সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ ও মাদক নিয়ন্ত্রণে গাংনীতে সিসিটিভি স্থাপন সংক্রান্ত আলোচনাসভা: আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব শুধু পুলিশের নয় সকলের

 

মাজেদুল হক মানিক: যারা ইসলামী সংগঠন পরিচয়ে বিশ্বব্যাপী জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে তাদেরকে ইসলামের শত্রু বলে অ্যাখ্যায়িত করলেন মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন। অপরদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পুলিশের ওপর চাপিয়ে দিয়ে নাগরিক দায়িত্ব এড়ানোর কারণে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদী ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মন্তব্য করলেন পুলিশ সুপার হামিদুল আলম। গতকাল রোববার মেহেরপুর গাংনী মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জেলা পুলিশের আয়োজনে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদক নিয়ন্ত্রণে সিসি ক্যামেরা স্থাপন অপরিহার্য বিষয়ক আলোচনাসভায় প্রধান অতিথি এমপি ও সভাপতির বক্তব্যে এসপি উপরোক্ত মন্তব্য করেন।

প্রধান অতিথি বক্তব্যে আরো বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস দমনে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় জঙ্গি দমনের সফলতা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে। তাই সময়ের প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনে সামর্থবানদের এগিয়ে আসতে হবে। এ বিষয়ে তিনি যথাযথ সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

সভাপতির বক্তব্যে মেহেরপুর জেলা পুলিশ সুপার দেশের বিভিন্ন স্থানে পুরোহিত,  যাজক, সেবায়েত হত্যা ও পুলিশের ওপর টার্গেট কিলিংয়ের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এসব ঘটনার সময়ে আশেপাশের অনেক মানুষ দেখেছেন কিন্তু তারা প্রতিবাদ না করে নির্লিপ্ত থেকেছেন। কেননা আমরা মনে করছি আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব শুধু পুলিশের। কিন্তু রাষ্ট্রের প্রতি প্রত্যেকটি নাগরিকের কিছু অপরিহার্য দায়িত্ব রয়েছে। সেই দায়িত্ব পালন করলে এদেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসাবাদ এবং মাদকের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না।

সিসিটিভি স্থাপন সংক্রান্ত বিভিন্ন যৌক্তিকতা তুলে ধরে হামিদুল আলম বলেন, প্রতিষ্ঠান ও বাসা বাড়িতে যদি সিসিটিভি থাকে তাহলে দৃস্কৃতিকারী ও চোর-ডাকাতরা ভয়ে আর সেখানে কোন ক্ষতিসাধন করতে সাহস পাবে না। তাছাড়া বাড়ি ও প্রতিষ্ঠান থেকে বাইরে থাকা অবস্থায়ও সেটি চোখ হিসেবে কাজ করবে। তাই স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান ও এর পাশের সড়কগুলোতে সিসিটিভি স্থাপনের অনুরোধ করেন তিনি।

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদেশে ইসলামিক ফাউন্ডেশন গঠন করেছিলেন। ইসলামী আদর্শ বাস্তবায়নেও কাজ করছেন তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মানুষ হত্যা ও সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডের মধ্যদিয়ে ইসলাম কায়েম হয় না। এতে ইসলামকে কলঙ্কিত করার ষড়যন্ত্র করছে ইসলাম বিরোধীরা। এর থেকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

অনুষ্ঠানে ঈমাম, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, উন্নয়নকর্মীসহ বিভিন্ন পেশাজীবি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বক্তৃতায় ইসলামের দৃষ্টিতে জঙ্গিবাদ ঘৃর্ণিত বিষয় বলে উল্লেখ করে পবিত্র কোরআনের আলোকে ব্যখ্যা দেন গাংনী বাজার দারুস সালাম জামে মসজিদের ঈমাম হাফেজ রুহুল আমিন। অপরদিকে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি ও সৃষ্টিকারীদের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক ও ছড়াকার গাংনী সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক রফিকুর রশিদ রিজভি। বিভিন্ন পেশাজীবি সংগঠনের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মুন্তাজ আলী, গাংনী উপজেলা চেয়ারম্যান মুরাদ আলী, সাবেক চেয়ারম্যান একেএম শফিকুল আলম, গাংনী পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলাম, মটমুড়া ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল আহম্মেদ, গাংনী বাজার কমিটি সভাপতি হাফিজুর রহমান মানিক, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাজি আলফাজ উদ্দীন, গাংনী মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক পারভেজ সাজ্জাদ রাজা, গাংনী মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেন, পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতি নির্বাহী পরিচালক মোশাররফ হোসেন, হাড়াভাঙ্গা ফাজিল মাদরাসা অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক। উপস্থিত ছিলেন পেশাজীবী সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার কয়েক হাজার মানুষ। এ উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসনে অংশগ্রহণকারীরা। সব শ্রেণি পেশার মানুষের অংশগ্রহণে আলোচনাসভা কার্যত জনসভায় রুপ নেয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) শেখ মোস্তাফিজুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনসহ পুলিশ সদস্যবৃন্দ।