বাড়িতে বাড়িতে শোক

 

স্টাফ রিপোর্টার: ঝিনাইদহের মহেশপুর কাটাখালিতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত পাঁচ ব্যক্তির বাড়ি চুয়াডাঙ্গার চারটি গ্রামে। এসব বাড়িতে চলছে স্বজনদের কান্না। দুর্ঘটনায় প্রিয়জনকে হারিয়ে পরিবার পরিজন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দুইজন। চালক ও হেলপার পলাতক রয়েছে।

নিহতেরা হলেন, দামুড়হুদা উপজেলার কাদিপুর গ্রামে আবুল হাশেম (২৫) ও মোস্তাক হোসেন (৫৫) এবং জীবননগর উপজেলার একতারপুর গ্রামের মহিউদ্দিন (৫১), সেনেরহুদা গ্রামের মনজিল হোসেন (৩০) ও উথলী গ্রামের লিটন হোসেন (৩২)। আহতরা হলেন, দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তার (৫৫) এবং জীবননগরের উথলী গ্রামের লিটন আলী (৪০)।

কাদিপুর গ্রামের ইউপি মেম্বার শাহজামাল হোসেন বলেন, গত বুধবার রাতে ওই গ্রামের দুইজনসহ মোট সাতজন মিষ্টি কুমড়া ও কচুসহ মিনি ট্রাক বোঝাই করে খুলনা যাচ্ছিলো। পথিমধ্যে ঝিনাইদহের মহেশপুরের কাটাখালী নামক স্থানে ট্রাকের সামনের একটি চাকা ফেটে ট্রাকটি উল্টে যায়। এ সময় মালামালের বস্তার নিচে পড়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে ।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় নিহত দামুড়হুদার কাদিপুর গ্রামে আবুল হাশেম ও মোস্তাকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় স্বজনদের আহাজারি। ছোট ছোট দুটি সন্তান নিয়ে মোস্তাকের স্ত্রীর আহাজারি। একই অবস্থা দেখা যায় পার্শ্ববর্তী মোস্তাকের বাড়িতে। অন্য তিনজনের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।

জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল হাফিজ বলেন, ‘আমার উপজেলার যে তিনজন মারা গেছে, তাদেরকে আর্থিক সহযোগিতা দেয়া হবে। দামুড়হুদার কাদিপুর গ্রামে নিহত দুজনের বিষয়ে একই কথা জানালেন দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  ফরিদুর রহমান।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনায় জীবননগর উপজেলার উথলী ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী তিন গ্রামে ৩ জনের মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় চলছে শোকের মাতম। অনেকে আবার বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। এতে এলাকায় নেমে এসেছে নিস্তব্ধতা। এ মর্মান্তিক সড়ক  দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দূরদূরান্ত থেকে দেখতে ছুটে এসেছে আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষী ও এলাকাবাসী। জীবননগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু মো. আব্দুল লতিফ অমল ও উথলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল হান্নান নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক জানাতে বৃহস্পতিবার সকালে নিহতদের বাড়িতে যান এবং ব্যক্তিগতভাবে নিহতদের পরিবারের সদস্যদেরকে আর্থিক অনুদান দেন। এছাড়া সকাল থেকেই নিহতদের বাড়িতে ভিড় জমাতে শুরু করে। এতে গ্রাম তিনটিতে শোকাহত মানুষের ঢলে পরিণত হয়। তারাও চোখের পানি ধরে রাখতে পারছে না। স্বজনদের হৃদয় বিদারক কান্না ও আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে নিহতদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে তাদেরকে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়।

দামুড়হুদা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কাদিপুর গাংপাড়ার দু যুবক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র হাশেম ও দিনমজুর মোস্তাকের দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে কাদিপুর গাংপাড়া জামে মসজিদের সামনে নিহত দু যুবকের জানাজা শেষে নিজ গ্রামের কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়।

দামুড়হুদার কাদিপুর গাংপাড়ার নিহত দু যুবকের মধ্যে চিটাগাং কলেজের মাস্টার্সের ছাত্র হাশেম কেরুজ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, দর্শনা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং চিটাগাং কলেজ থেকে অনার্স পাশ করে বর্তমানে ওই কলেজেই অধ্যায়নরত ছিলো। তিন ভাইয়ের মধ্যে নিহত হাশেম ছিলো মেজ। সে এই প্রথম কুমড়ো কিনে খুলনায় বিক্রি করতে যাচ্ছিলো।

অপরদিকে নিহত মোস্তাক একজন দিনমজুর। ৫ ভাই আর ৪ বোনের মধ্যে নিহত মোস্তাক ছিলো সকলের ছোট। স্ত্রী বিউটি খাতুন স্বামীকে অকালে হারিয়ে দু শিশু সন্তান পুলক (১৪) এবং নলককে (১১) নিয়ে পড়েছেন মহাবিপাকে।

উল্লেখ্য, গত বুধবার নিজগ্রাম থেকে কুমড়ো কিনে উথলী থেকে ট্রাকযোগে খুলনা যাওয়ার সময় ঝিনাইদহের মহেশপুর বজ্রাপুর গ্রামের কাটাখালির মোড় নামকস্থানে ট্রাকের সামনের চাকা পাঙচার হয়ে ট্রাক উল্টে ট্রাকের নীচে চাপা পড়ে নিহত হয় কাদিপুর গাংপাড়ার ওই দু যুবকসহ মোট ৫ জন।