রাজধানী কল্যাণপুরে নিহত ৭ জঙ্গি শনাক্ত

 

স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকার কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে নিহত নয়জনের মধ্যে সাতজনকে শনাক্ত করা গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। জাতীয় পরিচয়পত্র এবং আঙুলের ছাপ মিলিয়ে তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায় বলে বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়। নিহতরা হলেন- দিনাজপুরের আব্দুল্লাহ (২৩), পটুয়াখালীর আবু হাকিম নাইম (২৪), ঢাকা ধানমণ্ডির তাজ-উল-হক রাশিক (২৫), ঢাকার গুলশানের আকিফুজ্জামান খান (২৪), ঢাকার বসুন্ধরার সেজাদ রউফ অর্ক (২৪), সাতক্ষীরার মতিউর রহমান (২৪) এবং নোয়াখালীর জোবায়ের হোসেন (২২)।

এদের মধ্যে সেজাদ রউফ যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টধারী। গত ফেব্রুয়ারি থেকে নিখোঁজ এই যুবক গুলশানে ক্যাফেতে হামলাকারী নিবরাস ইসলামের বন্ধু ছিলেন। মঙ্গলবার ভোরে কল্যাণপুরের অভিযানে নয়জন নিহত হওয়ার পর রাতে তাদের ছবি (রক্তাক্ত লাশের ছবি। অপ্রাপ্তবয়স্কদের দেখার ক্ষেত্রে অভিভাবকদের নির্দেশনা নেয়ার অনুরোধ করা হলো) প্রকাশ করে তাদের পরিচয় শনাক্ত করতে সবার কাছে তথ্য চেয়েছিলো পুলিশ।

ডিএমপি জানায়, প্রকাশিত লাশের ছবির প্রথমজন হলেন আব্দুল্লাহ। তিনি দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ থানার বল্লভপুর গ্রামের সোহরাব আলীর ছেলে। লাশের দ্বিতীয় ছবিটি আবু হাকিম নাইমের। তিনি পটুয়াখালীর কুয়াকাটার নুরুল ইসলামের ছেলে। তৃতীয় ছবিটি তাজ-উল-হক রাশিকের। তিনি ঢাকার ধানমণ্ডির ১১/এ নাম্বার সড়কের রবিউল হকের ছেলে। চতুর্থ ছবিটি আকিফুজ্জামান খানের। তিনি গুলশানের ১০ নাম্বার সড়কের ২৫ নাম্বার বাড়ির সাইফুজ্জামান খানের ছেলে। ষষ্ঠ ছবিটি সাজাদ রউফ অর্কের। তার বাবা তৌহিদ রউফের ঠিকানা দেয়া হয়েছে ৬২ পার্ক রোড, বাসা নং-৩০৪, রোড নং-১০, ব্লক-সি, ফ্ল্যাট নং-০৯, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, ঢাকা। সপ্তম ছবিটি মতিয়া রহমানের বলে পুলিশ জানিয়েছে। তিনি সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ওমরপুর গ্রামের নাসিরউদ্দিন সরদারের ছেলে। অষ্টম ছবিটি জোবায়ের হোসেনের। তিনি নোয়াখালীর সুধারাম থানার পশ্চিম মাইজদীর আবদুল্লাহ মেম্বারের বাড়ির আব্দুল কাইউমের ছেলে। নয়টি ছবির পঞ্চম ও নবম জন এখনো অশনাক্ত অবস্থায় রয়েছে। সবগুলো লাশই ময়নাতদন্তের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে রয়েছে। ছবি প্রকাশের পর অষ্টম ছবিটি নিজের সন্তান সাব্বিরুল হকের বলে সন্দেহের কথা জানিয়েছিলেন চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার ফুলগাজীপাড়ার বরুমছড়া গ্রামের আজিজুল হক।

একই ছবি নোয়াখালীর জোবায়েরের বলে তার বাবাও দাবি করেন। ডিএমপি এখন অষ্টম ছবিটি জোবায়েরের বলে নিশ্চিত করলো। এদের মধ্যে সেজাদ ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন। তার আগে পড়তেন মালয়েশিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটিতে। দুটি বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়তেন গুলশানের ক্যাফেতে হামলার পর কমান্ডো অভিযানে নিহত নিবরাস ইসলাম। তারা দুই বন্ধু শাহবাগ থানার একটি মামলার আসামি ছিলেন। সেজাদ গত ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বাসা বেরিয়ে যাওয়ার পর আর ফেরেননি জানিয়ে তার বাবা তৌহিদ রাজধানীর ভাটারা থানায় জিডি করেছিলেন।

নিবরাসও ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে নিখোঁজ ছিলেন বলে তার পরিবারের ভাষ্য। এরপর ১ জুলাই গুলশানের ক্যাফেতে নিহত হওয়ার পর জানা যায়, তিনি ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ঝিনাইদহের একটি মেসে ছিলেন। ওই মেসে নিবরাসের আরেক সঙ্গী আবীর রহমানও ছিলেন, যিনি ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের দিন শোলাকিয়ায় পুলিশের ওপর হামলা চালানোর পর গুলিতে নিহত হন। নিবরাসের মতো আবীরও নিখোঁজ ছিলেন কয়েক মাস ধরে। তাদের সাথে ওই মেসে যে আটজন ছিলেন, তাদের মধ্যে সেজাদও ছিলেন বলে ধারণা গোয়েন্দাদের।

গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলায় ঘরছাড়া তরুণদের জড়িত থাকার তথ্য প্রকাশের পর ৱ্যাব নিখোঁজ তরুণ-যুবকদের যে তালিকা দেয়, তাতে ২৪ বছর বয়সী সেজাদের নাম রয়েছে। বুধবার মর্গে লাশ শনাক্তের জন্য তৌহিদ রউফ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে যান, তার সাথে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের এক কর্মকর্তাও ছিলেন। তবে দুপুরে লাশ দেখে ছেলেকে শনাক্ত করতে পারেননি তৌহিদ। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা লাশ দেখেছি। চেহারায় পুরোপুরি মিল নেই। ডিএনএ টেস্টের প্রয়োজন রয়েছে।

নোয়াখালীর কাইউম বলেন, তার ছেলে জোবায়ের নোয়াখালী সরকারি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। গত ২৫ মে থেকে সে নিখোঁজ হলে গত ১২ জুলাই থানায় জিডি করেন তিনি। কাইউম জানান, তার ভাতিজা বাহাদুরের সোথে বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকে নিখোঁজ জোবায়ের। ছেলেকে হারানোর জন্য জামায়াতের রোকন বাহাদুরকে দায়ী করে কাইউম বলেন, সে আমার ছেলেকে শিবিরের রাজনীতিতে নিয়ে গিয়েছিলো। তার প্ররোচনায় আমার ছেলে জঙ্গি তৎপতায় জড়িয়ে পড়ে।

এলাকাবাসী জানায়, সৌদি আরব ও আফগানিস্তান থেকে ফিরে বাহাদুর গত কয়েক বছর ধরে জামায়াতে সক্রিয় হন। তার বাবা জয়নাল আবদিন চিহ্নিত রাজাকার ছিলেন। তাকে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা করা হয়। অন্য যাদের নাম ডিএমপি দিয়েছে, তাদের বিস্তারিত পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।