মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাণিজ্য………

 

শুনতে খারাপ লাগলেও মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে বাণিজ্যের বিষয়টি নতুন নয়। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্তৃক পুলিশের ১৯ সদস্য গ্রেফতারের পর বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে মাত্র। তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে যে তারা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ দেখিয়ে পুলিশের চাকরি নিয়েছিলেন ২০১২ সালে। আর এই সনদ তৈরি করে দিয়েছেন সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার সাবেক একজন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার। ভুক্তভোগী পরিবারগুলো অভিযোগ করেছেন যে ভুয়া এই সনদের জন্য জনপ্রতি পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা গুনতে হয়েছে তাদের। জমিও বিক্রি করতে হয়েছে কোনো কোনো দরিদ্র পরিবারকে।

জানা যায়, সাবেক এই কমান্ডার দীর্ঘদিন যাবত এ অপকর্ম চালিয়ে আসলেও তিনি এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। অবশ্য তিনি একা নন, এর আগে জনপ্রশাসনের পাঁচ শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাসহ আরও যাদের বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছিলো, তাহাদের বিরুদ্ধেও কার্যত দৃষ্টান্তমূলক কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি। এ বিষয়ে প্রশাসনসহ জনমনে যথেষ্ট ক্ষোভও রয়েছে এবং তার যৌক্তিকতাও অনস্বীকার্য। মুক্তিযুদ্ধের সনদ জালিয়াতি কোনো সাধারণ অপরাধ নয়। কারণ এর সাথে গোটা জাতির মর্যাদা ও ভাবমূর্তির প্রশ্ন জড়িত। অতএব জাতির মর্যাদাহানিকর এই ঘৃণ্য কর্মের সাথে যে বা যারাই জড়িত থাকুক না কেন, সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থান নির্বিশেষে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গৃহণ প্রত্যাশিত। দুদকের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।

তার পরও কিছু প্রশ্ন থেকেই যায়। সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, প্রশাসনের প্রধান কর্মকর্তা থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায়ের একজন কমান্ডার পর্যন্ত, যাদের বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে তারা এমন দুঃসাহস পেলেন কোথায়? দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অতিশয় বিব্রতকর এই সমস্যাটির মূলোত্পাটন করতে হলে অবশ্যই নির্মোহভাবে গোড়ার সেই গলদটি খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের জাতীয় ইতিহাসের উজ্জ্বলতম অধ্যায় হলো মহান মুক্তিযুদ্ধ। রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তিকে কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে মুক্তিযোদ্ধার সনদ প্রদান ও বাতিল করার মধ্যদিয়ে সেই মুক্তিযুদ্ধকে কালিমালিপ্ত করার একটি প্রক্রিয়া যে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। নীতি, বিবেক ও দেশাত্মবোধবর্জিত কিছু ব্যক্তি সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, এই দেশে কতো কিছু নিয়েই তো বাণিজ্য হয়, এমনকি খাদ্য কিংবা ওষুধে বিষাক্ত উপাদান মিশিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয় শিশুদের জীবন নিয়েও, সেখানে এ ধরনের ঘটনা খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে সর্বপ্রকার অস্বচ্ছতা ও জালিয়াতির এখানেই স্থায়ীভাবে অবসান হওয়া উচিত।