কুষ্টিয়ায় মার খেলেন শহীদ পরিবারে সন্তান স্কুল ক্যাম্পাসেই প্রধান শিক্ষক লাঞ্ছিত

 

কুষ্টিয়ায় প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ায় এক স্কুলে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের মতামত ছাড়াই স্কুলের পরিচালনা পর্ষদের এডহক কমিটি গঠন ও ওই কমিটি অনুমোদনের প্রস্তাব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দফতরে পাঠানোর কারণে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলা ও হকিস্টিক দিয়ে বেধড়ক মারধর করেছে সরকার দলীয় ক্যাডাররা। গতকাল সোমবার সকালে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার অন্তর্গত পশ্চিম আব্দালপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর হাসানবাগ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। হামলা ও মারধরের পর স্কুলের প্রধান শিক্ষক সামসুল আলমকে স্কুলের কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা বিষয়টি আপস রফা করে নেয়ার জন্য প্রধান শিক্ষককে হুমকি ও চাপ সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক শামসুল আলম অভিযোগ করেন, পরিচালনা পর্ষদের এডহক কমিটি গঠন ও তা অনুমোদনের জন্য গত ৭ আগস্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়। পরবর্তীতে কুষ্টিয়া সদর আসনের এমপি মাহবুব-উল-আলম হানিফের অতি ঘনিষ্ঠ জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতা স্কুলের প্রধান শিক্ষককে ফোন করে কমিটি গঠনের আগে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাদের মতামত নেয়া হয়েছিলো কি-না সে বিষয়ে কৈয়ফিয়ত চান। এ সময় প্রধান শিক্ষক ওই নেতাকে বলেন, কমিটি গঠনে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কোনো নেতার মতামত গ্রহণ করা হয়নি। তবে বিধি মোতাবেক এডহক কমিটি গঠন ও অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়। এতে জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ওই নেতা চরম ক্ষিপ্ত হন এবং প্রধান শিক্ষককে রাজাকার বলে আখ্যায়িত করেন। আওয়ামী লীগের ওই নেতার সাথে প্রধান শিক্ষকের মোবাইল ফোনে কথোপোকথনের একদিন পর সোমবার সকালে সরকারদলীয় একদল ক্যাডার বাহিনী স্কুলে এসে প্রধান শিক্ষক সামসুল আলমের ওপর আক্রমণ ও হকিস্টিক দিয়ে বেধড়ক মারধর করে। মারধরের সময় হামলাকারীরা বলতে থাকে যে, তুই আমাদের নেতার সাথে খারাপ আচরণ করেছিস বলেই তোর এই শাস্তি প্রাপ্য ছিলো। মারধরের সময় স্থানীয়রা ছুটে এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ওসিসহ পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। প্রধান শিক্ষকের ওপর অতর্কিত হামলার ঘটনায় তিনি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

তিনি অভিযোগে আরও বলেন, ৭১’র মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবারের সন্তান হওয়ার পরও তারা আমাকে রাজাকার বলে গালি দেয়। সোমবার দুপুরে এলাকার সাদ্দাম হোসেন, জিল্লুর রহমান, আনিসসহ আরও ৩/৪ জন আমার স্কুলে এসে হকিস্টিক দিয়ে মারধর করে। ঘটনা টের পেয়ে স্থানীয় লোকজন এসে আমাকে রক্ষা করে।

আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের কথামতো কমিটি না করায় তারা ক্ষুব্ধ হয়ে তার ওপর হামলা করেছে। এবিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার সায়েদুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রধান শিক্ষককে মার-ধরের ঘটনাটি শুনেছেন বলে জানান। তবে স্কুলের কেউ তাকে ঘটনাটি না জানানোর কারণে ঘটনাস্থল পরিদর্শন কিংবা এবিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় মামলা হয়নি। তবে থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে প্রধান শিক্ষক সামসুল আলম জানান।

ইবি থানার ওসি শরিফুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, লক্ষ্মীপুর হাসানবাগ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুল আলমকে হেনস্থা করা হয়েছে। তবে তাকে মারধর করার ঘটনা ঘটেনি বলে তিনি দাবি করেন। এ ঘটনায় প্রধান শিক্ষক সামসুল আলম কোনো লিখিত অভিযোগ করেননি। তিনি লিখিত অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে ওসি জানান।