গাংনীতে বোমা তৈরিকালে বিস্ফোরণে বোমা কারিগর সাহারুল নিহত

 

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী উপজেলার কাজিপুর গ্রামে বোমা তৈরির সময় বোমা বিস্ফোরণে সাহারুল ইসলাম (৪০) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে নিজ বসতঘরে এ ঘটনা ঘটে। বোমাঘাতে ঘরের বিভিন্ন আসবাবপত্রসহ ছাউনির টিন ছিদ্র হয়ে গেছে। ঘটনাস্থল থেকে বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে পুলিশ। সীমান্তে মাদক চোরাচালান ও বোমা তৈরি করে বিক্রিই তার মূল পেশা ছিলো বলে জানায় এলাকাবাসী। নিহত সাহারুল ইসলাম সীমান্তবর্তী কাজিপুর গ্রামের মৃত ইসমাইল হোসেনের ছেলে।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দুপুরে কাজিপুর হাজিপাড়ায় নিজ বসতঘরে বোমা তৈরি করছিলো সাহারুল ইসলাম। শক্তিশালী একটি বোমা তৈরির পর তা বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। বোমার স্প্লিন্টারে তার হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম হয়। তার স্ত্রী একটি ইজিবাইক ভাড়া করে তাকে নিয়ে প্রথমে বামন্দীর একটি ক্লিনিকে যায়। তবে এ ধরনের রোগীর চিকিৎসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন ওই ক্লিনিকের চিকিৎসকরা। তাই উন্নত চিকিৎসা এবং গ্রেফতার এড়াতে কুষ্টিয়ার যাওয়ার চেষ্টা করেন। বামন্দী বাজারের প্রধান সড়ক অনিরাপদ ভেবে গলির রাস্তা দিয়ে বামন্দী আখ সেন্টারের পাশে অবস্থান নেয়। সেখানে ইজিবাইকের মধ্যে কুষ্টিয়াগামী বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলো। এর মধ্যে গাংনী থানা ও বামন্দী পুলিশ ক্যাম্পের পৃথক দুটি দল সেখানে পৌঁছায়। সাহারুলকে পুলিশ আটক করে ওই ইজিবাইকযোগেই গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র রেফারের প্রস্তুতি চলছিলো। এর মধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সাহারুল। পরে হাসপাতাল থেকে লাশের ময়নাতদন্তের জন্য থানা হেফাজতে নেয় পুলিশ। সাহারুলের সাথে থাকা তার স্ত্রী হালিমা খাতুনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেয়া হয়।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা জানান, বোমার স্প্লিন্টারের আঘাতে শাহারুলের দুই হাতের কব্জি থেকে আগুলের ওপর পর্যন্ত হাড় ও মাংস আদালা হয়ে যায়। এছাড়াও দুই পায়ের পাতায় গুরুতর ক্ষত হয়। হাতের দুই হাতের কনুইয়ে গভীর ক্ষত রয়েছে। এছাড়াও বুক ও মুখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানান ওই চিকিৎসক।

এদিকে আহত সাহারুলের সাথে ছিলেন তার স্ত্রী হালিমা খাতুন। বোমা তৈরির বিষয়ে সে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন। তিনি বলেন ঘটনার সময় তিনি বাড়ির পার্শ্ববর্তী একটি বাড়িতে ছিলেন। বোমার শব্দ শুনে বাড়িতে ঢুকে দেখেন তার স্বামী রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। তবে এর সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ।

সাহারুলের কয়েকজন প্রতিবেশী জানান, মাদক ও বোমার ব্যবসার কারণে তার সাথে প্রতিবেশীদের ভালো সম্পর্ক ছিলো না। তার পরিবার থেকে বেশ দূরেই থাকতেন প্রতিবেশীরা। তবে তার চাচাতো ভাইসহ নিকটাত্মীয় কয়েকজন মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। সাহারুলের সাথে তাদের ব্যবসায়ীক সখ্য রয়েছে। বোমা বিস্ফোরণের বিষয়ে হাজিপাড়ার লোকজন জানান, গতকাল দুপুরে হঠাৎ বিকট শব্দে একটি বোমার বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান তারা। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ওই পাড়ার বাসিন্দারা। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিস্ফোরণের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে ঘটনাস্থলের দিকে এগিয়ে যান প্রতিবেশীরা। তবে বোমা তৈরি করতে গিয়ে আহত হওয়ায় প্রতিবেশীরা কেউ তার চিকিৎসার জন্য সাথে আসেননি।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে আরো জানা গেছে, সাহারুল ইসলাম কাজিপুর সীমান্ত এলাকার চিহ্নিত চোরাচালানি ও সন্ত্রাসী। তার নামে গাংনী থানায় এ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। চোরাচালান ও সন্ত্রাসের কাজে ব্যবহারের জন্য সে বোমা তৈরি করে। তবে অপরাধ জগতে বোমা কারিগর হিসেবে তার বেশ সুনাম রয়েছে বলেও স্থানীয় লোকজন জানিয়েছে। তার তৈরি করা বোমার কদর রয়েছে বোমাবাজদের কাছে। মাদক ব্যবসার পাশাপাশি বোমা তৈরি করে বিক্রিই ছিলো তার মূল পেশা।

শুধু বোমা তৈরি নয় ডাকাতি ও অপহরণের সাথেও জড়িত ছিলো সাহারুল। বছর সাতেক আগে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর এলাকার এক শিশুকে অপহরণ করে তার বাড়িতে রাখা হয়। কুষ্টিয়া পুলিশ তার বাড়ি থেকে অপহৃত শিশুকে উদ্ধার ও সাহারুলকে গ্রেফতার করেছিলো। দৌলতপুর থানায় তার নামে অপহরণ মামলা রয়েছে। এছাড়াও এলাকার চিহ্নিত মাদকব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীদের সাথে এখনো তার সখ্য রয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই তার বাড়ির আশেপাশে ওইসব মানুষের আনাগোনা থাকে। এলাকায় খারাপ মানুষ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় তার ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করে না। পুলিশের কাছেও কেউ মুখ খোলে না। বেশ দাপটের সাথেই সে তার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিলো। গতকালের ওই ঘটনার পর সাহারুলের সহযোগী হিসেবে পরিচিত কয়েকজন গাঢাকা দিয়েছে।

গাংনী থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান, ঘটনাস্থলে জালের কাঠি, কৌটাসহ বোমা তৈরির বেশ কিছু সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। বোমা তৈরিকালে বিস্ফোরণ ঘটে বলে নিশ্চিত পুলিশ। তবে এর সাথে আর কে কে জড়িত তা বের করতে তদন্ত চলছে। এছাড়াও সাহারুলের স্ত্রীর কাছ থেকে তথ্য নেয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ। তবে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সে কোনো কিছুই জানে না বলে দাবি করেছে। বিস্ফোরণের ঘটনায় থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের নামে হত্যামামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। তদন্তের পরই জড়িত অন্যদেরকে ওই মামলায় গ্রেফতার করা হবে। লাশের ময়নাতদন্ত শেষে আজ বৃহস্পতিবার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।