনই মৃতদেহ দাফনের আগেই নবজাতক কন্যাসন্তানকে অন্যের হাতে তুলে দেয় আব্দুল হান্নান। ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে সন্তান বিক্রির বিষয়টি ওইদিন প্রকাশ্যেই ঘটে। স্থানীয়রা এ তথ্য দিয়ে বলেন, প্রথমে যখন নবজাতককে অন্যের হাতে লালন-পালনের জন্য তুলে দেয়া হচ্ছে বলে জানা যায়, তখন তেমন কেউই আপত্তি তোলননি। কেননা, মা ছাড়া অতোটুকু সন্তানকে কে লালনপালন করবে? এরপর যখন নবজাতক গ্রহণকারীর পরিচয় গোপন করা হয় ও নবজাতককে দেয়ার বদলে হান্নান নেয় নগদ ৫০ হাজার টাকা তখনই আপত্তি ওঠে। কেউ বলে, ওই নবজাতককে অজ্ঞাত পরিচয়ের ডাক্তার দম্পতি ৫০ হাজার টাকা দিয়ে কিনে মোটা অংকে বিক্রি করবে। কেউ বলে, হাত-পা ভেঙে লুলা করে ভিক্ষাবৃত্তিতে নামিয়ে অর্থ কমাবে। পড়শীদের অনেকে এসব মন্তব্য করলেও নবজাতকের পিতা হান্নান তাতে কান দিচ্ছেন না। তিনি বলেছেন, আমার মেয়েকে যেখানে দিয়েছি, সেখানে ভালোই থাকবে। কেননা, গ্রামেরই এক শিক্ষকের মাধ্যমেই এই চিকিৎসকের নিকট আমার এক দিনের মেয়েকে তুলে দিয়েছি। পরিচয় না জানলেও গ্রামের ওই শিক্ষকের ওপর বিশ্বাস রয়েছে। শিক্ষক নিশ্চয় বাজে তেমন কারো হাতে আমার মেয়েকে তুলে দেয়নি।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের শ্রীকোল-বোয়ালিয়া গ্রামের আব্দুল হান্নান দীর্ঘদিন ধরে পুরোনো পোশাক ফেরি করে বিক্রি করেন। স্ত্রী রজিনা খাতুন ছিলেন গৃহিণী। ও দম্পত্তির ১১ বছর বয়সী এক কন্যা রয়েছে। নাম পিয়া। সে ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী। দ্বিতীয় বারের মতো অন্তঃসত্ত্বা হন রজিনা। হান্নান-রজিনার স্বপ্ন ছিলো পুত্রসন্তান। গত ১৩ আগস্ট প্রসববেদনা দেখা দিলে সন্ধ্যায় রজিনাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। ভর্তি করা হয়। পরদিন সকালে সন্তান প্রসবের সময় প্রসূতি রজিনা মারা যায়। রেখে যায় নবজাতক কন্যাসন্তান। এরপরই গ্রামের এক স্কুলশিক্ষকের মাধ্যমে অজ্ঞাত পরিচয়ের এক ব্যক্তির নিকট নবজাতককে তুলে দেয়ার প্রক্রিয়া করা হয়। ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে নবজাতককে অন্যের হাতে তুলে দেয়ার তথ্য জানিয়ে স্থানীয়দের কয়েকজন বলেছেন, হান্নান তার বড় মেয়ের নামে ৪০ হাজার টাকা রেখেছে। বাকি ১০ হাজার টাকা দিয়ে রজিনার কুলখানীর প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রতিশ্রুতি মতে আরও কিছু টাকা দিলে তা দিয়ে বাড়ি বানানোর স্বপ্ন দেখছে হান্নান।