মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কে যাত্রীবাহী বাসে মেহেরপুর সরকারি কলেজের এক ছাত্রীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে আধাঘন্টা সড়ক অবরোধ করে ছাত্র-ছাত্রীরা। এ সময় বিক্ষুদ্ধরা একটি বাসে ভাঙচুর চালায়। পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাদের নিয়ন্ত্রণ করলেও উত্তেজনা থামেনি। গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে মেহেরপুর সরকারি কলেজের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি বাসস্ট্যান্ড থেকে মেহেরপুর সরকারি কলেজের এইসএসসি প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীর কাছ থেকে হাফ ভাড়া নেয়ার বিষয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কে চলাচলকারী লোকাল বাসের এক সুপারভাইজার। ওই ছাত্রী কলেজে পৌঁছে বিষয়টি জানালে ছাত্র-ছাত্রীরা বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে। তারা কলেজের সামনে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর-চুয়াড়াঙ্গা সড়কে অবরোধ করলে সব ধরণের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় একটি বাসে ভাঙচুর চালায় বিক্ষুদ্ধ ছাত্ররা। খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল সেখানে গিয়ে লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। আধাঘন্টা অবরোধ থাকার পর ওই সুপার ভাইজারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে পুলিশ সুপারের আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়।
ঘটনাস্থল থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, অভিযুক্ত সুপার ভাইজারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে ছাত্রীকে থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে পুলিশের আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার হলেও ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে বিরাজ করতে থাকে তীব্র ক্ষোভ। মেহেরপুর সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি কুদরত-ই-খোদা রুবেল জানান- প্রায়ই লোকাল বাসে হাফ ভাড়া নিয়ে সুপারভাইজার ও হেলপাররা ছাত্র-ছাত্রীদের বিভিন্ন ভাবে লাঞ্ছিত করে। এ ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান না হলে ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে নিয়ে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।
এদিকে এদিন দুপুর একটার দিকে মেহেরপুর পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে এ পরিস্থিতি নিয়ে এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে অভিযুক্ত সুপারভাইজারকে ওই ছাত্রীর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং ভবিষ্যতে যাতে আবারও এই ধরনের ঘটনা আর না ঘটে সে বিষয়ে শ্রমিক নেতাদের মাধ্যমে সকল হেল্পার ও সুপারভাইজারদের সতর্ক করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামানের সভাপতিত্বে বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন মেহেরপুর সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল আমিন, সহকারী পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান, জেলা বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ গোলাম রসুল, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বারিকুল ইসলাম লিজন, কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি কুদরত-ই-খোদা রুবেল, জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান, ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক রেজাউল হক প্রমুখ।
অপরদিকে লাঞ্ছিত ছাত্রী অপমান সহ্য করতে না পেরে বার বার মূর্ছা গেলে তাকে এ দিন দুপুর ২টার দিকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহমার-উজ্জামান বলেন, সম্মিলিত বৈঠকে অভিযুক্ত সুপারভাইজারকে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের আচরণ যাতে মটর শ্রমিকদের কেউ না করে তার জন্য সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।