ছয় বছরের আক্ষেপ ঘোচালো পাকিস্তান

 

মাথাভাঙ্গা মনিটর: ইয়াসির শাহের দুর্দান্ত ঘূর্ণি বলের কল্যাণে ৭৫ রানের জয় নিয়ে ৬ বছরের আক্ষেপ ঘোচালো পাকিস্তান। ৬ বছর আগে ৪ দিনেই ইনিংস ব্যবধানে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে লর্ডস টেস্ট শেষ করেছিল পাকিস্তান। এ ম্যাচেই ফিক্সিঙের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলো আমির। এ সব কলঙ্ক মুছে এবার নতুন পাকিস্তানের দেখা পেলো ইংল্যান্ড। ম্যাচের আগেই বলা হয়েছিলো, সমালোচনা ও স্লেজিংয়ের মুখে পড়তে যাচ্ছেন আমির। সেই সাথে অতীতের স্মৃতি নিয়ে ভালো খেলা খুব সহজ ছিলো না পাকিস্তানের এ পেসারের। কিন্তু সব কিছুর জবাব দিয়ে দিলেন তিনি পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় সূচক বলটি করে। তার করা দ্রুতগতির ফুল লেংথ বল ইংল্যান্ডের শেষ ব্যাটসম্যানকে বোল্ড আউট করলে ধারাভাষ্যকার ডেভিড লয়েড বলেন, লর্ডসে আমিরের দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন!

পাকিস্তানের জয়ের মূল নায়ক অবশ্য আরেকজন। এশিয়ার বাইরে নিজের প্রথম টেস্ট ১০ উইকেট নিয়ে জয়টা নিজের করে নিলেন ইয়াসির শাহ। ইংল্যান্ডের মাটিতে এটি পাকিস্তানের দশম টেস্ট জয় যার চারটিই লর্ডসে। এখানে সবশেষ জয় ছিলো তাদের ১৯৯৬ সালে। গত রোববার সকালে পাকিস্তানের শেষ ২ উইকেট মাত্র ১ রানেই তুলে নিয়েছিলো ইংল্যান্ড। ২৮৩ রানের লক্ষ্যটা ছিলো তবু কঠিন। লর্ডসে এর চেয়ে বড় রান তাড়া করে জয় আছে ইতিহাসে একটিই। ইংল্যান্ড ধাক্কাও খায় শুরুতেই। দুর্দান্ত এক প্রথম স্পেলে ইংলিশ ব্যাটিংয়ের মাথা ভেঙে দেন রাহাত আলী। বাঁহাতি পেসার ফেরান ইংল্যান্ডের প্রথম তিন ব্যাটসম্যান কুক, হেলস ও রুটকে।

তৃতীয় উইকেটে খানিকটা প্রতিরোধ গড়েন জেমস ভিন্স ও গ্যারি ব্যালান্স। ভিন্সকে ফিরিয়ে ৪২ রানের জুটি ভাঙেন ওয়াহাব রিয়াজ। এরপরই ইয়াসির দেখাতে শুরু করেন তার জাদু। অফ স্টাম্পের অনেক বাইরে ফুট মার্কে পিচ করে বিশাল টার্ন করে বাঁহাতি ব্যালান্সের পায়ের পেছন দিয়ে বল আঘাত করে লেগ স্টাম্পে। পরের ওভারে ফেরান মইন আলীকে। ইংল্যান্ড তখন ৬ উইকেটে ১৩৯। ষষ্ঠ উইকেটে দারুণ প্রতিরোধ গড়ে পাকিস্তানের কাজ কঠিন করে তুলেছিলেন জনি বেয়ারস্টো ও ক্রিস ওকস। এখানেও ত্রাতা সেই ইয়াসির। বেয়ারস্টোকে বোল্ড করে ভাঙেন ৫৬ রানের সপ্তম উইকেট জুটি। এরপর আর জিততে সময় নেয়নি পাকিস্তান। থিতু হওয়া ওকসকেও ফেরান ইয়াসির। আক্রমণে ফিরে আমির নেন দুটি উইকেট। উল্লাসে মাতে পাকিস্তান। আমিরের পাশপাশি দল হিসেবে পাকিস্তানের উদযাপনটাও ছিলো দেখার মতো। তাৎক্ষণিক বাধনহারা উচ্ছ্বাস তো ছিলোই। ড্রেসিং রুমে ফেরার পথে আর্মির মতো লাইন করে দাঁড়িয়ে গেলেন সবাই। স্কোয়াড কমান্ডার ইউনুস খান। ইউনুসের নেতৃত্বে সবাই একসাথে দিলেন ‘পুশ-আপ!’

সিরিজের আগে অ্যাবোটাবাদে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নিবিড় ক্যাম্প করেছিলো পাকিস্তান দল। পুরস্কার বিতরণীতে অধিনায়ক মিসবাহ জানালেন, সেনাদের সম্মান জানাতেই অমন উদযাপন। হতাশ ইংল্যান্ড অধিনায়ক অ্যালেস্টার কুক সান্ত্বনা দিলেন ক্রিস ওকসকে। ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়েছেন ওকস, দু ইনিংসেই ব্যাট হাতে খেলেছেন কার্যকরী ইনিংস। সেটিও ছিলো না যথেষ্ট। প্রথম ইনিংসের পাকিস্তানের ৬৭ রানের লিডই শেষ পর্যন্ত গড়ে দিলো ব্যবধান। ৪ ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয়টি শুরু আগামী শুক্রবার, ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে।