কর্তারা হোক আরও বিচক্ষণ, আরও চৌকস

 

সমাজে কতো প্রকার প্রতারক আছে তার ইয়ত্তা নেই। প্রতারকরা সব সময়ই কৌশলে সরল বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে লোভের টোপে প্রতারণার ফাঁদ পাতে। পথে বের হয়ে কেউ কেউ অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে স্বর্বশান্ত হচ্ছেন। এদের কারও কারও প্রাণও ঝরছে ওই প্রতারকদের মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ প্রয়োগের কারণে। শুধু কি পথে বের হয়ে? না, বাড়ির বারান্দায় বসেও প্রতারিত হওয়ার শঙ্ক চোখের পলকে। কেননা, প্রতারকচক্র আশপাশেই সুযোগের সন্ধানে ঘুরছে। সামান্য অসতর্কতায় অবিশ্বাস্যভাবে প্রতারিত হওয়ার ঝুঁকিপূর্ণ সমাজেই আমাদের বসবাস। তা না হলে চিকিৎসক সেজে ঘটা করে প্রতারণা করার সাহস পায় কীভাবে? অবশ্য কিছুটা হলেও আশার আলো জাগিয়েছে চুয়াডাঙ্গা জীবননগরের সুবলপুর গ্রামের সচেতন যুবসমাজ। তারা দুজন প্রতারককে পাকড়াও করে পুলিশে দিয়েছে। ওই দুজন নিজদেরকে ভারতের ডিগ্রিধারী চিকিৎসক সেজে প্রতারণার ফাঁদ পেতে অর্থ হাতানোর অপচেষ্টায় মেতেছিলো।

অবশ্যই ওই সমাজে প্রতারকের সংখ্যা বেশি, যে সমাজে সচেনতার অভাব। কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না যে, আমারা আমাদের সমাজকে এখনও ওই পর্যায়ে নিতে পারিনি, যে পর্যায়ে নিতে পারলে যতোই ছদ্মবেশী হোক, যে কৌশলেই তারা লোভের টোপে ফাঁদ পাতুক তাতে কেউ পড়বে না। এরকম নিশ্চিত পরিবেশের জন্য সবার আগে দরকার বিভাগীয় আইন প্রয়োগকারী কর্তাদের সচেতনতা। কর্তাদেরই কেউ যদি কখনো জিন, পেত ভুতের ভয়ে শঙ্কিত হন, শিক্ষিকদের কেউ যদি ওসবে কিছু হলেও হতে পারে বলে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচালে পড়ার মতো বুলি আওড়ান তখন সরলসোজা মানুষগুলো সহজেই প্রতারকদের ফাঁদ পা দিয়ে প্রতারিত হওয়ার পথে হাঁটেন। তা না হলে কি মোবাইলফোনে জিনের বাদশা সেজে প্রতারণার ফাঁদ পাততে পারে? সমাজে যেমন সচেতনতার ঘাটতি রয়েছে, তেমনই বিভাগীয় কর্তাদের বিভাগীয় আইন প্রয়োগে পদ্ধতিগত ত্রুটিসহ দায় এড়ানোর অজুহাত রয়েছে। সে কারণেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সেজে যে কেউই অর্থ হাতিয়ে নেয়ার পাশাপাশি ক্ষতিকর ওষুধ প্রয়োগে অসংখ্য মানুষের প্রাণটাই ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। ভাগ্যিস সুবলপুরের সাধারণ মানুষ সজাগ হয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিয়েছেন। বাকি দায়িত্বটা অবশ্যই স্বাস্থ্য বিভাগীয় কর্তারা করবেন বলে বিশ্বাস। আর তাতে যদি গড়িমসি থাকে তাহলে পুলিশ তো বিশেষ সুবিধা নিয়ে পার পাওয়ার পথ বাতরে দিতেই পারে!

প্রতারকদের কারণে বাঙালিদের বাঙালিয়ানায় ষোলআনা আর নেই। থাকে কী করে। ওই বাঙালিপনার সুযোগটাই তো প্রতারকদের অনেকে কাজে লাগায়। এইতো সেদিন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীর জন্য ওষুধ কিনতে গিয়ে এক ফার্মেসির জিম্মায় বৃদ্ধা মাকে রাখতে হয়েছে। কেন? কারণ ওই ফার্মাসিস্ট বা ওষুধের দোকানি কাউকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না। তার বাঙালিয়ানা তথা দরদী মনটাকে বিষিয়ে তুলেছে বলেই কিছু ওষুধ বাকিতে দিয়ে টাকা পাওয়ার নিশ্চয়তা হিসেবে একজন বৃদ্ধাকে দীর্ঘ সময় ধরে বসিয়ে রেখেছেন। দৃশ্য দেখে যেকোনো বাঙালি বলতেই পারেন এই অবিশ্বাসের উপত্যকা আমার সমাজ না। অথচ যে বিশ্বাসের সমাজ ছিলো আমাদের অহঙ্কার, সেই বিশ্বাস গুঁড়িয়ে দিয়েছে আমাদেরই মাঝে লুকিয়ে থাকা প্রতারকরা। ওদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের কর্তাদের হতে হবে আরও বিচক্ষণ, আরও চৌকস, আরও দায়িত্বশীল।