চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে বাউল আখড়ায় হামলা জামায়াত সমর্থক গ্রেফতার

জীবননগর ব্যুরো: চুয়াডাঙ্গায় বাউল আখড়ায় হামলা চালিয়ে তিন বাউলকে কুপিয়ে জখম করার ঘটনায় জামাত আলী (৪২) নামে সন্দেহভাজন একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাকে গতকাল সোমবার জীবননগর আমলি আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক ওই ব্যক্তিকে গত রোববার দিবাগত রাতে জীবননগর উপজেলার সেনেরহুদা গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। জামাত আলী তাদের দলের সমর্থক বলে জানিয়েছেন জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির রুহুল আমিন। এদিকে হামলার সময় থেকে নিখোঁজ বাউল নুরু বক্স শাহের (৫০) দুই দিনেও কোনো খোঁজ মেলেনি। জেলা বাউল কল্যাণ সংস্থার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ নয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল গতকাল সোমবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।  গত শনিবার রাত ১২টার দিকে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার উথলী ইউনিয়নের একতারপুর গ্রামের ওই বাউল আখড়ায় হামলা চালিয়ে দুই নারীসহ তিন বাউলকে কুপিয়ে জখম করেছে দুর্বৃত্তরা। হামলার পর থেকে নুরু বক্স শাহ (৫০) নামের এক বাউলকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আহত বাউলেরা হলেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার শোরুদা গ্রামের বাউল আবদুর রহিম শাহ (৬৫) ও তার স্ত্রী বুলু বেগম (৫৫) এবং ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের ফজলুর রহমানের স্ত্রী বাউল রুশিয়া খাতুন (৪৫)। তাদের ওপর হামলার পর রাতেই জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

হামলার পর থেকে আখড়ায় সাধারণ বাউল-সাধু-ফকিরসহ তরিকাপন্থীদের অবস্থান ও গানবাজনা বন্ধ রয়েছে। দুর্বৃত্তের হামলায় তছনছ হয়ে পড়া আখড়াবাড়িটি মেরামত করা হয়নি। হামলায় আহত বাউলদের মধ্যে রুশিয়া বেগম ঢাকার ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালে এবং বুলু বেগম কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আবদুর রহিম শাহ প্রাথমিক চিকিৎসার পর গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছেন।

রুশিয়ার বোন সুফিয়া বেগম জানান, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার বোনের দাঁতসহ মুখে বড় ধরনের ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। আজ দ্বিতীয় দফায় ঢাকার ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালে তার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। বুলু বেগম মোবাইলে জানান, তার ডান হাত ও ডান পা ভেঙে গেছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তার শরীরেও অস্ত্রোপচার করা হবে।  সোমবার দুপুরে সরেজমিনে জেলা বাউল কল্যাণ সংস্থার প্রতিনিধিদলের সাথে দেখা হয়। সংস্থার সভাপতি মহিউদ্দিন শাহ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বাউল-সাধুরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। তারা কাউকে কোনো ক্ষতি না করলেও একটি মহল কারণ ছাড়াই শনিবার রাতে একতারপুর আখড়াবাড়িতে হামলা চালিয়েছে। ঘটনার দুই দিন পরও বাউল নুরু বক্স শাহের কোনো সন্ধান মেলেনি।

আমরা নিখোঁজ নুরু বক্স শাহের সন্ধানসহ হামলাকারীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’ মহিউদ্দিন শাহ জানান, আজ মঙ্গলবার জেলা কমিটির সভা থেকে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। আখড়াবাড়ির তত্ত্বাবধায়ক একতারপুরের মুকুল শাহ ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘হামলার পর অনেকেই বলাবলি করছেন, আমরা নাকি বাউল তরিকার নয়। আখড়াবাড়িতে নাকি অসামাজিক কাজ হয়।’ তিনি দাবি করেন, এই সবই অপপ্রচার, এক যুগ ধরে তিনি বাউল তরিকাপন্থী। তার গুরু চুয়াডাঙ্গার মুনতাজ শাহ। মুকুলের বাবা শহিদুল হক শাহ সাত বছর আগে তরিকায় যোগ দিয়েছেন। শহিদুল হক শাহের ব্যক্তিগত ১২ কাঠা জমির ওপর ওই আখড়াবাড়ি অবস্থিত। তার বাবার গুরু উথলীর আতিয়ার শাহ। জীবননগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাজ্জাদুর রহমান বলেন, আখড়াবাড়িতে হামলার ঘটনায় একতারপুর গ্রামের শহিদুল হক শাহ বাদী হয়ে রোববার রাতে জীবননগর থানায় অজ্ঞাতপরিচয় দুর্বৃত্তের নামে মামলা করেন। আখড়াবাড়িতে অনধিকার প্রবেশ, ভাঙচুর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলাটি করা হয়। উপপরিদর্শক (এসআই) আকরাম হোসেন মামলাটি তদন্ত করছেন।
মামলার সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আকরাম হোসেনের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও কেউ ধরেননি।