শিশু সাগরকে হত্যা: গ্রেফতার কর্মকর্তা রিমান্ডে : কারখানা থেকে ২৪ শিশু উদ্ধার

পায়ুপথে হাওয়া দিয়ে শিশু সাগরকে হত্যা: গ্রেফতার কর্মকর্তা রিমান্ডে : কারখানা থেকে ২৪ শিশু উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মলদ্বারে বাতাস ঢুকিয়ে শিশু শ্রমিককে হত্যার ঘটনার পর জোবেদা টেক্সটাইল থেকে গতকাল সোমবার ২৪ শিশু শ্রমিককে উদ্ধার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে কারখানার এক প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে। শিশু হত্যার ঘটনায় ১০ জনকে আসামি করে মামলা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রূপগঞ্জ থানার এসআই এনামুল হক চৌধুরী। রূপগঞ্জের যাত্রামুড়া এলাকায় জোবেদা টেক্সটাইলে রোববার দুপুরে মলদ্বারে কমপ্রেসারের বাতাস ঢুকিয়ে সাগর বর্মণ (১০) নামে এক শিশুকে শ্রমিককে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. এ কে এম শফিউজ্জামান জানান, দুপুরের দিকে সাগরের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। তদন্তের সময় তার পেট থেকে গ্যাস ও পায়ুপথের রেকটামও বের হয়ে যায়। তাতে বোঝা যায়, পায়ুপথে বাতাস ঢোকানোর কারণেই সাগরের মৃত্যু হয়েছে। শিশুটির ভিসেরা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরে সেগুলো পরীক্ষা করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানো হবে বলে জানান তিনি। শাহবাগ থানার এসআই কৃষ্ণ চন্দ্র দাস জানান, ময়নাতদন্তের আগে শিশুটির সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। শিশুর বাবা রতন বর্মণের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।

জানা গেছে, সাগর বর্মণ নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুড়ি উপজেলার রাজিবপুর গ্রামের রতন বর্মণের ছেলে। সে পিতার সঙ্গে জোবেদা গ্রুপের টেক্সটাইল মিলে শ্রমিক হিসেবে ৩ হাজার ৫০০ টাকা বেতনে কাজ করে আসছিল। সাগর তার পরিবারের সঙ্গে ৭ মাস ধরে রূপগঞ্জের দীঘিবরাবো এলাকার সাত্তার মেম্বারের বাড়ির ভাড়াটিয়া। শিশু শ্রমিককে হত্যার ঘটনার পর জোবেদা টেক্সটাইলে অভিযান চালিয়ে ২৪ শিশু শ্রমিককে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাকারিয়া। তিনি জানান, জোবেদা টেক্সটাইলে অভিযান চালিয়ে ২৪ শিশু শ্রমিককে উদ্ধারের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। জোবেদা টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড ছাড়াও এখলাস স্পিনিং মিলস লিমিটেড ও আজহারুল স্পিনিং মিলস লিমিটেডও একই সীমানা প্রাচীরের ভেতর অবস্থিত।
প্রাথমিক গোয়েন্দা তথ্যে জানা গেছে, ওই তিন কারখানায় সাড়ে চার হাজার শ্রমিক রয়েছে। এর মধ্যে শিশু শ্রমিক ১২শ’র মতো। এই বিষয়টি অনুসন্ধান করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান জাকারিয়া।

নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, ওই কারখানার মালিকপক্ষের কিছু লোক সারাদেশ থেকে শিশু শ্রমিক সংগ্রহ করে আনে। তাদের নামমাত্র মজুরি দেয়া হয়। শিশু সাগর বর্মণ হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করে শিশু শ্রমের সঙ্গে জড়িতদেরও শাস্তি দাবি করেন তিনি। রূপগঞ্জ থানার এসআই এনামুল হক চৌধুরী জানান, সাগরের বাবা রতন বর্মণ বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখ করে ১০ জনকে আসামি দিয়ে একটি হত্যা করেছেন। আসামিরা হলেন এখলাছ উদ্দিন টেক্সটাইলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাজমুল হুদা, উৎপাদন ম্যানেজার হারুন অর রশিদ, সিনিয়র উৎপাদন কর্মকর্তা আজাহার ইমাম সোহেল ও সহকারী উৎপাদন কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম। রূপগঞ্জ থানার ওসি ইসমাইল হোসেন জানান, আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ তৎপর রয়েছে। এরই মধ্যে নাজমুল হুদাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয় নাজমুল হুদাকে। শুনানি শেষে তার ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত বলেও জানান ওসি।