যে কারণে জঙ্গিদের হাস্যোজ্জ্বল ছবি তোলা হয়

 

স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকার কল্যাণপুরে গত মঙ্গলবার পুলিশের জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহতদের অস্ত্র হাতে হাস্যোজ্জ্বল ভঙ্গিতে তোলা একটি ছবি প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। গুলশানে রেস্তোরাঁয় হামলাকারীরাও এমন ছবি তুলেছিলো- যা ওই আক্রমণের পরপরই প্রকাশ পায়। কিন্তু মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে কেন তাদের এই হাস্যোজ্জ্বল ছবি? একজন নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলছেন মানুষের মধ্যে ভয় ঢোকাতে আর নিজেদের আইএস প্রমাণ করতেই এসব ছবি তোলা হয়েছিলো। পুলিশের একজন সাবেক আইজিপি বলছেন, মনস্তাত্ত্বিক সন্তুষ্টি প্রকাশ আর প্রচারের জন্যই জঙ্গিরা এসব ছবি তুলেছে।

এর আগে গুলশানে হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় ভাবহ হামলার মধ্যেই হামলাকারী জঙ্গিদের অস্ত্র হাতে হাস্যোজ্জ্বল ছবি প্রকাশ করেছিলো কথিত আইএস’র বার্তা সংস্থা হিসেবে পরিচিত আমাক। হামলকারীরাও নিহতদের ছবি তুলে সেগুলো পাঠিয়েছিলো, যেগুলো আমাক প্রকাশ করেছে সে রাতেই। ঢাকার কল্যাণপুরে পুলিশী অভিযানে নয়জন নিহত হওয়ার একদিন পর থেকেই এসব জঙ্গিদের গুলশানের জঙ্গিদের মতোই একই কায়দায় অস্ত্র হাতে তোলা ছবি প্রকাশিত হয়েছে গণমাধ্যমে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, গুলশান হামলার মতো কোনো হামলার প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই জঙ্গিরা এসব ছবি তুলে রেখেছিলো এবং ওই হামলায় এইসব জঙ্গি মারা যাওয়ার পর তা প্রকাশ করার জন্যই এগুলো তোলা হয়। কিন্তু কল্যাণপুরে নিহত জঙ্গিরা এমন কোনো ঘটনা ঘটানোর আগেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে মারা যায়। অনেক ক্ষেত্রে এসব ছবি যখন তোলা হয় তখন হয়তো ছবির ওইসব জঙ্গিরা জানেও না যে, তারা মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত মোহাম্মদ আলী শিকদার বলছেন, তাদের পোশাক, অঙ্গভঙ্গি, পতাকা বা ড্রেস দিয়ে মানুষের মধ্যে ত্রাস সৃষ্টি করতে চায় যে আমরা আইএস’র লোক। সুতরাং তোমরা হঁশিয়ার হয়ে যাও, আমরা যা ইচ্ছা করতে পারি – যেমনটি আইএস করছে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই কয়েকটি অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত হয় কল্যাণপুরে নিহত নয়জনের মধ্যে পাঁচজনের একটি ছবি। এর বাইরে ফেসবুকেও প্রচার হতে থাকে অন্তত পাঁচটি ছবি। হাস্যোজ্বল ভঙ্গিতে তোলা এসব ছবিতে কারো হাতে ছুরি, কারো হাতে দা, কারও হাতে পিস্তল।

মোহাম্মদ আলী শিকদার বলছেন, মূল পরিকল্পনারীরা এসব ছবির মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছে তারা এসব তরুণদের কোন পর্যায়ে নিয়ে যেতে সক্ষম। তিনি বলেন, তাদের একেকজনকে দেড় থেকে দু বছর পর্যন্ত মগজ ধোলাই করেছে। বাবা-মা, ভাই-বোন সবার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। তারা পরিণত মানুষ নয়। জীবনের পূর্ণ উপলদ্ধি তাদের হয়নি। তাদের এ পর্যায়ে নিয়ে আসছে, ছবির মাধ্যমে তার বহির্প্রকাশ দেখছি।

পুলিশের সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নূরুল হুদা বলছেন, হামলার পর এ ধরনের ছবি প্রকাশ করার প্রবণতা সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর মধ্যে দেখা যায় এবং এক্ষেত্রে তাদের মূল উদ্দেশ্য থাকে প্রচার পাওয়া এবং নিজেদের সক্ষমতা বোঝানোর চেষ্টা করা। তাদের কথিত সংগঠন, আদর্শ, লক্ষ্য- সেটা যে ভালো এবং কাজটা করতে যে তারা উজ্জীবিত, মনস্তাত্ত্বিকভাবে ভালো আছে সেটা প্রমাণ করতে চায় এসব ছবি দিয়ে। আর একটা হলো প্রচার পাওয়া। অন্যরা উৎসাহিত হবে। আমি যে মহৎ কাজ করছি সেটা জানান দেয়ার জন্য একটা আমিত্বও আছে এর মধ্যে।